বাংলাদেশে এখন ১১ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে আর ৪ কোটির বেশি মানুষ ফেসবুকে যুক্ত। প্রযুক্তি ব্যবহারে এই উন্নতির পাশাপাশি একটা বড় বিপদও আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে: মিথ্যা তথ্যের লাগামহীন বিস্তার। পুরোনো দিনের মুখরোচক গুজব থেকে শুরু করে এখনকার অত্যাধুনিক ‘ডিপফেক’—এসব কিছু আমাদের সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য হুমকি তৈরি করছে।

২.

‘কানে হাত না দিয়ে চিলের পেছনে ছোটা’ বা ‘পাঁঠাকে কুকুর বানিয়ে ছাগল বগলদাবা করা’— এ–জাতীয় প্রবচন বা গল্প বলে দেয় যে মিথ্যাকে বিশ্বাস করা আমাদের একটি ঐতিহ্যগত স্বভাব। প্রাচীন মিসরের রাজা দ্বিতীয় রামসেস নিজের কীর্তিগাথাতে মিথ্যা তথ্য যোগ করেছিলেন; আবার ১৯ শতকে আমেরিকায় ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ নামে একধরনের সাংবাদিকতা শুরু হয়েছিল, যেখানে তথ্যের চেয়ে মানুষের আবেগকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো। 

মিথ্যা তথ্যের সমস্যাটা নতুন কিছু নয়; এটা শত শত বছর ধরেই ছিল, বিভিন্ন রূপে ছিল। বিভিন্ন উদ্দেশে ভুল তথ্য, অপপ্রচার আর মিথ্যা কথা ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়ার বর্তমান যুগে এই মিথ্যা খবরগুলো আরও দ্রুত এবং আরও অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন (এআই) এতটাই শক্তিশালী যে এটা দিয়ে এমন লেখা, ছবি বা ভিডিও (ডিপফেক) তৈরি করা যায়, যা দেখলে মনে হবে একদম আসল। আবার এআই-চালিত ‘বট’ সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে এমন একটা ধারণা তৈরি করতে পারে যে সবাই হয়তো কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে একমত, যদিও সেটি আসলে ভুল। 

এই দ্রুত আর বারবার মিথ্যা খবর ছড়ানোর ফলে মানুষের মন অসাড় হয়ে যায়, তারা সত্য-মিথ্যা যাচাই করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ভুল তথ্যকেই সঠিক বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে। 

তথ্য বিশৃঙ্খলা’ আমাদের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে এনেছে। এটা শুধু মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসকেই প্রভাবিত করে না; বরং যখন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই মিথ্যা তথ্য বারবার ছড়ায়, তখন তা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করে। সমাজের মধ্যে এটা ঘৃণা, সহিংসতা, বৈষম্য ও নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘অন্ধ বিশ্বাস’ তৈরি করে। 

মানুষের কিছু স্বভাবগত দুর্বলতা আছে। এর মধ্যে একটি হলো—তারা যুক্তির চেয়ে আবেগ দিয়ে বেশি পরিচালিত হয়। মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ব্যক্তিরা এই দুর্বলতাগুলোকেই কাজে লাগায়।

শুধু টাকার জন্য দেশ-বিদেশে যেভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়, তা বিস্ময়কর। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো যদি শুধু কনটেন্টের মানিটাইজেশন তুলে দেয়, পুরো পৃথিবীতে মিথ্যা তথ্যের ব্যবসা অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে; কিন্তু মুনাফার গরজ বড় বালাই!

৩.

এই ‘তথ্য বিশৃঙ্খলা’ আমাদের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে এনেছে। এটা শুধু মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসকেই প্রভাবিত করে না; বরং যখন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই মিথ্যা তথ্য বারবার ছড়ায়, তখন তা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করে। সমাজের মধ্যে এটা ঘৃণা, সহিংসতা, বৈষম্য ও নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘অন্ধ বিশ্বাস’ তৈরি করে। 

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশও এমন অনেক ঘটনার শিকার হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় আমরা ‘ইনফোডেমিক’ দেখেছি, যেখানে এত বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছিল যে সরকার বা নির্ভরযোগ্য সংস্থাগুলোও মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হিমশিম খাচ্ছিল।

৪.

এ বড় বিপদটা মোকাবিলা করতে সবার সহযোগিতা দরকার। সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সবারই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সাধারণ মানুষও এই লড়াইয়ের সামনের সারির যোদ্ধা। মিথ্যা তথ্য বা ভুয়া খবর এখন সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে আর এগুলো চেনাটা খুবই দরকার। এগুলো চেনা বা বোঝার কিছু সহজ পদ্ধতি আছে। 

একটি ওয়েবসাইটের চেহারা দেখে আপনি অনেক কিছু বুঝতে পারবেন। আসল নিউজ সাইটগুলো সাধারণত ‘সাজানো গোছানো’ হয়। কিন্তু ভুয়া খবরের সাইটগুলো প্রায়ই এলোমেলো দেখায়; বিরক্তিকর অনেক বিজ্ঞাপন থাকে আর তাদের ছবিগুলো প্রায়ই নকল করা বা চুরি করা হয়। 

এর পরও খবরটা কোন জায়গা থেকে আসছে তা খেয়াল করুন। অপরিচিত কোনো খবরের উৎস দেখলে একটু সতর্ক হন। আপনি যদি  খবরের ওয়েবসাইটের নাম আগে না শুনে থাকেন, তাহলে ইন্টারনেটে একটু খুঁজে দেখুন: এটা আসলে কী ধরনের ওয়েবসাইট। খবরটা কি এমন কোনো জায়গা থেকে আসছে, যা পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য?

ওয়েবসাইটের ঠিকানাও (ইউআরএল) অনেক কিছু বলতে পারে। আসল ওয়েবসাইটের নামের সঙ্গে অনেক সময় ভুয়া সাইটগুলো অদ্ভুত কিছু অক্ষর বা চিহ্ন যোগ করে দেয়। এগুলো আসল ওয়েবসাইটের মতো দেখানোর চেষ্টা করে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার একটি পদ্ধতি। তাই ওয়েবসাইটের ঠিকানাটা ভালো করে খেয়াল করতে হবে।

লেখকের নাম আছে কি না, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভুয়া খবরের লেখাতে বেশির ভাগ সময় লেখকের নাম থাকে না। লেখকের নাম যদি থাকেও অনলাইনে তার নামটা একটু খুঁজে দেখুন। তিনি কি পরিচিত, খবরটা কি একজন বিশ্বাসযোগ্য লেখক লিখেছেন—এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজুন।

খবরটা মন দিয়ে পড়ুন এবং এর মূল কথা কী, তা বোঝার চেষ্টা করুন। ভুয়া খবরের লেখায় প্রায়ই শুধু একটি নির্দিষ্ট মতামত চাপিয়ে দেওয়া হয়, সুরটা খুব উত্তেজিত থাকে অথবা এমন সব দাবি করা হয়, যা বিশ্বাস করাই কঠিন। খবরে সবকিছু ঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে? খবরটা আপনার কাছে নিরপেক্ষ এবং যুক্তিসংগত মনে হচ্ছে কি না, তা বিবেচনা করুন।

বানান, ব্যাকরণ আর যতিচিহ্নও খুব জরুরি। যদি খবরের লেখায় অনেক বানান ভুল থাকে, সব অক্ষর বড় হাতের হয়, ব্যাকরণ ঠিক না থাকে অথবা অনেকগুলো আশ্চর্যের চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাহলে সম্ভবত খবরটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। 

ওয়েবসাইটের ‘আমাদের সম্পর্কে’ (অ্যাবাউট অ্যাজ) অংশটাও দেখতে পারেন। যেসব সংবাদমাধ্যম নির্ভরযোগ্য, তারা সাধারণত এই অংশে নিজেদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, তাদের নীতি এবং যোগাযোগের ই–মেইল ঠিকানা স্পষ্টভাবে দিয়ে রাখে। 

খবরটিতে কোন কোন সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং কাদের কথা উদ্ধৃত করা হয়েছে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ভুয়া খবরের লেখায় প্রায়ই কোনো নাম প্রকাশ না করা সূত্র, ‘অবিশ্বস্ত’ সূত্র অথবা কোনো সূত্রই উল্লেখ করা হয় না। নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং তাদের পরিচয়টা গুরুত্বপূর্ণ।

কোনো খবর নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে একই বিষয়ে অন্য খবর ইন্টারনেটে খুঁজে দেখুন। আপনি যদি অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে একই বিষয়ে খবর না পান, তাহলে তা ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গুগল সার্চ ব্যবহার করে আপনি জানতে পারবেন কোনো বিষয় নিয়ে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য উৎস কী বলছে। গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ভুল তথ্য শনাক্ত করতে বিভিন্ন টুল তৈরি করেছে। এর পরও নিশ্চিত হতে না পারলে তথ্য যাচাইকারীদের (ফ্যাক্ট চেকার) সাহায্য নিতে পারেন। তথ্য যাচাইকারীরা কি খবরটাকে সত্যি বলছে?

যদি কোনো ছবি বা ভিডিও দেখে সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে দেখুন সেটি অন্য কোথাও আগে প্রকাশিত হয়েছে কি না, অথবা সেটির উৎস কোথায়। ডিপফেক ভিডিও বা ছবিগুলো দেখতে আসল মনে হলেও কিছু কিছু লক্ষণ দেখে সেগুলো চেনা যেতে পারে। যেমন ভিডিওতে থাকা মানুষের মুখের চামড়া অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, চোখের পলক স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হতে পারে, চোখে চশমা থাকলে আলোর প্রতিফলন অদ্ভুত লাগতে পারে, মুখের লোম বা ঠোঁটের নড়াচড়া স্বাভাবিক না–ও হতে পারে। এআই-জেনারেটেড ছবিগুলোতে হাত বা দাঁতে মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।

কোনো সিদ্ধান্ত জানানোর আগে বা শেয়ার করার আগে একটু থামুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন— এ তথ্যটা কি আসল মনে হচ্ছে? এটা কি বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? নাকি কেবল ‘ক্লিক’ করানোর জন্য মিথ্যা কিছু বলা হচ্ছে?

আফ্রিকান একটি প্রবাদ রয়েছে এ রকম—‘একটি শিশুকে ভালোভাবে মানুষ করতে হলে শুধু মা-বাবা নয়, পুরো সমাজের সাহায্য প্রয়োজন হয়।’ তেমনি মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে কেবল ব্যক্তি নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।

আমরা অনেকেই নিজ নিজ বিশ্বাস বা আদর্শিক অবস্থান অনুযায়ী কিছু বিষয় সত্য বলে গ্রহণ করতে চাই, আবার কিছু বিষয় মিথ্যা বলে গ্রহণ করতে চাই। এটিই মানুষের স্বভাব; কিন্তু মনে রাখবেন, আপনি সত্য বা মিথ্যা বলে বিশ্বাস করতে চাইলেই তা সত্য বা মিথ্যা হয়ে যায় না। কোনো খবর পড়ার পর যদি আপনি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন, তখন একটু থামুন। আবেগপ্রবণ অবস্থায় আমরা ভুল সিদ্ধান্ত বেশি নিই। এ অবস্থায় শেয়ার করার আগে অবশ্যই তথ্যটা যাচাই করুন।

৫.

‘ডিজিটাল নাগরিকত্ব’ নাম একটি ধারণা প্রচলিত আছে। এর মানে হলো, আমরা যখন ইন্টারনেট বা মুঠোফোন ব্যবহার করি, তখন কী কী নিয়ম মেনে চলা উচিত। এটা সব সময় বদলাচ্ছে। কারণ, প্রযুক্তিও বদলাচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য হলো অন্যদের অনলাইনে ভালো অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহায্য করা, এটা মনে রাখা যে আমরা অনলাইনে যা কিছু করি, তার ফল অন্যদের ওপর পড়তে পারে এবং সবার ভালোর জন্যই অনলাইনে ভালো দৃষ্টান্ত তৈরি করা উচিত।

ডিজিটাল নাগরিকত্বের তিনটি সহজ নীতি আছে, যাকে আমরা তিনটি ‘স’ (ইংরেজিতে এস) বলতে পারি। এগুলো হলো:  

১. সুরক্ষা (সেফটি) মানে হলো নিজেকে এবং অন্যদের সুরক্ষিত রাখা; 

২. সচেতনতা (স্যাভি) মানে হলো নিজে শেখা এবং অন্যদেরও ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে শিখতে সাহায্য করা এবং 

৩. সামাজিকতা (সোশ্যাল) মানে হলো নিজেকে সম্মান এবং অন্যদেরও সম্মান করা।

কাউন্সিল অব ইউরোপের ডিজিটাল নাগরিকত্ব নিয়ে একটা নির্দেশনা আছে। সেখানে মূল্যবোধ, আচরণ, দক্ষতা, জ্ঞান ও সঠিক বোঝাপড়া—এই চার মূল বিষয় মিলে গণতান্ত্রিক সমাজে ভালো মানুষ হওয়ার জন্য ২০টা গুণের কথা বলা হয়েছে। এই মানদণ্ডে আমাদের দেশের নাগরিকসহ পৃথিবীর কত শতাংশ অনলাইন ব্যবহারকারী ডিজিটাল নাগরিকত্ব পাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। 

ইউনেসকো বলছে, ভুল তথ্য হলো এমন তথ্য যা হয়তো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়নি; কিন্তু তা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। ডিজিটাল নাগরিকত্বের জন্য ইউনেসকো একটি কাঠামো তৈরি করেছে, যেটা বলে যে আমাদের মধ্যে কিছু দক্ষতা থাকা দরকার। এর মধ্যে রয়েছে মিডিয়া ও তথ্য সাক্ষরতা, সামাজিক জ্ঞান ও দক্ষতা। এসব বিষয়ে আমাদের শিক্ষিত হওয়া খুবই জরুরি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ বিষয়ে পড়াশোনা করানো উচিত, যাতে অল্প বয়সেই ডিজিটাল জগতের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে জানা থাকে।

৬.

ডিজিটাল যুগে বাস করতে হলে আমাদের কিছু নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে, যাকে বলা হয় ‘গণমাধ্যম সাক্ষরতা’ এবং ‘তথ্য সাক্ষরতা’। এর মানে হলো আমরা কীভাবে বিভিন্ন মিডিয়া (যেমন টিভি, সংবাদপত্র, ইন্টারনেট) থেকে তথ্য পাচ্ছি, সেগুলোকে কীভাবে বুঝতে হবে এবং সেগুলোর সত্যতা কীভাবে যাচাই করতে হবে ইত্যাদি। 

ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে কোটি কোটি ব্যবহারকারী থাকলেও তারা স্থানীয় প্রেক্ষাপটে ঘৃণা বক্তব্য এবং ভুল তথ্য কার্যকরভাবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর মানে হলো তাদের আরও বেশি বিনিয়োগ করা উচিত এমন প্রযুক্তিতে যা ভুয়া খবর শনাক্ত করতে পারে এবং ভুয়া খবর থেকে কেউ যেন অর্থ উপার্জন করতে না পারে, সেটির ব্যবস্থা করা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ভাষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

তথ্যের অবাধ প্রবাহের এই যুগে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মুখে দাঁড়িয়ে আছি: আমরা কি ডিজিটাল মিথ্যাচারীদের দ্বারা বিভ্রান্ত এবং বিভক্ত হব, নাকি জ্ঞান ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ার বিপদ প্রতিরোধ করব এবং একটি  বিশ্বাসযোগ্য ও সুসংহত সমাজ তৈরি করব? আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি এবং দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সত্য থেকে মিথ্যাকে আলাদা করার আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতির ওপর।

আফ্রিকান একটি প্রবাদ রয়েছে এ রকম—‘একটি শিশুকে ভালোভাবে মানুষ করতে হলে শুধু মা-বাবা নয়, পুরো সমাজের সাহায্য প্রয়োজন হয়।’ তেমনি মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে কেবল ব্যক্তি নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। আসুন আমরা সবাই মিলে সচেতন হই, একে অপরকে সচেতন করি এবং মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে একত্র হয়ে লড়াই করি। 

রিজওয়ান-উল-আলম সহযোগী অধ্যাপক, মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম ডিপার্টমেন্ট, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ভরয গ য ব যবহ র কর ব শ ব স কর খবর র ল খ ন ব যবহ র আম দ র স র জন য গ রহণ ন একট

এছাড়াও পড়ুন:

রূপগঞ্জে এক হাজার গাছের চারা বিতরণ না করে খালে ফেলে দিলেন অধ্যক্ষ

রূপগঞ্জে প্রায় এক হাজার বিভিন্ন প্রকার সরকারি ফলজ গাছের চারা বিতরণ না করে খালে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভুল ষতা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সরকারিভাবে বন্ধ থাকার সুযোগে শুক্রবার সকালে অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের নির্দেশে গাছের চারা গুলো খালের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। 

গাছের চারা বিতরণ না করে খালের পানিতে ফেলে দেওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাধা দেন এবং প্রতিবাদ করেন।  চারা গুলো বিতরণ না করে ফেলে দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, জেলা প্রশাসনের গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচির আওতায় চলমান বৃক্ষরোপণের অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের কৃষি প্রণোদনায় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিনামূল্যে এ চারা বিতরণ করা হয়।

জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার গাছের চারা দিয়ে বৃক্ষরোপণের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া।

নারায়ণগঞ্জ হবে সবুজে ঘেরা প্রান্ডের ড্যান্ডি হবে বিশ্বে সেরা এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রূপগঞ্জ উপজেলার সকল ইউনিয়ন ও পৌরসভার  বিভিন্ন স্থানে কৃষ্ণচূড়া, শিমুল সুপারি, নারিকেল, তাল, সাজিনা, অর্জুন, নিম, কাঁঠাল, আম, বকুল ও সোনালু প্রজাতির গাছের চারা রোপনের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বৃক্ষরোপণের কার্যক্রম শুরু করেন। 

বৃক্ষরোপণের অংশ হিসেবে রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে গত ১৫ জুলাই  প্রায় ১২'শ গাছের চারা ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরে ১৬ জুলাই ১২০ টি গাছের চারা রোপণ করা হয়। 

বাকি প্রায় এক হাজার গাছের চারা রোপণ বা বিতরণ না করে নষ্ট করে ফেলা হয়। সরকারিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুযোগে গাছের চারা গুলো আটি করে অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের নির্দেশক্রমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দারোয়ান মোস্তফা মিয়া ও সুইপার জুবায়ের হোসেন সামনে থাকা খালের পানিতে ফেলতে শুরু করে।  

গাছের চারা বিতরণ না করে খালের পানিতে ফেলে দেওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বাধা দেন এবং প্রতিবাদ করেন।  

এ সময় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দারোয়ান মোস্তফা মিয়া ও সুইপার জুবায়ের হোসেন বলেন, আমাদের অধ্যক্ষ সূরাইয়া পারবিন ম্যাডাম বলেছেন গাছের চারা গুলো নষ্ট হয়ে গেছে এগুলো ফেলে দিতে, তাই ফেলে দিয়েছি।  চারা গুলো বিতরণ না করে ফেলে দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের কম্পিউটার অপারেটর শামীমা সুলতানা উমা বলেন, স্কুলের পাশেই আমার টেইলার্সের দোকান রয়েছে। গাছের চারা খালের মধ্যে আটি করে ফেলে দেওয়ার সময় স্থানীয়রা আমাকে খবর দিলে আমি দারোয়ান ও সুইপারকে জিজ্ঞেস করি। তারা বলে অধ্যক্ষ ম্যাডামের নির্দেশে তারা এগুলো ফেলে দিচ্ছে। 

ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অভিযুক্ত সুরাইয়া পারবিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার বারবার চেষ্টা করা হলেও তিনি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। 

রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফারিয়া আক্তার রুবি বলেন, সরকারি গাছের চারা বিতরণ না করে নষ্ট করে ফেলে দেয়ার অধিকার কারো নেই। বৃক্ষরোপণ বা বিতরণ না করতে পারলে সেগুলো আমাদের কৃষি অফিসে জমা দিবে। কিন্তু ফেলে দিয়ে অন্যায় করেছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

উল্লেখ্য,  ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুরাইয়া পারভীনের বিরুদ্ধে সরকারি বই গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভুলতা স্কুল এন্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে।

বই বিক্রির সময় স্থানীয়দের হাতে অধ্যক্ষ, পিকআক চালক ও চোরাই বই ক্রেতাকে আটক করা হলেও  উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নূরে আলম মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

এতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর আগে, অধ্যক্ষ সুরাইয়া বেগমের বিরুদ্ধে  টাকা আত্মসাৎ, কাজ না করিয়ে বিল তোলাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।  বই বিক্রির ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রূপগঞ্জে এক হাজার গাছের চারা বিতরণ না করে খালে ফেলে দিলেন অধ্যক্ষ