এসএসসি পরীক্ষার পরপরই রোমানা আক্তারের বিয়ে হয়। স্বামী সেনাবাহিনীর সদস্য। স্বল্প আয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। তখন হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ নিয়ে পুঁতির কাজ শুরু করেন রোমানা। ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করেন, নারীদের প্রশিক্ষণও দেন। প্রথম মাসে আয় হয় তিন হাজার টাকা। এরপর আর থেমে থাকেননি তিনি। রোমানা এখন ঘরে তৈরি খাবার বিক্রি করে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। তৈরি করেন কেক, বিস্কুট, আচার, জেলিসহ নানা খাদ্যপণ্য। এসব পণ্য মেলার দোকানে ও অনলাইনেও বিক্রি করেন।

রোজগারের টাকায় রোমানা আক্তার ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালান। ছেলে ইংরেজি মাধ্যমে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, মেয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। প্রতি মাসে সন্তানদের পড়াশোনার পেছনে রোমানার খরচ হয় ৩৬ হাজার টাকা। পাশাপাশি সংসারের আরও প্রায় ২০ হাজার টাকা তিনি জোগান দেন। তিনি বলেন, ‘স্বামীর বেতনের টাকায় আমি হাত দিই না। সংসার খরচের টাকাও নিই না।’

যশোর শহরের ভেকুটিয়া এলাকায় ৭ শতক জমির ওপর তিনতলা বাড়ি করেছেন রোমানা ও তাঁর স্বামী। বাড়ি করার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো টাকা নেননি রোমানা। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যে বাড়িতে থাকি, তিন লাখ টাকার গয়না বিক্রি করে ২০১১ সালে বাড়ির কাজ শুরু করেছিলাম। এখন প্রতি মাসে বাসা ভাড়া পাই ১০ হাজার টাকা। নিজেদের থাকার জন্য আরও ১০ হাজার টাকা বাসা ভাড়া বেঁচে যায়। এখন নিজের আয়ের টাকা দিয়ে আমার গয়না তৈরি করতে পেরেছি। আমাকে কখনো কেউ ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে অর্থনৈতিক বা কোনো ধরনের সাহায্য করেনি। কোনো ব্যাংক থেকেও ঋণ নিইনি। এ জন্য অনেকটা সময় লেগে গেছে।’

রোমানার বাবার বাড়ি মেহেরপুর, শ্বশুরবাড়ি কুষ্টিয়ায়। স্বামীর চাকরির সুবাদে তাঁরা যশোরে আসেন। পরে এখানে জমি কিনে বাড়ি করেন।

২০০৯ সালে রোমানার বিয়ে হয়, তখন তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী। বিয়ের পরও লেখাপড়া চালিয়ে যান। উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। স্বামীর চাকরির কারণে যশোর ও পরে কুমিল্লায় থাকতে হয়। তখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে উন্মুক্ত কোর্সে ডিগ্রি শ্রেণিতে ভর্তি হন। তবে চূড়ান্ত পরীক্ষার সময় দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হওয়ায় একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারেননি। ফলে ডিগ্রি পাস করা হয়নি।

রোমানা জানান, ২০১২ সালে তৈরি পোশাক সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন আয়। পুঁতি দিয়ে মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ, ঘর সাজানোর সামগ্রী বানিয়ে বিক্রি করেন। পরে আবার যশোরে ফিরে এসে খাবার তৈরির ব্যবসা শুরু করেন। বিভিন্ন মেলায় স্টল নেন। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে খণ্ডকালীন চাকরিও দেন। বর্তমানে তিনি প্রায় ৬০ ধরনের পণ্য তৈরি করেন। সপ্তাহে তিন দিন যশোর বিমানবন্দর এলাকার রানওয়ের মাথায় টেবিল বসিয়ে তৈরি খাবার বিক্রি করেন। শিক্ষার্থীরাই দোকান চালান।

রোমানা বলেন, ‘কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে সম্প্রতি পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে ১২ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল মার্কেটিংসহ অনেক বিষয় শিখে নিয়েছি। কিন্তু ব্যবসায় উন্নতির জন্য সরকারিভাবে কিছু আর্থিক অনুদান ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করলে আমার মতো উদ্যোক্তারা এগিয়ে যাবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যশোরের সিনিয়র জেলা কৃষি কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা বলেন, পার্টনার প্রকল্পের আওতায় যশোর জেলার ৪০০ নারী-পুরুষকে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণসহ চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাকে ৭০ শতাংশ টাকা ভর্তুকি দেওয়া যাবে। তবে উদ্যোক্তাকে দুই-চারজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির তথ্য, আসন ১২০০

ঢাকা কলেজে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ভর্তি নীতিমালা ২০২৫-২৬ অনুযায়ী একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় ছাত্র ভর্তির আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইআইআইএন ১০৭৯৭৭।

আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা—

যেকোনো শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। নিচের উল্লিখিত বিভাগ অনুসারে ন্যূনতম জিপিএপ্রাপ্ত ছাত্ররা ভর্তির আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

১. বিজ্ঞান বিভাগ: বাংলা ভার্সন- ন্যূনতম জিপিএ ৫.০০,

২. ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ: বাংলা ভার্সন- ন্যূনতম জিপিএ ৪.৭৫,

৩. মানবিক বিভাগ: বাংলা ভার্সন- ন্যূনতম জিপিএ ৪.৫০।

আরও পড়ুননটর ডেম কলেজ: একাদশে ভর্তিতে যোগ্যতার শর্ত প্রকাশ, ও লেভেল শিক্ষার্থীদের আবেদন নয়, আসন ৩২৯০টি২৬ জুলাই ২০২৫আসনসংখ্যা

বিজ্ঞানে ৯০০টি, ব্যবসায় শিক্ষায় ১৫০টি এবং মানবিক ১৫০টি আসনে ছাত্র ভর্তি করা হবে।

ভর্তি ও কলেজ–সংক্রান্ত তথ্য

১. একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ৩০ জুলাই থেকে আগামী ১১ আগস্ট তারিখের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করা যাবে।

২. অনলাইনে আবেদনের জন্য ওয়েবসাইটের ঠিকানা।

৩. এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম নির্ধারিত হবে।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫

৪. ভর্তির ফলাফল তিনটি পর্যায়ে বোর্ড কর্তৃক প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।

৫. একজন শিক্ষার্থী তার মেধা ও পছন্দ ক্রমানুযায়ী একটি মাত্র কলেজের জন্য নির্বাচিত হবে।

৬. নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে নিজেই অনলাইনে বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য ফি বাবদ ৩৩৫ টাকা জমা দিয়ে ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়ন করতে হবে।

* বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট

আরও পড়ুনভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ: একাদশে ভর্তিতে যোগ্যতার শর্ত প্রকাশ, আসন ২৩৯০টি২৯ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনএকাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবেদন শুরু, ফি-মেধা কোটা-ভর্তির যোগ্যতা-গ্রুপ নির্বাচন যেভাবে৩০ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির তথ্য, আসন ১২০০
  • একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে আবেদন শুরু, ভর্তি ফি-মেধা কোটা-ভর্তির যোগ্যতা-গ্রুপ নির্বাচন যেভাবে