হৃদরোগে আক্রান্ত সংকটাপন্ন বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন গোলাম রাব্বানী। জরুরি বিভাগের সামনে এসে তাড়াহুড়া করে ভর্তির টিকিট কাটলেন। কাছেই দাঁড়িয়ে অন্তত পাঁচ যুবক। প্রত্যেকের হাতে স্ট্রেচার ট্রলি। কিন্তু কেউ রোগীকে তুলছেন না। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে প্রত্যেকে দাবি করেন ৫০০ টাকা। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থেকে আসা গোলাম রাব্বানী শেষ পর্যন্ত ৩০০ টাকা দিতে রাজি হয়ে বাবাকে ওয়ার্ডে নিয়ে যান। 
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন ঘটনা নতুন নয়। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে মৃত্যুর পর লাশ বের করা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। বছরের পর বছর এভাবে সিন্ডিটেকের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা স্বজন। হাসপাতালের কাউন্টারে নাম ও রোগ লেখানোর পর্ব শেষ করে ভর্তি ফি ২৫ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। বাড়তি টাকা দিতে না চাইলে রোগীকে ফেলে রাখা হয় বাইরে। মিটমাট হলেই কেবল ট্রলিতে তোলা হয়। রংপুর বিভাগের ২ কোটি মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এই হাসপাতালের এমন লাগামছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের।

অভিযোগ রয়েছে, এতদিন হাসপাতালটি ছিল শুধু চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সিন্ডিকেটের দখলে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তাদের সঙ্গে বাইরের কিছু মানুষ যোগ দিয়েছে। যুবদলের কয়েক নেতার প্রশ্রয়ে সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সে মায়ের লাশ নিয়ে উঠেছেন পীরগাছা উপজেলার আজিজার রহমান। পাশে পড়ে ছিল ওয়ার্ড থেকে লাশ বহন করে আনা স্ট্রেচার। এটি বহন করে আনা আয়া টাকা ছাড়া নড়বেন না। এদিকে ভাড়ার চেয়ে বেশি দাবি করে বসেন অ্যাম্বুলেন্স চালক। এত বাধা পেরিয়ে কী করে মায়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন– এ নিয়ে ভাবছিলেন শোকে স্তব্ধ আজিজার। পরে আয়াকে ২০০ টাকা দেন, আর অ্যাম্বুলেন্স চালককে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় রাজি করিয়ে মুক্তি পান। স্ট্রেচার নিয়ে ফেরার সময় প্রশ্ন করলে রাশেদা বেগম নামের ওই আয়া বলেন, ‘খুশি হয়ে ২০০ টাকা দিল লাশের লোক।’ 
আজিজার রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে আসার পর থেকে পদে পদে খরচ করেছি। ঠিকমতো চিকিৎসা না পেয়ে মা মারা গেলেন। শেষে লাশ নিয়েও শুরু হলো ব্যবসা। বেড থেকে স্ট্রেচারে তুলতে ২ হাজার টাকা নেন হাসপাতালের লোক।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারী সিন্ডিকেটের হোতা ছিলেন হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান নয়ন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দালালচক্রের অর্ধশতাধিক সদস্য কাজ করেন। নানা অপকর্মের কারণে সাময়িক বরখাস্ত খুনের মামলার আসামি নয়ন এখন আত্মগোপনে। বর্তমানে সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়েছেন হাসপাতালের ভেতর ও বাইরের অনেকেই। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক সাধারণ কর্মচারী জানান, আত্মগোপনে থাকলেও নয়ন সিন্ডিকেটের নেপথ্যে রয়েছেন। আউটসোর্সিংয়ে কাজ করে সিন্ডিকেটে রয়েছেন তাঁর ভগ্নিপতি রতন ও ফুফাতো ভাই মুকুল। আরও রয়েছেন ওয়ার্ড মাস্টার হাসান ও মানিক। আছেন কর্মচারী ইউনিয়নের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আব্রাহাম লিংকনের বড় ভাই নগরীর ধাপ এলাকার রায়হান এবং রাহাত। বর্তমানে এই সিন্ডিকেটের পাশে যুবদলের কয়েক নেতা। 
এ বিষয়ে রংপুর মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক নুরুন্নবী চৌধুরী মিলন বলেন, ‘আমার জানামতে, মেডিকেলের সিন্ডিকেটে যুবদলের কেউ নেই। তবে দলের কেউ ওই সব সিন্ডিকেটে যুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শাহিন এ কাজে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। ওয়ার্ড মাস্টার মানিক সিন্ডিকেটে যুক্ত নন দাবি করে বলেন, ‘সিন্ডিকেট আছে, তবে আগের তুলনায় তাদের দৌরাত্ম্য কমেছে।’

সিন্ডিকেটের হয়রানি থেকে বাদ যায়নি চিকিৎসক পরিবারও। রংপুর মেডিকেল কলেজের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট এ বি এম রাশেদুল আমীর জানান, চিকিৎসার জন্য তাঁর মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। রোগী ভর্তি ফি ২৫ টাকার জায়গায় দাবি করা হয় ৫০ টাকা। আইসিইউতে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে জোর করে ২০০ টাকা নেন কর্মরত দুই ব্যক্তি। ‘চিকিৎসকের মা’ পরিচয় দিলেও তারা ছাড় দেননি। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ডা.

রাশেদুল।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, হাসপাতালটির চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, ওষুধ, খাদ্য ও নির্মাণকাজের ঠিকাদারিসহ নানা বিষয়ে অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে এলেও প্রতিকার মিলছে না। 
জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘সমস্যা অনেক। দীর্ঘদিনের ধরে চলে আসা সব সমস্যার সমাধান তো চাইলেই সম্ভব নয়। সিন্ডিকেট নেই বলব না, তবে তাদের দৌরাত্ম্য আগের চেয়ে অনেক কমানো গেছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য বদল র র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

কাজে ফিরছেন পপি, খুঁজছেন ভালো গল্প ও চরিত্র

দীর্ঘ বিরতির পর রূপালী পর্দায় ফিরতে যাচ্ছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। সন্তান ও সংসার সামলে এখন আবারও অভিনয়ে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পপি বলেন, ‘‘চলচ্চিত্র থেকে সাময়িক বিরতিতে ছিলাম। এখন আবার কাজের কথা ভাবছি। সন্তান জন্মের পর একটু মুটিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু এখন অনেকটা ঠিক আছি। যেহেতু দীর্ঘ একটা গ্যাপ হয়েছে, তাই যে কোনো কাজ দিয়ে ফিরতে চাই না। ভালো কিছু দিয়েই ফিরতে চাই।”

গত কয়েক বছর ধরেই পপি নিজেকে মিডিয়ার আলোচনার বাইরে রেখেছেন। এই সময় তিনি কাটিয়েছেন পুরোপুরি ব্যক্তিজীবনে মনোযোগ দিয়ে। পরিবার গড়ে তুলেছেন, মা হয়েছেন। এখন তার একমাত্র সন্তান আয়াত ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।

বর্তমানে পপি স্বামী ও সন্তান নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। কিছুদিন আগে সেখানে অবকাশ যাপনের কথা নিজেই জানান।

এদিকে পপির অনুপস্থিতির কারণে আটকে আছে একাধিক সিনেমা। এর মধ্যে রয়েছে ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ (পরিচালক: রাজু আলীম), ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ (পরিচালক: আরিফুর জামান আরিফ)।

তবে পপি অভিনীত ‘ডাইরেক্ট অ্যাটাক’ (পরিচালক: সাদেক সিদ্দিকী) সিনেমাটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বেশ কয়েকবার মুক্তির তারিখ ঘিরে গুঞ্জন উঠলেও এখনো সিনেমাটি আলোর মুখ দেখেনি।

দর্শকের ভালোবাসা পাওয়া এই অভিনেত্রীর প্রত্যাশা যতটা ধামাকা দিয়ে তিনি হারিয়েছিলেন, ততটাই শক্ত কাজ দিয়ে তিনি ফিরবেন। তাই কাজ বাছাইয়ে সময় নিচ্ছেন।

ঢাকা/রাহাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ