বাল্যবিবাহের পরও হাল ছাড়েননি, সফল উদ্যোক্তা রোমানার মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা
Published: 1st, August 2025 GMT
এসএসসি পরীক্ষার পরপরই রোমানা আক্তারের বিয়ে হয়। স্বামী সেনাবাহিনীর সদস্য। স্বল্প আয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তখন হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে পুঁতির কাজ শুরু করেন রোমানা। ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করেন, নারীদের প্রশিক্ষণও দেন। প্রথম মাসে আয় হয় তিন হাজার টাকা। এরপর আর থেমে থাকেননি তিনি। রোমানা এখন ঘরে তৈরি খাবার বিক্রি করে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। তৈরি করেন কেক, বিস্কুট, আচার, জেলিসহ নানা খাদ্যপণ্য। এসব পণ্য মেলার দোকানে ও অনলাইনেও বিক্রি করেন।
রোজগারের টাকায় রোমানা আক্তার ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালান। ছেলে ইংরেজি মাধ্যমে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, মেয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। প্রতি মাসে সন্তানদের পড়াশোনার পেছনে রোমানার খরচ হয় ৩৬ হাজার টাকা। পাশাপাশি সংসারের আরও প্রায় ২০ হাজার টাকা তিনি জোগান দেন। তিনি বলেন, ‘স্বামীর বেতনের টাকায় আমি হাত দিই না। সংসার খরচের টাকাও নিই না।’
যশোর শহরের ভেকুটিয়া এলাকায় ৭ শতক জমির ওপর তিনতলা বাড়ি করেছেন রোমানা ও তাঁর স্বামী। বাড়ি করার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো টাকা নেননি রোমানা। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যে বাড়িতে থাকি, তিন লাখ টাকার গয়না বিক্রি করে ২০১১ সালে বাড়ির কাজ শুরু করেছিলাম। এখন প্রতি মাসে বাসা ভাড়া পাই ১০ হাজার টাকা। নিজেদের থাকার জন্য আরও ১০ হাজার টাকা বাসা ভাড়া বেঁচে যায়। এখন নিজের আয়ের টাকা দিয়ে আমার গয়না তৈরি করতে পেরেছি। আমাকে কখনো কেউ ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে অর্থনৈতিক বা কোনো ধরনের সাহায্য করেনি। কোনো ব্যাংক থেকেও ঋণ নিইনি। এ জন্য অনেকটা সময় লেগে গেছে।’
রোমানার বাবার বাড়ি মেহেরপুর, শ্বশুরবাড়ি কুষ্টিয়ায়। স্বামীর চাকরির সুবাদে তাঁরা যশোরে আসেন। পরে এখানে জমি কিনে বাড়ি করেন।
২০০৯ সালে রোমানার বিয়ে হয়, তখন তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী। বিয়ের পরও লেখাপড়া চালিয়ে যান। উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। স্বামীর চাকরির কারণে যশোর ও পরে কুমিল্লায় থাকতে হয়। তখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে উন্মুক্ত কোর্সে ডিগ্রি শ্রেণিতে ভর্তি হন। তবে চূড়ান্ত পরীক্ষার সময় দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হওয়ায় একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারেননি। ফলে ডিগ্রি পাস করা হয়নি।
রোমানা জানান, ২০১২ সালে তৈরি পোশাক সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন আয়। পুঁতি দিয়ে মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ, ঘর সাজানোর সামগ্রী বানিয়ে বিক্রি করেন। পরে আবার যশোরে ফিরে এসে খাবার তৈরির ব্যবসা শুরু করেন। বিভিন্ন মেলায় স্টল নেন। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে খণ্ডকালীন চাকরিও দেন। বর্তমানে তিনি প্রায় ৬০ ধরনের পণ্য তৈরি করেন। সপ্তাহে তিন দিন যশোর বিমানবন্দর এলাকার রানওয়ের মাথায় টেবিল বসিয়ে তৈরি খাবার বিক্রি করেন। শিক্ষার্থীরাই দোকান চালান।
রোমানা বলেন, ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে সম্প্রতি পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে ১২ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল মার্কেটিংসহ অনেক বিষয় শিখে নিয়েছি। কিন্তু ব্যবসায় উন্নতির জন্য সরকারিভাবে কিছু আর্থিক অনুদান ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করলে আমার মতো উদ্যোক্তারা এগিয়ে যাবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যশোরের সিনিয়র জেলা কৃষি কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা বলেন, পার্টনার প্রকল্পের আওতায় যশোর জেলার ৪০০ নারী-পুরুষকে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণসহ চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাকে ৭০ শতাংশ টাকা ভর্তুকি দেওয়া যাবে। তবে উদ্যোক্তাকে দুই-চারজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা
বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টারের উৎপাদন শাখায় কিচেন ও বেকারি ইউনিটে ইন্টার্নশিপে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্ধারিত সম্মানী প্রদান করা হবে। শুধু ছয় মাসের জন্য করা যাবে ইন্টার্নশিপ।
কিচেন হেলপার পদে ইন্টার্ন—
বয়স: সর্বোচ্চ-৩২ বছর।
যোগ্যতা: ১. কমপক্ষে এসএসসি পাস।
২.City & Guilds, UK/NHTTI অথবা সরকার অনুমোদিত সংস্থা হতে কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদি ফুড অ্যান্ড বেভারেজে কুকিং কোর্স সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
৩. যেকোনো ফাইভ স্টার হোটেল, বিএফসিসি বা সমমানের ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানে ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ওপর ন্যূনতম ছয় সপ্তাহের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্ট সম্পন্ন থাকতে হবে।
বেকার হেলপার পদে ইন্টার্ন—
বয়স: সর্বোচ্চ-৩২ বছর।
যোগ্যতা: ১. কমপক্ষে এসএসসি পাস।
২.City & Guilds, UK/NHTTI অথবা সরকার অনুমোদিত সংস্থা থেকে কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদি বেকারি অ্যান্ড পেস্ট্রিতে সার্টিফিকেট কোর্স থাকতে হবে।
৩. যেকোনো ফাইভ স্টার হোটেল, বিএফসিসি বা সমমানের ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানে বেকারি অ্যান্ড পেস্ট্রির ওপর ন্যূনতম ছয় সপ্তাহের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্ট সম্পন্ন থাকতে হবে।
যোগ্যতা—১. প্রত্যেক প্রার্থীকে কমপক্ষে এসএসসি পাস অথবা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বয়স সর্বোচ্চ ৩২ বছর হতে হবে।
২. চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ইন্টার্নকে বিএফসিসিতে ভর্তির সময় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট বাধ্যতামূলকভাবে সঙ্গে আনতে হবে।
৩. প্রত্যেক নির্বাচিত ইন্টার্নকে ভর্তির আগে বিমান মেডিকেল থেকে শারীরিক ফিটনেস সংগ্রহ করতে হবে।
সুযোগ-সুবিধা—
১. শুধু ছয় মাসের জন্য ইন্টার্ন হিসেবে ভর্তি করা হবে।
২. প্রত্যেক নির্বাচিত ইন্টার্নকে দৈনিক হাজিরা সাপেক্ষে ছয় শ টাকা হারে সম্মানী দেওয়া হবে। নির্ধারিত সম্মানী ব্যতীত অন্য কোনো ভাতা দেওয়া হবে না।
৩. রোস্টার মোতাবেক দৈনিক আট ঘণ্টা ডিউটি সম্পন্ন করতে হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে বয়স সর্বোচ্চ ৩২ বছর হতে হবে