কর্মজীবী নারীর স্বীকৃতি চান তথ্য আপারা
Published: 13th, June 2025 GMT
দুই দাবিতে আন্দোলনরত তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা বলেছেন, আওয়ামী দোসর নয়, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবী নারীর স্বীকৃতি চাই। গত সাত বছর নিজেদের মেধা, যোগ্যতা ও শ্রমের মাধ্যমে দেশের জন্য কাজ করেছি। কোনো দলের পক্ষে কাজ করিনি। তাই আমাদের বাদ দেওয়া চলবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ১৭তম দিনে নাগরিক সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা। এতে নারী অধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সমাবেশের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেওয়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত তথ্য আপা প্রকল্পে (দ্বিতীয় পর্যায়ের) কর্মরতদের সমগ্রেডে পদসৃজন করে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর এবং কেটে নেওয়া বেতন-ভাতা অবিলম্বে পরিশোধের দাবিতে ২৮ মে থেকে আন্দোলন করছেন তারা। ঈদুল আজহার দিনেও তারা সেখানে ছিলেন।
গতকাল গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মার্জিয়া প্রভা ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সুস্মিতা রায় সুপ্তির যৌথ সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ডা.
সমাবেশের শুরুতে সংগীতা সরকার বলেন, এতদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিলেও সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। চার দিন না খেয়ে ছিলাম। বিভিন্ন সময়ে হামলার শিকার হয়েছি। অন্তঃসত্ত্বাদেরও রেহাই দেয়নি। ১ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি রেখে কোনো কথা না বলেই আমাদের বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তিন ধাপে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ পেয়েছি। সরকারি চাকরির বয়স অতিক্রম হয়ে যেতে পারে। রাজস্বভুক্তর কথা বলে বেতন কাটা হয়েছে। বিভিন্ন ভাতা কাটা হয়েছে। প্রত্যেক অর্থবছরে তিন মাসের যাতায়াত ভাতা ও সন্তানদের শিক্ষা ভাতা কাটা হয়েছে। এগুলো কোথায় যায়– তার কোনো হিসাব নেই। আমাদের ‘আওয়ামী দোসর’ ট্যাগ দেওয়া অন্যায়। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবী নারীর স্বীকৃতি চাই।
বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা তথ্য কর্মচারী শান্তা ইসলাম। তিনি বলেন, আর কত দিন রাস্তায় বসে থাকতে হবে! যাদের নির্দেশনায় কাজ করেছি, তারা একবারও আমাদের দেখতে আসেননি। আমাদের সম্মান কেড়ে নেওয়ার কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেবো না। আমরা রাষ্ট্রের কর্মী হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই।
তথ্য আপা প্রকল্পের কর্মীরা বলেন, আমরা রাষ্ট্রের সব নিয়ম মেনে একাডেমিক যোগ্যতার মাধ্যমে এ প্রকল্পে নিয়োগ পেয়েছি। তখন বলা হয়েছিল, আমাদের নিয়ে রাষ্ট্র যে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সে আশায় এত বছর ধৈর্য নিয়ে কাজ করে আসছি। আমাদের বাদ দেওয়া যাবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
সমাপনী বক্তব্যে সীমা দত্ত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর জুলাইয়ের আন্দোলনকারীদের ঢাকায় এনে সম্মান দেওয়া হলেও এই নারীদের সাইবার বুলিং করা হচ্ছে। তারা আসলে দোসর কিনা তা প্রমাণ করতে হবে, যা আওয়ামী লীগের আমলেও এভাবে ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। এর পরিণাম ভালো হবে না। ৩০ জুনের আগেই তাদের ডেকে আলোচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
৪৯২টি উপজেলায় তথ্যকেন্দ্রে একজন করে তথ্যসেবা কর্মকর্তা (দশম গ্রেড), দু’জন তথ্যসেবা সহকারী (১৬তম গ্রেড) ও একজন করে অফিস সহায়ক (২০তম গ্রেড) মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৯৬৮ জন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন। তৃণমূল নারীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, আইন, জেন্ডার, ব্যবসা, পরিবার পরিকল্পনা এবং সাইবার সিকিউরিটি– এই আট বিষয়ে জরুরি তথ্য সরবরাহ ও সহায়তা দিয়ে আসছেন তথ্য আপা প্রকল্পের দেড় হাজার কর্মী। আন্দোলনকারীরা জানান, তাদের চাকরি স্থায়ী করার কথা বলে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে প্রতি মাসে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪০০ ও সহকারীদের বেতন থেকে ১ হাজার ৩৯০ টাকা কেটে নেয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তারা সেগুলো ফেরত চান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র গণসম ব শ প রকল প র কর মকর ত র কর ম ক জ কর আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইরানের
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার জবাব শেষ হয়নি বরং ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও ইরানের হামলা ‘চলবে’।
নাম প্রকাশ করেননি এমন একজন কর্মকর্তার বরাতে ফার্স এ তথ্য দিয়েছে। ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের বরাতে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ইরান ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।
তেহরানে শুক্রবার পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার জবাবে রাতে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ নামের এ অভিযানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
অন্যদিকে ইসরায়েলের ইংরেজি পত্রিকা দ্য জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জন আহত হয়েছেন। তেল আবিব ও জেরুসালেমে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এছাড়া ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের সমুদ্র উপকূলবর্তী সমতল এলাকায় অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মাঝে একজন ছিলেন ৬০ বছর বয়সী একজন নারী, যাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে, তখন তার শরীরে কোনও প্রাণচিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়া ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষকেও উদ্ধার করা হয়, পরে যাকে মৃত ঘোষণা করা হয়, জানিয়েছে এমডিএ।
ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ কথা জানিয়েছে।
এক্সে দেওয়া পোস্টে তারা লিখেছে, ‘ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার বিষয়টি শনাক্ত হওয়ার পর-ই বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।’ সেখানে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামলার উৎস শনাক্ত করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী উৎসকে লক্ষ্য করে প্রতিরোধমূলক অভিযানে নামছে। তবে, ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তথা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘শতভাগ দুর্ভেদ্য না’ উল্লেখ করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, তারা যেন সমস্ত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলে।
এর আগে ইরানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার ভোরে বিভিন্ন অঞ্চলে একাধারে চালানো হামলায় দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্তত পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ও রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি।
জবাবে অন্তত ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। শুক্রবার রাতে চালানো ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩’ নামের ওই অভিযানে ইসরায়েলের তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরপর দুই দফায় ইসরায়েলে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এ সময় সাইরেন বেজে ওঠে এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।
এর আগে ইসরায়েলে দফায় দফায় হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রাজনীতিক আলি শামখানি। অন্তত ২০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে চালানো ইরানের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হামলায় প্রাণ গেছে ছয় পরমাণু বিজ্ঞানীরও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা। ভোর থেকে দিনভর দফায় দফায় এ হামলা হয়।
বেসরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৩২০ জন। এটাকে ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে বর্ণনা করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। জাতিসংঘকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, নিরাপত্তা কাউন্সিলের উচিত বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসা।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে গতকাল শুক্রবার রাতেও ইরানে হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।