পুরান ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)  হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। 

শনিবার (১২ জুলাই) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা জানান।

আইন উপদেষ্টা লেখেন, “মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২ এর ধারা ১০ এর অধীনে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।”

গত ১৬ জুলাই ঢাকার মিটফোর্ডে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগতে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। 

হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। তার শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ। হত্যাকণ্ডের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা দেখে শিওরে ওঠে অনেকে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও দেশের নানা স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্র-জনতা। 

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

দৌলতপুরে ১০ মাসে ১০ খুন

কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুর অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। গত ১০ মাসে ১০ হত্যাকান্ডসহ একের পর এক ঘটছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনা। আধিপত্য বিস্তারসহ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ প্রশাসনের কাছে গিয়েও প্রতিকার তারা পাচ্ছেন না। তারা প্রশাসনের নিস্ক্রীয়তাকে এ জন্য দায়ী করছেন। তবে দায় নিতে নারাজ পুলিশ প্রশাসন। তারা বলছেন সব স্বাভাবিক রয়েছে। 

এলাকার ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, প্রকাশ্যে ছিনতাই, অস্ত্রের মহড়া ও হামলার ঘটনা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। নীরব চাঁদাবাজি তো রয়েছেই। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও মাদক ব্যবসাসহ নানা কারণে ঘটছে হামলা-মামলা এবং হত্যাকান্ডের ঘটনা। প্রকাশ্য দিবালোকে ইউপি চেয়ারম্যান খুনসহ গত ১০ মাসে অন্তত ১০টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। 

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্যে নিজ কার্যালয়ে ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে গুলি করে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা। ছাতারপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আপন দুই ভাইকে। এ ঘটনায় আহত হন কয়েকজন। মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম প্রামানিকের ছেলে রাজুকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পদ্মার চরে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকান্ডের জের ধরে পরদিন সকালে একই এলাকার সাঈদ মন্ডলের চরের বাথান থেকে অন্তত ৪৬টি মহিষ লুট করে সন্ত্রাসীরা। এমন অপরাধ কর্মকান্ডে উদ্বিগ্ন জনপ্রতিনিধিরাও।

দৌলতখালী দাড়পাড়া গ্রামে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় জাহানারা খাতুনকে। তিনি প্রতিবন্ধী ছিলেন। গোবরগাড়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিবাদে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মাহাফুজা খাতুনকে। দৌলতপুর সীমান্তে ঠোটারপাড়ায় মাদক চোরাচালান সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ মাদক চোরাকারবারীর হামলায় নিহত হন মোহন। এ ঘটনায় হৃদয় নামে এক মাদক চোরাকারবারী আহত হন। 

মরিচা ইউনিয়নের ভুরকাপাড়ায় শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২৯ জুন শেরপুর সেনপাড়া গ্রামের শিলা খাতুন নামে এক গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলে পরিবারের দাবি। সর্বশেষ গত ২ জুলাই রাতে মথুরাপুর স্কুল বাজারে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আব্দুল আজিজ (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। 

উল্লেখিত হত্যাকান্ডে জড়িত অনেক ঘটনার প্রধান আসামিসহ অন্যান্য আসামি ধরাও পড়লেও তারা জামিনে বের হয়ে পুনরায়  অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।  এছাড়াও ৭ ফেব্রুয়ারি একটি শিশু চুরির ঘটনায় দৌলতপুরে  নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। 

শুধু হত্যাকান্ড নয়, ছিনতাইও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত বছর ২ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে ফিড ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামকে অস্ত্রের মুখে মারপিট করে ৫ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় চল্লিশ বাহিনীর প্রধান রাখি ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনার কয়েকদিন আগে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন শিতলাইপাড়া এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী স্ত্রী। ১৪ জানুয়ারি বিকেলে হরিণগাছী এলাকায় নগদের মার্কেটিং অফিসারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারী চক্র। গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে দৌলতখালী গ্রামে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কৃষক দম্পতিকে বেঁধে রেখে গরু ও ছাগল লুট করা হয়। ১ মার্চ ভোরে ৪ জন গরু ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের  ৭ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আরিফ বাহিনী এ ছিনতাই ঘটনার সাথে জড়িত বলে সেসময় স্থানীয় সূত্র জানিয়েছিল। 

২ এপ্রিল সীমান্তের চরপাড়া এলাকায় ৭টি গরু লুট ও ছিনতাই হয়। একইদিন রাতে খলিসাকুন্ডি গ্রামে বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে ডাকাত দল। ১৪ এপ্রিল সোনাইকুন্ডি গ্রামে অস্ত্রের মুখে ব্যবসায়ীর আড়াই লাক্ষ টাকা ছিনতাই করে নেয় সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা। সিরাজনগর বেলতলীপাড়া গ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী হায়দার আলীর বাড়িতে সশস্ত্র ডাকাত দল বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৪ লাখ টাকাসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।

দৌলতপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন দৌলতপুরের সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। তিনি আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘‘পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্য রয়েছে। যার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।’’

তবে এসব ঘটনার দায় নিতে নারাজ দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাজমূল হুদা। তার দাবি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।

ঢাকা/কাঞ্চন//

সম্পর্কিত নিবন্ধ