কারওয়ান বাজারেই ৩০ টাকার পটোল ৭০ টাকা হয়ে যায়, বললেন ক্যাবের সভাপতি
Published: 19th, September 2025 GMT
দেশে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন মূল্য যৌক্তিক নয় এবং বিপণনব্যবস্থা ত্রুটিযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নতুন সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
ক্যাবের এই নতুন সভাপতি বলেন, দেশে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন মূল্য যৌক্তিক নয়। শাকসবজির উৎপাদন খরচ পাশের দেশের চেয়ে বেশি। বিপণনব্যবস্থাও ত্রুটিযুক্ত। ফরিয়া থেকে আড়তদার, আড়তদার থেকে পাইকারি, পাইকারি থেকে খুচরা—এভাবেই পণ্যের দাম বাড়ে।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘কারওয়ান বাজারের উত্তর গেট দিয়ে ৩০ টাকার পটোল প্রবেশ করে সেটি অন্য গেট দিয়ে পাইকারি বা খুচরা বাজারে যখন আসে, তখন দাম বেড়ে হয় ৭০ টাকা। আমি যে সবজি ১০০ টাকায় কিনছি, সেটির ৮০ টাকা যদি কৃষক পেতেন, তাহলেও আমার-আপনার কষ্ট হতো না। কিন্তু কৃষক তো পাচ্ছেন ৩০ টাকা। মাঝখানে আমি ভোক্তা সেই জিনিস ১০০ টাকায় কিনছি। ওই ৭০ টাকা তো পথে পথে চলে যাচ্ছে।’ উৎপাদন খরচ হ্রাস ও বিপণনব্যবস্থা আধুনিক না করতে পারার কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের পাশে শাকসবজি বিক্রির একটি হাব চালু হতে যাচ্ছে বলে জানান ক্যাব সভাপতি। বলেন, ‘আগামী ১ অক্টোবর ৩০০ ফুট সড়কের পাশে একটি হাব চালু হতে যাচ্ছে। কারওয়ান বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে চাই আমরা। সেখানে কৃষকেরা সরাসরি তাঁদের সবজি বিক্রি করবেন। তাঁদের কাছে থেকে পণ্য কিনে নিয়ে সরাসরি বাজারে চলে যাবেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ২০ টাকা বা তারও কমে আপনি সেখান থেকে সবজি কিনতে পারবেন।’
ক্যাবের কার্যক্রম অবহিতকরণ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন ক্যাব সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। আজ শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক, হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, প্রচার সম্পাদক মুসা মিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহা.
প্রশ্নে জবাবে ক্যাব সভাপতি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙাটা আসলেই চ্যালেঞ্জ। চার-পাঁচটি করপোরেট গ্রুপের পাশাপাশি প্রচুর অদৃশ্য হাত রয়েছে। এখানে শত শত, এমনকি হাজার হাজার লোক জড়িত হয়ে যাচ্ছেন। আমরা যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারি, তাহলে এই ফরিয়া, দালাল ও আড়তদার থেকে বের হতে পারব না। বাজারে শৃঙ্খলা আসবে না।’
কৃষিঋণ নিয়েও কথা বলেন এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘কৃষিঋণ প্রান্তিক কৃষকের কাছে কতটুকু পৌঁছায়, তা নিয়ে অনুসন্ধান হওয়া দরকার। রংপুরে আমরা দেখেছি, একটি সিন্ডিকেট করে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়। ফলে প্রকৃত কৃষকেরা এই ঋণ পান না; বরং তারা উচ্চ সুদে দাদন নিচ্ছেন।’ কৃষকেরা ন্যায্যমূল্যে সারও পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেন ক্যাব সভাপতি।
আগামী এক বছরে ক্যাব কী ধরনের কাজ করবে, সেটি জানাতেই মূলত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ক্যাবের নতুন সভাপতি বলেন, ‘ক্যাবের নিষ্ক্রিয় কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন ও সক্রিয় করা হবে। ক্যাবকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা সরকারকে দেখিয়ে দেব, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে কোথায় কোথায় আইনের প্রয়োগ সম্ভব।’ ঠিক এক বছর পর ক্যাব কত দূর এগোল, সেটির জবাবদিহির প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
খাদ্যপণ্য ছাড়াও স্বাস্থ্য, পর্যটন, টেলিকমসহ বিভিন্ন খাতের ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করবে ক্যাব—এমনটা জানান এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগ থাকার পরও ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আবার সিটি করপোরেশনকে আমরা কর দিচ্ছি। তারপরও মশার উৎপাত কমছে না। এই যে ডেঙ্গুর হচ্ছে, তার জন্য সিটি করপোরেশন দায়ী। জনমত তৈরি করে আমরা দেখিয়ে দেব, এ অনিয়মগুলো দূর করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা সরকারের মুখপাত্র হব না, সহযোগী হিসেবে কাজ করব।’
ক্যাবের সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গত ৩০ আগস্ট শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে থেকে অবসরে যান। এর আগে তিনি আড়াই বছর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর ৯ সেপ্টেম্বর তিনি ক্যাবের সভাপতি হন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ সরক র যপণ য র উৎপ
এছাড়াও পড়ুন:
কারওয়ান বাজারেই ৩০ টাকার পটোল ৭০ টাকা হয়ে যায়, বললেন ক্যাবের সভাপতি
দেশে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন মূল্য যৌক্তিক নয় এবং বিপণনব্যবস্থা ত্রুটিযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নতুন সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
ক্যাবের এই নতুন সভাপতি বলেন, দেশে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন মূল্য যৌক্তিক নয়। শাকসবজির উৎপাদন খরচ পাশের দেশের চেয়ে বেশি। বিপণনব্যবস্থাও ত্রুটিযুক্ত। ফরিয়া থেকে আড়তদার, আড়তদার থেকে পাইকারি, পাইকারি থেকে খুচরা—এভাবেই পণ্যের দাম বাড়ে।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘কারওয়ান বাজারের উত্তর গেট দিয়ে ৩০ টাকার পটোল প্রবেশ করে সেটি অন্য গেট দিয়ে পাইকারি বা খুচরা বাজারে যখন আসে, তখন দাম বেড়ে হয় ৭০ টাকা। আমি যে সবজি ১০০ টাকায় কিনছি, সেটির ৮০ টাকা যদি কৃষক পেতেন, তাহলেও আমার-আপনার কষ্ট হতো না। কিন্তু কৃষক তো পাচ্ছেন ৩০ টাকা। মাঝখানে আমি ভোক্তা সেই জিনিস ১০০ টাকায় কিনছি। ওই ৭০ টাকা তো পথে পথে চলে যাচ্ছে।’ উৎপাদন খরচ হ্রাস ও বিপণনব্যবস্থা আধুনিক না করতে পারার কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের পাশে শাকসবজি বিক্রির একটি হাব চালু হতে যাচ্ছে বলে জানান ক্যাব সভাপতি। বলেন, ‘আগামী ১ অক্টোবর ৩০০ ফুট সড়কের পাশে একটি হাব চালু হতে যাচ্ছে। কারওয়ান বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে চাই আমরা। সেখানে কৃষকেরা সরাসরি তাঁদের সবজি বিক্রি করবেন। তাঁদের কাছে থেকে পণ্য কিনে নিয়ে সরাসরি বাজারে চলে যাবেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ২০ টাকা বা তারও কমে আপনি সেখান থেকে সবজি কিনতে পারবেন।’
ক্যাবের কার্যক্রম অবহিতকরণ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন ক্যাব সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। আজ শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক, হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, প্রচার সম্পাদক মুসা মিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহা. শওকত আলী খান।
প্রশ্নে জবাবে ক্যাব সভাপতি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙাটা আসলেই চ্যালেঞ্জ। চার-পাঁচটি করপোরেট গ্রুপের পাশাপাশি প্রচুর অদৃশ্য হাত রয়েছে। এখানে শত শত, এমনকি হাজার হাজার লোক জড়িত হয়ে যাচ্ছেন। আমরা যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারি, তাহলে এই ফরিয়া, দালাল ও আড়তদার থেকে বের হতে পারব না। বাজারে শৃঙ্খলা আসবে না।’
কৃষিঋণ নিয়েও কথা বলেন এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘কৃষিঋণ প্রান্তিক কৃষকের কাছে কতটুকু পৌঁছায়, তা নিয়ে অনুসন্ধান হওয়া দরকার। রংপুরে আমরা দেখেছি, একটি সিন্ডিকেট করে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়। ফলে প্রকৃত কৃষকেরা এই ঋণ পান না; বরং তারা উচ্চ সুদে দাদন নিচ্ছেন।’ কৃষকেরা ন্যায্যমূল্যে সারও পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেন ক্যাব সভাপতি।
আগামী এক বছরে ক্যাব কী ধরনের কাজ করবে, সেটি জানাতেই মূলত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ক্যাবের নতুন সভাপতি বলেন, ‘ক্যাবের নিষ্ক্রিয় কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন ও সক্রিয় করা হবে। ক্যাবকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা সরকারকে দেখিয়ে দেব, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে কোথায় কোথায় আইনের প্রয়োগ সম্ভব।’ ঠিক এক বছর পর ক্যাব কত দূর এগোল, সেটির জবাবদিহির প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
খাদ্যপণ্য ছাড়াও স্বাস্থ্য, পর্যটন, টেলিকমসহ বিভিন্ন খাতের ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করবে ক্যাব—এমনটা জানান এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগ থাকার পরও ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আবার সিটি করপোরেশনকে আমরা কর দিচ্ছি। তারপরও মশার উৎপাত কমছে না। এই যে ডেঙ্গুর হচ্ছে, তার জন্য সিটি করপোরেশন দায়ী। জনমত তৈরি করে আমরা দেখিয়ে দেব, এ অনিয়মগুলো দূর করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা সরকারের মুখপাত্র হব না, সহযোগী হিসেবে কাজ করব।’
ক্যাবের সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গত ৩০ আগস্ট শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে থেকে অবসরে যান। এর আগে তিনি আড়াই বছর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর ৯ সেপ্টেম্বর তিনি ক্যাবের সভাপতি হন।