বড় গরুতে লোকসানে খামারি খরচও ওঠেনি অনেকের
Published: 13th, June 2025 GMT
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার খামারি ফিরোজ আলী। কোরবানি ঈদের জন্য এবার ১৩টি গরু ও তিনটি ষাঁড় মোটাতাজা করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় তিন বছর ধরে সন্তানের মতো লালনপালন করেন। সাদা ও কালো রঙের প্রায় ২২ মণ ওজনের ষাঁড়টি দাম হাঁকিয়েছিলেন সাড়ে ৮ লাখ টাকা। আশা করেছিলেন, এ দামেই বিক্রি করতে পারবেন।
সে আশা পূরণ হয়নি খামারি ফিরোজের। জেলার বড় ঢেলাপীর হাটে দু’দিন তুললে ৫ লাখ টাকার ওপর কেউ দাম বলেননি। কোরবানির আগের দিন শহরের এক ব্যবসায়ী সাড়ে ৫ লাখ টাকায় ষাঁড়টি কিনে নেন। ফিরোজ আলী বলেন, ষাঁড়টির পেছনে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। শুধু খাবারের হিসাব করলে তিন বছরে দাম হয় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এবার হাটে বড় পশু কেনার লোক ছিল না। তাই লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
ফিরোজের মতো কোরবানি ঈদ সামনে রেখে লাভের আশায় বড় পশু লালনপালন করে নীলফামারীতে স্বপ্ন পূরণ হয়নি অনেক খামারির। ন্যায্য দাম দূরের কথা, লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে চেয়েও অনেকে ক্রেতা পাননি। অনেকের খরচও ওঠেনি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খামারিদের তালিকা করে সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, কোরবানি উপলক্ষে জেলায় ৩৪ হাজার ৩৮৩ জন খামারি ও কৃষক ২ লাখ ৮৯ হাজার ১৫৭টি পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। স্থানীয়ভাবে চাহিদা ছিল দেড় লাখ। পশু জবাই হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৫৯টি। প্রাণিসম্পদ বিভাগ আশা করেছিল, জেলার ৮০ থেকে ৯০ হাজার পশু দেশের বড় হাটগুলোয় বিক্রি হবে। সে লক্ষ্যও পূরণ হয়নি।
ডিমলা খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের মজিদা বেগম দুটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সোয়া ১ লাখ টাকা দিয়ে দুটি আড়িয়া গরু কিনেছিলেন। তাঁর আশা ছিল, গরুগুলো বিক্রি করে লাভের টাকায় ঘরের টিনের চালা সংস্কার করবেন। যে লাভ হয়েছে, তাতে গরুর কেনা টাকা ও খরচ সমানে সমান। এ টাকা এনজিওর ঋণ পরিশোধে শেষ হয়ে যাবে বলে জানান মজিদা বেগম।
কয়েকজন ব্যবসায়ী, খামারি ও ইজারাদার জানিয়েছেন, ঢেলাপীর ও কালীবাড়ি পশুর হাটে বড় গরুর ক্রেতা আসেন ঢাকা, গাজীপুর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে। পদ্মা সেতু হওয়ায় এলাকায় পশুর হাটে বাইরের পাইকারদের আনাগোনা তেমন ছিল না। তাই বড় ও বেশি দামের গরু বিক্রি হয়নি। ফলে খামারিরা বিপদে পড়েছেন।
পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের গরু কম খরচে ঢাকায় ঢুকেছে বলে জানান ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, এ কারণে ঢাকাসহ বাইরের পাইকার ও ক্রেতা নীলফামারীতে আসেননি। ফলে লোকসানে পড়েছেন খামারি।
জেলার সবচেয়ে বড় ঢেলাপীর হাটের ইজারাদার মোতালেব হোসেন হক। তাঁর ভাষ্য, এবার গতবারের তুলনায় অর্ধেকের চেয়ে কম পশু বিক্রি হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই এবার কোরবানি দেননি। গত বছর যারা একাই কোরবানি দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এবার ভাগে দিয়েছেন। এসব কারণে পশু কম বিক্রি হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার পশু বিক্রি কম হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল হক বলেন, উদ্বৃত্ত পশু জেলার বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। আশানুরূপ যায়নি। জেলায় বড় গরু কেনার ক্রেতা কম। যারা বড় গরু পুষেছেন, তাদের এবার লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা এলে তাদের দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করল পাকিস্তান-সৌদি আরব
পাকিস্তানের ওপর কেউ হামলা চালালে সৌদি আরব তাদেরকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। আবার সৌদি আরবের ওপর কেউ আগ্রাসন চালালে পাকিস্তানও সৌদি আরবকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। ঠিক এমনই একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সৌদি আরব ও পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান।
জিও নিউজের খবর অনুসারে, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সৌদি আরব সফরের সময় এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে শাহবাজের বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এ চুক্তির কথা জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
এক সপ্তাহে সৌদি আরবে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
২০ বছর কোমায় থাকার পর মারা গেলেন সৌদির ‘ঘুমন্ত যুবরাজ’
চুক্তি স্বাক্ষরের পর উভয় দেশ একটি যৌথ বিবৃতিতে জানায় যে, ভ্রাতৃত্ব, ইসলামিক সংহতি ও অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থের ভিত্তিতে এবং প্রায় আট দশকের দীর্ঘ অংশীদারত্বের ওপর দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
ক্রাউন প্রিন্সের আমন্ত্রণেই শরিফ সৌদি আরব সফরে গেছেন বলেও তাদের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সৌদি আরবের সঙ্গে হওয়া এই প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে এখন ‘এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন’ বিবেচনা করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তিকে 'ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন অগ্রগতি' বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, এটি পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিতে উন্নীত করেছে। তারা বলছেন যে, এই পদক্ষেপ কেবল পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্ককে দৃঢ় করছে না, বরং দক্ষিণ এশিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের জন্যও এর গুরুত্ব রয়েছে। এটি পাকিস্তানকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার সবচেয়ে সক্ষম মুসলিম শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন যে, সাম্প্রতিক আঞ্চলিক অস্থিরতা, ইসরায়েলের হামলা, দোহা সম্মেলন এবং আরব বিশ্বে সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই চুক্তির তাৎপর্য অনেক বেশি। এটি প্রমাণ করে যে, বর্ধিত হুমকির সময়ে সৌদি আরব পাকিস্তানকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বিশ্বাস করছে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়, চুক্তি স্বাক্ষরের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে আলিঙ্গন করতে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, যাকে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়।
ঢাকা/ফিরোজ