বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌযান) চড়ে ভ্রমণ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সময় গত রোববার (৮ জুন) সাইফুজ্জামান ও তাঁর বন্ধু আবদুল্লাহ হিল রাকিব মারা যান। রাকিব ছিলেন তৈরি পোশাকশিল্পের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। ক্যানুতে থাকা তাঁর ছেলে মাহির দাইয়ান সাঁতরে তীরে ওঠায় প্রাণে বেঁচে যান।

সাইফুজ্জামানের আকস্মিক এই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিমানের অন্যান্য পাইলট ও তাঁর বন্ধুমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক ও স্মৃতিচারণা করেন। তাঁর বন্ধুরা জানান, ক্যাপ্টেন মো.

সাইফুজ্জামানের বড় মেয়ে কানাডার টরন্টোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ছোট মেয়ে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। ৭ জুন বোয়িং ৭৮৭-৯০০ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি নিয়ে টরন্টোর পিয়ারসন বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। ওই ফ্লাইটে ছোট মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন বড় মেয়ের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটাতে। ১০ জুনের নির্ধারিত ফ্লাইটটি তাঁরই উড়িয়ে ঢাকায় ফেরার কথা ছিল! কিন্তু রোববার বিকেলে অন্টারিওর লিনজি শহরের লেকে ভ্রমণ করতে গিয়ে তিনি প্রাণ হারান।

সাইফুজ্জামানের বন্ধু ও স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, রোববার দুপুরে সাইফুজ্জামান, রাকিব ও তাঁর ছেলে মাহির একটি ক্যানুতে চড়ে হ্রদে নামেন। ক্যানুটি যখন স্টারজিয়ন হ্রদের বুকে এগিয়ে চলছিল, তখন তীরে দাঁড়িয়ে থাকা সাইফুজ্জামানের স্ত্রী ও ছোট মেয়ে মুঠোফোনে ভিডিও করছিলেন। হঠাৎ করে ক্যানু উল্টে যায়। পরে মাহির সাঁতরে পাড়ে উঠে আসেন, কিন্তু সাইফুজ্জামান ও রাকিব আর ফিরে আসেননি। পরে উদ্ধারকারীরা তাঁদের দুজনকেই উদ্ধার করেন, ততক্ষণে তাঁরা আর জীবিত ছিলেন না। নৌকায় থাকা তিনজনের কারও শরীরে লাইফ-জ্যাকেট ছিল না বলে কানাডা পুলিশ জানিয়েছে।

নৌকা দুর্ঘটনার আগে স্টারজিয়ন লেকের তীরে বিমানের পাইলট সাইফজ টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র বন ধ প ইলট

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নেতা সাইফুলের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু

খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলামকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

মঙ্গলবার অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছেন দুদকের এ কর্মকর্তা। এর আগে গত ৯ এপ্রিল সাইফুলের সম্পদ অনুসন্ধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে জেলার প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। জেলা আইনজীবী সমিতির মৃত সদস্যদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে।

সাইফুল একাধিকবার খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ বিভিন্ন ‘লাভজনক’ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠনের অর্থ দিয়ে ব্যক্তিগত প্রচার, লিফট কেনাসহ টাকা ব্যক্তিগত তহবিলে স্থানান্তর করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। আইনজীবী সমিতির উন্নয়নকাজেও মোটা অঙ্কের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

দুদক থেকে জানা গেছে, সাইফুলের মালিকানাধীন আমিন-সামিন শিপিং লাইনস, আমিন-সামিন কনস্ট্রাকশন, আমিন-সামিন ট্রেডিং, এসএ বিল্ডার্স, নয়ন এন্টারপ্রাইজ, ইয়াহিয়া কনস্ট্রাকশন, ইউনিক আইস অ্যান্ড ফুডস এবং মুনমুন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে আটটি কোম্পানি পাওয়া গেছে। এর বাইরে আর কোনো কোম্পানি আছে কিনা জানতে যৌথ মূলধন কোম্পানি পরিদপ্তরের নিবন্ধককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া খুলনা সিটি করপোরেশনে সাইফুলের নামে অন্য কোনো ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে কিনা– তা জানতে চেয়েছে দুদক। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম বলেন, সাইফুল নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব থাকাকালে আয়-ব্যয়ের হিসাব, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি থাকা অবস্থায় বিভিন্ন খাতের আয়-ব্যয়ের রেকর্ড চাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কল্যাণ তহবিল, ভবন নির্মাণ ও বই কেনা বাবদ প্রাপ্ত টাকার ব্যয় বিবরণী, বিল-ভাউচার চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের কাছে। 

দুদকের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আপাতত সাইফুলের নামে পাঁচটি নৌযানের (কার্গো) তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর নামে আর কোনো কার্গো বা ছোট জাহাজ রয়েছে কিনা– জানতে নৌপরিবহন অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁর নামে দেশের কোথায় কোথায় জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে এবং ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে, সে তথ্যেরও অনুসন্ধান চলছে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ