পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ২৮৪টি মহিষের মালিক আসলে কে
Published: 30th, July 2025 GMT
ভোরের আলো ফুটতেই দেখা যায় মাঠজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ২৮৪টি মহিষ। কালো দেহ আর শিং তুলে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাণীগুলো দেখে অবাক হন স্থানীয় লোকজন। চারপাশে গুঞ্জন—কে আনল এত মহিষ? কোথা থেকে এল? উদ্দেশ্যই বা কী?
৪ জুলাই চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের কালীরচরে ঘটে এ ঘটনা। ওই দিন বেলা গড়াতেই মহিষের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কারা এসব মহিষের মালিক—এ নিয়ে কৌতূহল দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত মহিষের মালিক কে, তা নির্ধারণ করতে তিন সদস্যের কমিটি করতে হয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মহিষগুলো রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহিষগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
সন্দ্বীপে মহিষ আনার খবর শুনে নোয়াখালী, হাতিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলা ও সন্দ্বীপের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে লোকজন আসতে থাকেন। তাঁদের অনেকেরই মহিষ হারিয়েছে অথবা চুরি হয়েছে। এ নিয়েই মূলত বিপত্তি তৈরি হয়। তবে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ দাবি করেন, এসব মহিষ পলাতক কোনো আওয়ামী লীগ নেতার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব মহিষ এসেছে সন্দ্বীপের দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচর থেকে। মহিষগুলোর মালিকানা দাবি করেছেন উড়িরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়নের বিএনপি সভাপতি আবদুর রহিম ও তাঁর বোনের পরিবার। তবে তাঁদের এই দাবির পরেও বিতর্ক থামেনি। মহিষগুলো বর্তমানে রাখা হয়েছে সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তাছলিমা বেগমের জিম্মায়।
মহিষ নিয়ে বিএনপির মধ্যে কোন্দল
মহিষের মালিকানা দাবি করা আবদুর রহিম চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেনের অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। মহিষগুলো সন্দ্বীপে আনার কাজে সহায়তা করেন আজিজ নামের এক যুবদল নেতা। তিনিও বেলায়েত হোসেনের অনুসারী বলে এলাকায় পরিচিত। এ অবস্থায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ থেকেই একটি পক্ষ মহিষের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুরো বিষয়টিকে জটিল করেছে বলে দাবি আবদুর রহিমের ছেলে মো.
মহিষের মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পেছনে বিএনপির একটি পক্ষ আছে বলেও দাবি মো. আজিমের। তিনি বলেন, ‘দলীয় কোন্দলের কারণে আমাদের হেনস্তা ও বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে একটি পক্ষ।’ তবে সেই পক্ষটি কারা, তা তিনি স্পষ্ট করে বলেননি।
বিএনপির সন্দ্বীপ উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব আলমগীর হোসাইন ঠাকুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘উড়িরচরে চারণভূমির সংকটের কারণেই আবদুর রহিম মহিষগুলো সন্দ্বীপে এনেছেন। তবে দলের ভেতরে কোন্দল থাকায় বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।’
সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু তাহের বলেন, ‘দলীয় পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু প্রশাসন যেন যথাযথভাবে মালিকানা যাচাই করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে—আমরা সেটাই চাই।’
যেভাবে এসেছে মহিষ
মহিষগুলো কবে, কীভাবে, কোথা থেকে আনা হয়েছে, তা নিয়ে স্থানীয় অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা জানান, ৩ জুলাই বিকেল পাঁচটার দিকে উড়িরচরের পূর্ব উপকূলের একটি খাল থেকে তিনটি বাল্কহেডে (নৌযান) মহিষ তোলা হয়েছিল। রহিম চেয়ারম্যানের ছেলে আজিম নিজে উপস্থিত থেকে মহিষগুলো তুলেছেন। স্থানীয় বাথানেরাও (মহিষের খামারের মালিক) বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন। বাল্কহেডগুলোর একটির চালক মো. উসমান। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে উড়িরচর থেকে গবাদিপশু ও অন্যান্য মালামাল পরিবহন করছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহিষগুলো স্থানীয় চেয়ারম্যান আবদুর রহিমের। ওই দিন রাতে সাগরে ভাটা থাকায় ভাসানচরের কাছে আমরা নোঙর করেছিলাম। পরে ভোরে জোয়ার এলে সন্দ্বীপের দক্ষিণাংশের কালীরচরে মহিষগুলো নামিয়ে দিই।’
উসমানের দেওয়া তথ্যমতে, মহিষ সন্দ্বীপে নামানোর সময় মো. রিয়াদ ও মো. হেলাল নামের দুজন সঙ্গে ছিলেন। এ দুজন সম্পর্কে আবদুর রহিমের ভাগনে। তাঁরাই মহিষের দেখাশোনার কাজ করেন। জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘চাষের মৌসুম শুরু হওয়ায় উড়িরচরে মহিষ চরানোর জায়গা কমে গেছে। তাই সন্দ্বীপে চারণভূমি ব্যবহার করছি। আশ্বিন মাসে আবার মহিষগুলো উড়িরচরে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’
মালিকানার কাগজ তলব
এদিকে মহিষের মালিক কে, এটি নির্ধারণ করতে চলতি মাসের ৯ জুলাই তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলী আজমকে। ১২ জুলাইয়ের মধ্যে মালিকানা নির্ধারণ করতে কমিটিকে বলা হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে পারেনি। এ কমিটির কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কমিটি গঠনের পরেই সদস্যরা মহিষের মালিকের কাছে প্রমাণপত্র চেয়েছিলেন। তবে মহিষের মালিকানা প্রমাণ কীভাবে হবে, মহিষের দলিল কোথায় মিলবে, এ নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন অনেকেই। কারণ, মহিষ চেনা হয় কাটা দাগ বা শিংয়ের নির্দিষ্ট গঠন দিয়ে। এ ছাড়া মহিষের দাবিদার উড়িরচরের বিএনপি নেতা আবদুর রহিম টিকা কার্ডও জমা দিয়েছেন। এরপরও মালিকানা নির্ধারণ করতে পারেনি কমিটি।
গতকাল তদন্ত কমিটি মহিষের মালিকদের ডেকে পাঠায়। তবে কমিটি কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে জানা গেছে। মহিষের দাবিদার আবদুর রহিম কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘কমিটির সদস্যরা আমাদের কাছে কেবল মহিষের গায়ের দাগ (শনাক্তকরণ চিহ্ন) নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। এরপর কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে আমাদের বিদায় করেছেন।’
মহিষের মালিক কে, এটি নির্ধারণ করতে চলতি মাসের ৯ জুলাই তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলী আজমকে। ১২ জুলাইয়ের মধ্যে মালিকানা নির্ধারণ করতে কমিটিকে বলা হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে পারেনি।জানতে চাইলে কমিটির প্রধান আলী আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাধিক পক্ষ মালিকানা দাবি করায় কমিটি সিদ্ধান্ত নিতে আরও এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। একজন দাবিদারের কাছ থেকে টিকা কার্ডও পেয়েছি। এসব যাচাই করা হচ্ছে।’
সন্দ্বীপ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা বলেন, ‘মহিষের মালিকানা নির্ধারণে তদন্ত চলছে। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে আবদুর রহিমের ছেলে মো. আজিম প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালী থেকে যেসব পক্ষ মালিকানা দাবি করেছিল, তারা সন্দ্বীপে এসে মহিষগুলো পরীক্ষা করে জানিয়েছে, এগুলো তাদের নয়। তবু অহেতুক গড়িমসি করে তদন্ত ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে, এ কারণে মহিষগুলো খাদ্যসংকটে পড়েছে। প্রশাসনের হেফাজতে থাকার কারণে স্বাভাবিক চারণভূমি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মহিষের চর পরিবর্তনের ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবছরই মহিষের মালিকেরা এক চর থেকে অন্য চরে মহিষ নিয়ে থাকেন। জানতে চাইলে সন্দ্বীপের চৌকাতলীর সত্তরোর্ধ্ব মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, মহিষ চরাতে বিভিন্ন জায়গায় নেওয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখন যে অবস্থা, তাতে আর কেউ অন্য চরে মহিষ আনা-নেওয়ার সাহস করবেন না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক কর মকর ত কম ট র স ব এনপ র কর ছ ল চর থ ক কর ছ ন ব র পর উপজ ল র একট সদস য ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ২৮৪টি মহিষের মালিক আসলে কে
ভোরের আলো ফুটতেই দেখা যায় মাঠজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ২৮৪টি মহিষ। কালো দেহ আর শিং তুলে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাণীগুলো দেখে অবাক হন স্থানীয় লোকজন। চারপাশে গুঞ্জন—কে আনল এত মহিষ? কোথা থেকে এল? উদ্দেশ্যই বা কী?
৪ জুলাই চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের কালীরচরে ঘটে এ ঘটনা। ওই দিন বেলা গড়াতেই মহিষের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কারা এসব মহিষের মালিক—এ নিয়ে কৌতূহল দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত মহিষের মালিক কে, তা নির্ধারণ করতে তিন সদস্যের কমিটি করতে হয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মহিষগুলো রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহিষগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
সন্দ্বীপে মহিষ আনার খবর শুনে নোয়াখালী, হাতিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলা ও সন্দ্বীপের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে লোকজন আসতে থাকেন। তাঁদের অনেকেরই মহিষ হারিয়েছে অথবা চুরি হয়েছে। এ নিয়েই মূলত বিপত্তি তৈরি হয়। তবে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ দাবি করেন, এসব মহিষ পলাতক কোনো আওয়ামী লীগ নেতার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব মহিষ এসেছে সন্দ্বীপের দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচর থেকে। মহিষগুলোর মালিকানা দাবি করেছেন উড়িরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়নের বিএনপি সভাপতি আবদুর রহিম ও তাঁর বোনের পরিবার। তবে তাঁদের এই দাবির পরেও বিতর্ক থামেনি। মহিষগুলো বর্তমানে রাখা হয়েছে সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তাছলিমা বেগমের জিম্মায়।
মহিষ নিয়ে বিএনপির মধ্যে কোন্দল
মহিষের মালিকানা দাবি করা আবদুর রহিম চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেনের অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। মহিষগুলো সন্দ্বীপে আনার কাজে সহায়তা করেন আজিজ নামের এক যুবদল নেতা। তিনিও বেলায়েত হোসেনের অনুসারী বলে এলাকায় পরিচিত। এ অবস্থায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ থেকেই একটি পক্ষ মহিষের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুরো বিষয়টিকে জটিল করেছে বলে দাবি আবদুর রহিমের ছেলে মো. আজিমের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২৮৪টি মহিষের টিকা দেওয়ার কার্ড তাঁরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলী আজমকে দিয়েছেন। এরপরও বিষয়টি অহেতুক জটিল করা হচ্ছে বলে মো. আজিম দাবি করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব মহিষ এসেছে সন্দ্বীপের দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচর থেকে। মহিষগুলোর মালিকানা দাবি করেছেন উড়িরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি আবদুর রহিম ও তাঁর বোনের পরিবার। তবে তাঁদের এই দাবির পরেও বিতর্ক থামেনি। মহিষগুলো বর্তমানে রাখা হয়েছে সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান তাছলিমা বেগমের জিম্মায়।মহিষের মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পেছনে বিএনপির একটি পক্ষ আছে বলেও দাবি মো. আজিমের। তিনি বলেন, ‘দলীয় কোন্দলের কারণে আমাদের হেনস্তা ও বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে একটি পক্ষ।’ তবে সেই পক্ষটি কারা, তা তিনি স্পষ্ট করে বলেননি।
বিএনপির সন্দ্বীপ উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব আলমগীর হোসাইন ঠাকুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘উড়িরচরে চারণভূমির সংকটের কারণেই আবদুর রহিম মহিষগুলো সন্দ্বীপে এনেছেন। তবে দলের ভেতরে কোন্দল থাকায় বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।’
সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু তাহের বলেন, ‘দলীয় পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু প্রশাসন যেন যথাযথভাবে মালিকানা যাচাই করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে—আমরা সেটাই চাই।’
যেভাবে এসেছে মহিষ
মহিষগুলো কবে, কীভাবে, কোথা থেকে আনা হয়েছে, তা নিয়ে স্থানীয় অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা জানান, ৩ জুলাই বিকেল পাঁচটার দিকে উড়িরচরের পূর্ব উপকূলের একটি খাল থেকে তিনটি বাল্কহেডে (নৌযান) মহিষ তোলা হয়েছিল। রহিম চেয়ারম্যানের ছেলে আজিম নিজে উপস্থিত থেকে মহিষগুলো তুলেছেন। স্থানীয় বাথানেরাও (মহিষের খামারের মালিক) বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন। বাল্কহেডগুলোর একটির চালক মো. উসমান। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে উড়িরচর থেকে গবাদিপশু ও অন্যান্য মালামাল পরিবহন করছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহিষগুলো স্থানীয় চেয়ারম্যান আবদুর রহিমের। ওই দিন রাতে সাগরে ভাটা থাকায় ভাসানচরের কাছে আমরা নোঙর করেছিলাম। পরে ভোরে জোয়ার এলে সন্দ্বীপের দক্ষিণাংশের কালীরচরে মহিষগুলো নামিয়ে দিই।’
উসমানের দেওয়া তথ্যমতে, মহিষ সন্দ্বীপে নামানোর সময় মো. রিয়াদ ও মো. হেলাল নামের দুজন সঙ্গে ছিলেন। এ দুজন সম্পর্কে আবদুর রহিমের ভাগনে। তাঁরাই মহিষের দেখাশোনার কাজ করেন। জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘চাষের মৌসুম শুরু হওয়ায় উড়িরচরে মহিষ চরানোর জায়গা কমে গেছে। তাই সন্দ্বীপে চারণভূমি ব্যবহার করছি। আশ্বিন মাসে আবার মহিষগুলো উড়িরচরে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।’
মালিকানার কাগজ তলব
এদিকে মহিষের মালিক কে, এটি নির্ধারণ করতে চলতি মাসের ৯ জুলাই তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলী আজমকে। ১২ জুলাইয়ের মধ্যে মালিকানা নির্ধারণ করতে কমিটিকে বলা হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে পারেনি। এ কমিটির কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কমিটি গঠনের পরেই সদস্যরা মহিষের মালিকের কাছে প্রমাণপত্র চেয়েছিলেন। তবে মহিষের মালিকানা প্রমাণ কীভাবে হবে, মহিষের দলিল কোথায় মিলবে, এ নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন অনেকেই। কারণ, মহিষ চেনা হয় কাটা দাগ বা শিংয়ের নির্দিষ্ট গঠন দিয়ে। এ ছাড়া মহিষের দাবিদার উড়িরচরের বিএনপি নেতা আবদুর রহিম টিকা কার্ডও জমা দিয়েছেন। এরপরও মালিকানা নির্ধারণ করতে পারেনি কমিটি।
গতকাল তদন্ত কমিটি মহিষের মালিকদের ডেকে পাঠায়। তবে কমিটি কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে জানা গেছে। মহিষের দাবিদার আবদুর রহিম কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘কমিটির সদস্যরা আমাদের কাছে কেবল মহিষের গায়ের দাগ (শনাক্তকরণ চিহ্ন) নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। এরপর কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে আমাদের বিদায় করেছেন।’
মহিষের মালিক কে, এটি নির্ধারণ করতে চলতি মাসের ৯ জুলাই তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলী আজমকে। ১২ জুলাইয়ের মধ্যে মালিকানা নির্ধারণ করতে কমিটিকে বলা হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে পারেনি।জানতে চাইলে কমিটির প্রধান আলী আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাধিক পক্ষ মালিকানা দাবি করায় কমিটি সিদ্ধান্ত নিতে আরও এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। একজন দাবিদারের কাছ থেকে টিকা কার্ডও পেয়েছি। এসব যাচাই করা হচ্ছে।’
সন্দ্বীপ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা বলেন, ‘মহিষের মালিকানা নির্ধারণে তদন্ত চলছে। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে আবদুর রহিমের ছেলে মো. আজিম প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালী থেকে যেসব পক্ষ মালিকানা দাবি করেছিল, তারা সন্দ্বীপে এসে মহিষগুলো পরীক্ষা করে জানিয়েছে, এগুলো তাদের নয়। তবু অহেতুক গড়িমসি করে তদন্ত ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে, এ কারণে মহিষগুলো খাদ্যসংকটে পড়েছে। প্রশাসনের হেফাজতে থাকার কারণে স্বাভাবিক চারণভূমি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মহিষের চর পরিবর্তনের ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবছরই মহিষের মালিকেরা এক চর থেকে অন্য চরে মহিষ নিয়ে থাকেন। জানতে চাইলে সন্দ্বীপের চৌকাতলীর সত্তরোর্ধ্ব মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, মহিষ চরাতে বিভিন্ন জায়গায় নেওয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখন যে অবস্থা, তাতে আর কেউ অন্য চরে মহিষ আনা-নেওয়ার সাহস করবেন না।