জাকসু নির্বাচন: ভোটের আগের রাতে নির্বাচন কমিশনে বহিরাগত, ক্ষোভ
Published: 10th, September 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বিএনপিপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট মারুফ মল্লিক ও ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি।
এ সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কমিশনে ছুটে আসেন শিক্ষার্থীরা। বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে আসার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ ও প্রতিবাদ করেন তারা।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে আসেন এই দুজন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়জয়কার অবস্থার এক দিন পরই জাকসুর ভোট হচ্ছে। ফলে জাকসুতেও চোখ রয়েছে সবার। অবশ্য সাবির্ক প্রস্তুতি নিয়ে ভোটগ্রহণের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করার তথ্য দিয়েছে জবি কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাতে শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন তারা।
অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভোটগ্রহণের আগের রাতে বিএনপিপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট মারুফ মল্লিক এবং ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ করছেন। তখন ওই কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রব ও বিএনপিপন্থি শিক্ষক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিনও ছিলেন।
সেখানে উপস্থিত জাকসুর কয়েকজন প্রার্থী এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। একজনকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, “স্যার এরা এখানে কী করেন? ভোট কি রাতে হচ্ছে নাকি?”
জবাবে অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, “আমি তো জানি না।”
এরপর বহিরাগত দুজনসহ অধ্যাপক সোহেল আহমেদ কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান।
এ ব্যাপারে উপ-উপাচার্য বলেন, “কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে অনেকে আমাদের এখানে এসেছিলেন। আমরা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছিলাম।”
জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার অবশ্য বলেছেন, “এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড.
এই নির্দেশনা উপেক্ষার আরেক ঘটনা সামনে আসে বুধবার রাতে। ছাত্রদলের দুজন নেতা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচন কমিশন কার্য প্রবেশ করেন। তাদের ছবি ধারণ করায় সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাকসু নির্বাচনের ব্যালট বাক্স পরিবহনের সময় ছাত্রদলের ওই দুই নেতা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছিলেন। ভুক্তভোগী সাংবাদিক সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন; যে কারণে তার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্যাম্পাসের সিনেট ভবনের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত দুই ছাত্রদল নেতা হলেন, জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রোজেন।
জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম আবর্তনের (২০০৯-১০) রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রোজেন ৪০তম আবর্তনের (২০১০-১১) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা দুজনেই ক্যাম্পাসের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। জাবি প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, তারা দুজনই নির্বাচন চলাকালীন ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারেন না।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক ওসমান সরদার দৈনিক যায়যায়দিনের জাবি প্রতিনিধি। তার মোবাইল কেড়ে ছবি ডিলিট করার পর তিনি শঙ্কিত বলে অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন।
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প ট ম বর ছ ত রদল
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুর তফসিল সোমবার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রথম কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
রবিবার (২ নভেম্বর) চূড়ান্ত করা হবে নির্বাচনি আচরণবিধি এবং আগামীকাল সোমবার (৩ নভেম্বর) ঘোষণা করা হবে নির্বাচনের তফসিল।
জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসান বলেন, “২৭ নভেম্বর নয়, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জকসু নির্বাচন হবে। সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ডিসেম্বরের ৮, ৯ বা ১০ তারিখ যাচাই করে দেখা হচ্ছে। যেহেতু ১৩ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে এবং ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ কর্মদিবস—সেক্ষেত্রে ১০ ডিসেম্বর বুধবার নির্বাচনের সম্ভাবনা বেশি।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম জকসু নির্বাচন। তাই প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগছে। অনেক ছাত্র সংগঠনও ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়, যাতে তারা প্রচারণা চালাতে পারে। তবে আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব একটি উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন করতে।”
অধ্যাপক মোস্তফা হাসান বলেন, “ভোটার তালিকা, প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা, ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া—এসব খসড়া তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনি আচরণবিধিও প্রস্তুত করা হয়েছে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল অনুসরণ করে।”
আজ সব কার্যকর ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক প্রতিনিধি ও নির্বাচনের অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ যেন দ্বিমত না করে, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। আচরণবিধি চূড়ান্ত হলেই সোমবার বা মঙ্গলবার তফসিল ঘোষণা করব।”
ছাত্রদলের সম্পাদকীয় ও সদস্য পদ বৃদ্ধির দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “জকসুর সংবিধি পাস হয়ে গেছে। এখন এটি সংশোধন করতে হলে একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট, ইউজিসি, মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে—এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাই নতুন করে সংযোজনের সুযোগ নেই।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সেটা স্বীকার করছি। তবে আমরা চাই, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে। অন্যান্য ক্যাম্পাসের তুলনায় জবির ছাত্র সংগঠনগুলো অনেক ঐক্যবদ্ধ। তাদের সহযোগিতা পেলে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই হবে জকসু নির্বাচন।”
অধ্যাপক মোস্তফা হাসান আশা প্রকাশ করে বলেন, “২০ বছর পর প্রথম জকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আমরা চাই, জবির এই নির্বাচন সারা দেশে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক।”
ঢাকা/লিমন ইসলাম/ইভা