মুগদায় নিজের বাসা থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, গ্রেপ্তারের পর স্বামী কারাগারে
Published: 13th, September 2025 GMT
রাজধানীর মুগদা থানার দক্ষিণ মান্ডায় আফরিন সুলতানা ওরফে দিবা (২৪) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে দক্ষিণ মান্ডা প্রথম গলির একটি ভবনের সপ্তম তলা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
আফরিনের পরিবারের অভিযোগ, আফরিনকে হত্যা করে লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছেন তাঁর স্বামী সাইফুল ইসলাম। কিন্তু পুলিশ সাইফুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা গ্রহণ করেনি।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, আফরিনের স্বামী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা গ্রহণ করে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে হত্যার আলামত পাওয়া গেলে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে।
পুলিশ ও আফরিনের পারিবারিক সূত্র জানায়, সাত বছর আগে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আফরিনের বিয়ে হয়। তাঁদের প্রায় দুই বছর বয়সী এক পুত্রসন্তান রয়েছে। সাইফুল ইসলাম সপরিবার দক্ষিণ মান্ডা প্রথম গলির একটি ভবনের সপ্তম তলায় ভাড়া থাকতেন।
বুধবার আফরিনের সঙ্গে সাইফুলের ঝগড়া হয়। ওই দিন বিকেলে সাইফুল আফরিনের বাবার বাসায় গিয়ে তাঁর বাবা আনোয়ারুল ইসলামকে বলেন, আফরিন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এরপর আনোয়ারুল ইসলাম মুগদা থানায় জানালে পুলিশ এসে আফরিনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
আফরিনের বাবা মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আফরিনের সঙ্গে বিয়ের পর তারা জানতে পারেন, সাইফুল বেকার ও মাদকাসক্ত। সংসার চালানোর জন্য আফরিনকে চাপ দিয়ে প্রতি মাসে তাঁর কাছ (আনোয়ারুল) থেকে টাকা নিতেন। এ ছাড়া নেশার টাকা এনে দেওয়ার জন্য আফরিনকে মারধর করতেন সাইফুল। অন্য নারীর সঙ্গেও সাইফুলের সম্পর্ক ছিল।
আনোয়ারুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আফরিনকে পিটিয়ে হত্যা করে তাঁর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজান সাইফুল। এ ব্যাপারে মুগদা থানায় সাইফুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা নেয়। তিনি বলেন, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার কথা বলা হলেও আফরিনের পায়ের পাতা খাটের ওপরে লাগানো ছিল। তা ছাড়া পুলিশ শোবারঘর থেকে লাশ উদ্ধারের সময় কক্ষের দরজা আগে থেকেই খোলা ছিল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, আফরিনের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে ওই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। সে কারণে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে সাইফুলের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার করে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আফরিনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ ‘হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ থাকলে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে করা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল শ উদ ধ র আফর ন র হত য র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছে দেশটির এল–ফাশের শহরের পতনের পর সেখানকার বাসিন্দারা ‘চরম বিপদের’ মধ্যে রয়েছেন। তাঁরা শহরটিতে আটকা পড়েছেন। গতকাল শনিবার ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য চিকিৎসা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফের লড়াই চলছে। গত ২৬ অক্টোবর এল-ফাশের দখল করে নেয় আধা সামরিক বাহিনীটি। শহরটির পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুনসুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে২২ ঘণ্টা আগেএল–ফাশের শহর থেকে যাঁরা পালিয়ে কাছের তাউইলা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা চালানোর কথা বলেছেন। তাঁদের ভাষ্য, এল–ফাশেরে মা–বাবার সামনে সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে। মানুষজন শহরটি থেকে পালানোর সময় তাঁদের মারধর করা হচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে, ২৬ অক্টোবর থেকে ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ শহরটি থেকে পালিয়েছেন।
শনিবার ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, এল–ফাশেরের বিপুল মানুষ ‘চরম বিপদের’ মধ্যে রয়েছে। তাদের শহরটি ত্যাগ করতে দিচ্ছে না আরএসএফ ও তাদের সহযোগীরা। সংস্থাটির জরুরি বিভাগের প্রধান মাইকেল ওলিভিয়ার লাচেরিটে বলেন, এল–ফাশের থেকে যাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরা কোথায়? সম্ভাব্য উত্তরটা হলো—তাঁদের হত্যা করা হয়েছে।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরএসএফের হামলায় এল–ফাশেরে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দুই হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, এল–ফাশেরে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
সুদান ‘মহাবিপর্যয়কর পরিস্থিতির’ মধ্যে রয়েছে বলে শনিবার উল্লেখ করেছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়েডফুল। বাহরাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আরএসএফ। এরপরও এমন নৃশংসতার জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। একই সংবাদ সম্মেলনে সুদানের পরিস্থিতি ‘ভয়ংকর’ বলে উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার।
আরও পড়ুনসুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন৭ ঘণ্টা আগে