পুরোনো পাড়ার চেনা প্রতিবেশী, চাচাতো-মামাতো ভাইবোনদের খুনসুটি, মফস্সল মফস্সল গন্ধ, সন্ধ্যায় হারিয়ে যাওয়া ট্রেনের সঙ্গে জীবনের বাঁকবদল—সব মিলিয়ে ‘উৎসব’ যেন ফেলে আসা সময়ের গল্প। একটা ভুল, আক্ষেপ আর প্রায়শ্চিত্তের জার্নি। এই যাত্রায় অতীতে মন ফিরে যেতে বাধ্য, কয়েক জায়গায় হয়তো নিজের ভুলটাই ভেসে উঠবে চোখের সামনে। এই যাত্রায় কিছু মন কেমন আছে, তবে সবকিছু ছাপিয়ে বেশি আছে আনন্দ। এই সময়ে দাঁড়িয়ে সিনেমাটি যেন নির্মাতার ফোনকল, ‘হ্যালো, নাইনটিজ।’
একনজরেসিনেমা: ‘উৎসব’
ধরন: ফ্যামিলি ড্রামা
মূল গল্প: চার্লস ডিকেন্সের ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’
কাহিনি: তানিম নূর, আয়মান আসিব স্বাধীন, সুস্ময় সরকার ও সামিউল ভূঁইয়া
চিত্রনাট্য ও সংলাপ: আয়মান আসিব স্বাধীন ও সামিউল ভূঁইয়া
পরিচালনা: তানিম নূর
অভিনয়: তারিক আনাম খান, জাহিদ হাসান, আফসানা মিমি, জয়া আহসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সৌম্য জ্যোতি, সাদিয়া আয়মান
দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট
তানিম নূর অনেকের কাছেই থ্রিলার নির্মাতা। ‘মানি হানি’, ‘কন্ট্রাক্ট আর ‘কাইজার’ যিনি বানিয়েছেন, তাঁকে এ তকমা দিলে দোষ দেওয়া যায় না। তবে ২০১১ সালে ‘ফিরে এসো বেহুলা’র মতো ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে চমকে দেন তিনি। ১৪ বছর পর খাঁটি দেশি পারিবারিক গল্প নিয়ে নির্মিত উৎসব তাই নির্মাতার জন্য বড় পর্দায় রাজকীয় প্রত্যাবর্তন।
চার্লস ডিকেন্সের ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘উৎসব’। গল্পটাকে লন্ডন থেকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিয়ে এসেছেন নির্মাতা। শান্তি নীড়ে গল্প শুরু হয় চাঁদরাতের আয়োজন দিয়ে। আর চাঁদরাত মানেই মোবারকের (তারিক আনাম খান) গান। তবে এবার সব ঠিকঠাকমতো হলো না, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’ শেষ করার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন মোবারক। দৃশ্যপটে হাজির হলেন জাহাঙ্গীর (জাহিদ হাসান)। জাহাঙ্গীর লোক খারাপ নন, তবে বড্ড বেশি কিপটে। উৎসব কমিউনিটি সেন্টার চালান, কর্মীদের ঠিকঠাক বোনাস আর ছুটি দিতেও তাঁর কৃপণতা। এলাকায় বাচ্চাদের ব্যান্ডের ‘চিৎকার’ তাঁর সহ্য হয় না, সোজা পুলিশে ফোন করেন।
‘উৎসব’ সিনেমার অভিনয়শিল্পীরা। ছবি: চরকির সৌজন্যে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে ‘তাণ্ডব’ প্রদর্শনীতে স্থানীয় 'আলেম সমাজের’ বাধা
দেশে ঈদের মত বড় দুই উৎসবে মানুষের বিনোদনের অনত্যতম অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখা। বিগত কয়েক বছর ধরে ঈদে সিনেমা দেখার বিষয়টি যেনো আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গেল স্ক্রিনে উপচে পড়ছে দর্শক। তবে দেশের সব জেলায় হল না থাকায় বিকল্প পদ্ধতিতে সিনেমা প্রদর্শনীতে এগিয়ে আসেন অনেক উদ্যোক্তা।
স্থানীয় অডিটোরিয়াম ভাড়া করে তারা উৎসবে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো নির্ধারিত ফি নিয়ে তা প্রদর্শনা করান। এই প্রক্রিয়াতে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আউলিয়াবাদ অডিটোরিয়ামে 'তাণ্ডব' সিনেমা প্রদর্শনীর আয়োজক জাজ মাল্টিমিডিয়ার হেড অব মার্কেটিং কামরুজ্জামান সাইফুল। কিন্তু স্থানীয় 'আলেম সমাজে'র আপত্তির মুখে তা বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে সেখানে সিনেমা প্রদর্শনীর এক মাসের অনুমতি থাকলেও আয়োজকরা বৃহস্পতিবারের মধ্যেই শো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কামরুজ্জামান সাইফুল জানান, সব জায়গা থেকে সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি নেয়া ছিল। সার্টিফিকেশন বোর্ডের ইউিনভার্সেল রেটেড সার্টিফিকেট সবই ছিল। তাও সিনেমা প্রদর্শনীতে বাধা।
আমি হাত জোড় করে মাফ চেয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়ের আর্জি জানালাম। আলেম সমাজ অনড়। আমাকে কালই চলে যেতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি না চলে যাবো ততক্ষণ পর্যন্ত তারা গোনাহগার হতে থাকবে, এলাকায় গজব পড়তে থাকবে। এতবড় পাপের বোঝা নিয়ে তারা হাসরের ময়দানে দাঁড়াতে পারবেনা।
গতকাল কামরুজ্জামান সাইফুল টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় এবং পাঁচ দিনের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে ঈদের দিন থেকে এক মাসের জন্য সিনেমাটি প্রদর্শনের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। বাধার কারণে আজকের মধ্যেই প্রদর্শনী গুটিয়ে নিতে হচ্ছে। ঈদের আগের দিন থেকেই স্থানীয় মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে মাইকে 'তাণ্ডব' প্রদর্শনী বন্ধ করতে বলা হয় এবং পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এরপর একটি মিছিলও বের করা হয়, যা স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হলে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। ঈদের দিন দর্শক না আসায় মাত্র ২০-২৫ জন দর্শক নিয়েই সন্ধ্যার শো চালু রাখেন তিনি।
সাইফুল বলেন, 'পরদিন সিনেমা হল বন্ধে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করা হয়। ঈদের আগেই থানায় পুলিশি সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছিলাম। তবে থানা থেকে কোনো ধরনের সহায়তা করা হয়নি। ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইল ডিএসবি এবং এসপি অফিসে যোগাযোগ করেও সাহায্য না পেয়ে ব্যর্থ হতে হয়। শত বাধা সত্ত্বেও একক ইচ্ছেতে ঈদের পরের দিন অডিটোরিয়াম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিই। সেদিন মিছিল না হলেও তাদের সমাবেশ ঘটে।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় (ইউনিয়ন শাখা) ইমাম পরিষদের সহ-সভাপতি মাদ্রাসা শিক্ষক হযরত আলী গণমাধ্যমকে বলেন, 'এলাকায় বেশ কয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অশ্লীলতা ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কায় আলেম সমাজসহ স্থানীয়রা এই সিনেমা প্রদর্শনের বিপক্ষে।'
তিনি বলেন, 'আয়োজক যিনি তিনি আমাদের কাছে এসেছিলেন, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিনেমা চালানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা তো তাকে এটা চালাতে বলতে পারি না।'
এদিকে আলেম সমাজের বাধা প্রধানের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি সামনে আসার পরই সোস্যাল মাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন সিনেমাপ্রেমীরা। তবে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ দেখা যায়নি কোথাও।
এ ঘটনায় কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম ঈদের ছুটিতে আছেন জানিয়ে বলেন, 'দেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ নয়। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সুরাহা করা হবে।'