নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার খামারি ফিরোজ আলী। কোরবানি ঈদের জন্য এবার ১৩টি গরু ও তিনটি ষাঁড় মোটাতাজা করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় তিন বছর ধরে সন্তানের মতো লালনপালন করেন। সাদা ও কালো রঙের প্রায় ২২ মণ ওজনের ষাঁড়টি দাম হাঁকিয়েছিলেন সাড়ে ৮ লাখ টাকা। আশা করেছিলেন, এ দামেই বিক্রি করতে পারবেন।
সে আশা পূরণ হয়নি খামারি ফিরোজের। জেলার বড় ঢেলাপীর হাটে দু’দিন তুললে ৫ লাখ টাকার ওপর কেউ দাম বলেননি। কোরবানির আগের দিন শহরের এক ব্যবসায়ী সাড়ে ৫ লাখ টাকায় ষাঁড়টি কিনে নেন। ফিরোজ আলী বলেন, ষাঁড়টির পেছনে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। শুধু খাবারের হিসাব করলে তিন বছরে দাম হয় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এবার হাটে বড় পশু কেনার লোক ছিল না। তাই লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
ফিরোজের মতো কোরবানি ঈদ সামনে রেখে লাভের আশায় বড় পশু লালনপালন করে নীলফামারীতে স্বপ্ন পূরণ হয়নি অনেক খামারির। ন্যায্য দাম দূরের কথা, লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে চেয়েও অনেকে ক্রেতা পাননি। অনেকের খরচও ওঠেনি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খামারিদের তালিকা করে সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, কোরবানি উপলক্ষে জেলায় ৩৪ হাজার ৩৮৩ জন খামারি ও কৃষক ২ লাখ ৮৯ হাজার ১৫৭টি পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। স্থানীয়ভাবে চাহিদা ছিল দেড় লাখ। পশু জবাই হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৫৯টি। প্রাণিসম্পদ বিভাগ আশা করেছিল, জেলার ৮০ থেকে ৯০ হাজার পশু দেশের বড় হাটগুলোয় বিক্রি হবে। সে লক্ষ্যও পূরণ হয়নি। 
ডিমলা খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের মজিদা বেগম দুটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সোয়া ১ লাখ টাকা দিয়ে দুটি আড়িয়া গরু কিনেছিলেন। তাঁর আশা ছিল, গরুগুলো বিক্রি করে লাভের টাকায় ঘরের টিনের চালা সংস্কার করবেন।  যে লাভ হয়েছে, তাতে গরুর কেনা টাকা ও খরচ সমানে সমান। এ টাকা এনজিওর ঋণ পরিশোধে শেষ হয়ে যাবে বলে জানান মজিদা বেগম। 
কয়েকজন ব্যবসায়ী, খামারি ও ইজারাদার জানিয়েছেন, ঢেলাপীর ও কালীবাড়ি পশুর হাটে বড় গরুর ক্রেতা আসেন ঢাকা, গাজীপুর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে। পদ্মা সেতু হওয়ায় এলাকায় পশুর হাটে বাইরের পাইকারদের আনাগোনা তেমন ছিল না। তাই বড় ও বেশি দামের গরু বিক্রি হয়নি। ফলে খামারিরা বিপদে পড়েছেন।
পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের গরু কম খরচে ঢাকায় ঢুকেছে বলে জানান ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, এ কারণে ঢাকাসহ বাইরের পাইকার ও ক্রেতা নীলফামারীতে আসেননি। ফলে লোকসানে পড়েছেন খামারি।

জেলার সবচেয়ে বড় ঢেলাপীর হাটের ইজারাদার মোতালেব হোসেন হক। তাঁর ভাষ্য, এবার গতবারের তুলনায় অর্ধেকের চেয়ে কম পশু বিক্রি হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই এবার কোরবানি দেননি। গত বছর যারা একাই কোরবানি দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এবার ভাগে দিয়েছেন। এসব কারণে পশু কম বিক্রি হয়েছে। 
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার পশু বিক্রি কম হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল হক বলেন, উদ্বৃত্ত পশু জেলার বাইরে যাওয়ার কথা ছিল।  আশানুরূপ যায়নি। জেলায় বড় গরু কেনার ক্রেতা কম। যারা বড় গরু পুষেছেন, তাদের এবার লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। সরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা এলে তাদের দেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর ক রব ন

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ