টানা ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন মির্জাগঞ্জ, ভ্যাপসা গরমে নির্ঘুম রাত কাটালেন বাসিন্দারা
Published: 11th, June 2025 GMT
ভ্যাপসা গরমে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে টানা প্রায় সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা। আগাম সতর্কবার্তা ছাড়াই টানা বিদ্যুৎ–বিভ্রাটে ভোগান্তিতে পড়েন উপজেলার লক্ষাধিক বাসিন্দা।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন উপজেলার বাসিন্দারা। প্রথমে স্বাভাবিক লোডশেডিং মনে করা হলে সারা রাত তাঁদের অপেক্ষার শেষ হয়নি। রাত পেরিয়ে আজ বুধবার সকাল ছয়টার দিকে বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা সচল হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মির্জাগঞ্জ উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অভিযোগকেন্দ্রের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণ জানতে পারেননি সাধারণ গ্রাহকেরা। অনেকের ফোনও রিসিভ করা হয়নি। এতে তাঁদের মধ্যে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তবে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাতীয় গ্রিডে সমস্যার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক উমর ফারুক বলেন, টানা সাত থেকে আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় কয়েকজন রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে চলে গিয়েছিল। বিদ্যুতের অভাবে শ্বাসকষ্টের অনেক রোগীকে নেবুলাইজড করা যায়নি, ফলে তাঁদের অসহনীয় কষ্ট পোহাতে হয়েছে। এ ছাড়া কেবিনের রোগীরাও নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।
সুবিদখালী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার সিকদার বলেন, এমনিতেই গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছিল। এ সময় সারা রাত বিদ্যুৎবিহীন রাত কাটানো আরও কষ্টের। অনেকেই বাধ্য হয়ে সড়ক, খোলা মাঠ কিংবা বাড়ির ছাদে রাত কাটিয়েছেন।
মির্জাগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব–জোনাল (সাব–স্টেশন) কার্যালয়ের এজিএম (সহকারী জেনারেল ম্যানেজার) পলক সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে বরগুনা গ্রিডে সমস্যা হয়। মির্জাগঞ্জ থেকে পাশের বেতাগীতে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিতে গিয়ে আমাদের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সারা রাত চেষ্টার পর আজ সকালে এটি স্বাভাবিক হয়েছে।’ গ্রাহকদের মুঠোফোন রিসিভ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, এ সময়ে সবার ফোন রিসিভ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘গত রাতে গ্রিডে সমস্যা থাকায় মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন ছিল। বিকল্প উপায়ে চেষ্টা করেও রাতে বিদ্যুৎ–সংযোগ স্বাভাবিক করা যায়নি। এ জন্য আমরা দুঃখিত।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে