কংগ্রেসের অনুরোধেও ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে কথা বলবেন না শশী থারুর
Published: 30th, July 2025 GMT
ভারতের লোকসভায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনায় ‘মৌন’ থাকছেন শশী থারুর। কংগ্রেস তাঁকে বক্তা হিসেবে চাইলেও তিনি রাজি হননি। কেন, কী কারণে তা নিয়ে কোনো উত্তর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। শশীর সোজাসাপটা জবাব, ‘মৌনব্রত’।
অপারেশন সিঁদুরের সিদ্ধান্ত ও লক্ষ্য বিদেশিদের কাছে ব্যাখ্যা করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংসদ সদস্য ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সাতটি দল বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছিলেন। একটি দলের নেতা করেছিলেন শশী থারুরকে। দলের সঙ্গে আলোচনা না করে, অনুমতি না নিয়ে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন কেরালার তিরুবনন্তপুরমের এই কংগ্রেস–দলীয় সংসদ সদস্য। এর আগে থেকেই তাঁর দেশ ও মোদিপ্রেম দেখে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের ভ্রু কুঁচকেছিল।
শশী থারুর নানাভাবে সেই বিতর্ক উসকেও দিয়েছেন। দেশকে গুরুত্ব ও দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে নানা মন্তব্যও করেন। সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখেছেন। মোদির পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করেছেন। ক্রমেই তাতে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বৃদ্ধি করেছে।
জল্পনা উঠেছে, শশী থারুর নিজে দল ছাড়বেন নাকি দল তাঁকে তাড়াবে। দলের কোনো কাজের দায়িত্বও ইদানীং তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি, সম্প্রতি কেরালায় এক উপনির্বাচনেও তাঁকে প্রচারে ডাকা হয়নি।
তবুও ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিশেষ আলোচনায় দলের মনোভাব জানাতে বক্তা হতে চান কি না, তা জানতে শশীকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তিনি রাজি হননি। বার্তাবাহককে তাঁর জবাব ছিল, যে ভূমিকা এত দিন ধরে নিয়েছেন তার বিপরীতে কিছু করতে চান না। অতএব ‘মৌনব্রত’।
শশী থারুরের মতো বক্তার তালিকায় স্থান হয়নি পাঞ্জাবের আনন্দপুর সাহিব থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মনীশ তিওয়ারি ও ফতেগড় সাহিব থেকে জয়ী অমর সিংয়েরও। এই তিনজনের পাশাপাশি মোদির তৈরি দলে স্থান হয়েছিল কংগ্রেসের দুই সাবেক মন্ত্রী সলমন খুরশিদ ও আনন্দ শর্মারও। অবশ্য এ দুজন এখন আর সংসদ সদস্য নন।
শশী থারুরের মতো দলের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি মনীশ তিওয়ারির। বিতর্কে অংশ নিতে তিনি আগ্রহও প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের বক্তার তালিকায় তাঁকে রাখা হয়নি। স্পষ্টতই, কংগ্রেস নতুন বিতর্ক সৃষ্টির অবকাশ রাখতে রাজি নয়।
শশী থারুরের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে তা দেখার বিষয়। শশী নিজেকে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে আগ্রহী। কংগ্রেসে থেকে তা সম্ভব হবে না। আবার রাজ্যে বিজেপি তৃতীয় শক্তি। আগামী বছর কেরালা বিধানসভার ভোট। বিজেপিতে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বাসনা তাঁর অপূর্ণই থেকে যাবে। কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হওয়ারও কোনো লক্ষণ নেই। কী করবেন শশী থারুর?
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ
কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।
স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।