ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮
Published: 21st, June 2025 GMT
ময়মনসিংহের ফুলপুরে বাস ও মাহিন্দ্রা অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট সড়কের ফুলপুর পৌরসভার কাজিয়াকান্দা ইন্দিরাপাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনাস্থলে পাঁচজন, ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান। এই আটজনের মধ্যে একজন নারী ও বাকিরা পুরুষ।
আরও পড়ুনময়মনসিংহে দুই স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১০১৩ ঘণ্টা আগেময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শফিক উদ্দিন জানান, ফুলপুরে ওই সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বশেষ রাত সাড়ে ১১টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়।
নিহত ব্যক্তিদের সবার পরিচয় শনাক্ত করেছে ফুলপুর থানার পুলিশ। তাঁরা হলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানার নিজগুড্ডিমারী গ্রামের কাজিম উদ্দিন (২৮), হালুয়াঘাট উপজেলার জয়রামকুড়া গ্রামের রুবেল (৩০), ফুলপুরের কাজিয়াকান্দা গ্রামের ফরিদ মিয়া (৩৮), নিগুয়াকান্দা গ্রামের জাহের আলী (৭০), বালিজুড়ি গ্রামের হাছিনা খাতুন (৫০), কয়ারহাটি গ্রামের শামসুদ্দিন (৬৫), কালিয়ানিকান্দি গ্রামের নয়ন মিয়া (৪০) এবং পূর্বধলা উপজেলার ইসবপুর গ্রামের লাল মিয়া (৩৬)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ সকালে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর হাদি বলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো তিনজন চিকিৎসাধীন। পরিবারগুলোর কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার বরাতে জানা যায়, বিকল হয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরিকে ওভারটেক করতে গিয়ে মাহিন্দ্রা ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। পরে পাশের বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা লেগে মাহিন্দ্রাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হন। বাসটি হালুয়াঘাট থেকে রাজধানী ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর মাহিন্দ্রাটি ছিল ফুলপুর থেকে হালুয়াঘাটগামী। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাসটির চালক ও তাঁর সহকারী পলাতক আছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
নভেম্বরে বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির
বাড়ির সামনে ১৫ শতক জমিতে সবজি আবাদ করেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের কৃষক শাম্মত আলী (৬০)। পালংশাক, মুলা, ডাঁটা ও মরিচের বীজ বুনেছেন তিনি। মরিচের বীজ বোনার দুই দিন পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে বীজ পচে গেছে। নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকেরা। এ ছাড়া শীত মৌসুমকে সামনে রেখে কৃষকেরা সবজি চাষ শুরু করেছেন। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলগুলোতে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়। তবে নভেম্বরের শুরুতে টানা বৃষ্টি এসব ফসলের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাব বাজারেও পড়তে পারে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ১৩টি উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে শর্ষে আবাদ করা যাচ্ছে না। ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধাকপি, ফুলকপি, করলা, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।
নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের জন্য কতটা ক্ষতির জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. পারভেজ আনোয়ার বলেন, নিম্নচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। নভেম্বরে এমন বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত। ইতিমধ্যে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকেরা ধান শুকাতে সমস্যায় পড়বেন। যাঁরা কাটতে পারেননি, তাঁদের জমিতে পানি ওঠায় ধানের অপচয় বেশি হবে। রবি ফসলের ক্ষেত্রে ভুট্টা, ডাল-জাতীয় শস্য ও শর্ষে লাগানো দেরি হয়ে যাবে। ফসল লাগাতে দেরি হলে পরে বোরো ফসল লাগাতেও দেরি হয়ে যাবে।
অধ্যাপক পারভেজ আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, শীতকালীন সবজি যাঁরা দেরিতে লাগাচ্ছেন, তাঁদের চারা নষ্ট হয়ে যাবে। আগাম যাঁরা আবাদ করেছেন, অতিবৃষ্টির কারণে পচে যাবে এবং রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও বাড়বে। সব মিলিয়ে ধান, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজি—সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অসময়ের বৃষ্টির কারণে।
কৃষক শাম্মত আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মরিচ বুনছিলাম। বৃষ্টিতে সব পইচ্চা গেছে। আমার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সব গাইব হয়ে গেছে। আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এমন বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছিন না। এমন সময়ে ছিডাছাডা বৃষ্টি হইলেও এমন বৃষ্টি আর কখনো হয় নাই।’
গতকাল শনিবার রাত আড়াইটা থেকে রোববার সকাল ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহ আবহাওয়া কার্যালয়ের উচ্চ পর্যবেক্ষক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৪টা ২৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ময়মনসিংহ শহরের দীঘারকান্দা এলাকার লাল মিয়া বলেন, ‘২ কাডা জমিতে শাকসবজি করছিলাম। বৃষ্টিতে সব ক্ষতি হইয়া গেছে। এমন টাইমে তো বৃষ্টি হয় না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর মাসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজি লাগানো কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে। শর্ষে আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে লাগাতে দেরি হলে অর্জন কিছুটা কম হবে। এখন শর্ষে আবাদের ভালো সময়। এ সময় শর্ষের বীজ বুনতে না পারলে আবাদ কমে যাবে। বৃষ্টি কয়েক দিনের মধ্যে থেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না।