চীনের সহযোগিতায় বিদ্রোহীদের এলাকা পুনর্দখল করছে মিয়ানমারের জান্তা
Published: 23rd, October 2025 GMT
গত বছর চীনা সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের বাকি অংশে প্রধান বাণিজ্য রুটে অবস্থিত কিয়াউকমে শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল বিদ্রোহীরা। কিয়াউকমে এশিয়ান হাইওয়ে ১৪-এর উপর অবস্থিত, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা রোড নামে বেশি পরিচিত ছিল। তাআং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই শহর দখলকে অনেকেই বিরোধীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হিসেবে দেখেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিল, বিদ্রোহীদের এই অগ্রগতিতে ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার মনোবল ভেঙে পড়তে পারে।
তবে চলতি মাসে কিয়াউকমে পুনরুদ্ধার করতে সেনাবাহিনীর মাত্র তিন সপ্তাহ সময় লেগেছে। এই ছোট্ট পাহাড়ি শহরটির পুনর্দখল একটি স্পষ্ট উদাহরণ যে মিয়ানমারের সামরিক ভারসাম্য এখন জান্তার পক্ষে কতটা সরে গেছে।
এর জন্য কিয়াউকমেকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। টিএনএলএ-র হাতে থাকাকালে সেনাবাহিনীর দৈনিক বিমান হামলায় শহরের একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলেছে, আর শহরের বাইরে বিদ্রোহীদের অবস্থানে কামান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। বেশিরভাগ জনসংখ্যা শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে, যদিও সেনাবাহিনী এখন শহরটি পুনরুদ্ধার করেছে, তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে।
টিএনএলএ-এর মুখপাত্র টার পার্ন লা চলতি মাসের শুরুতে বিবিসিকে বলেছিলেন, কিয়াউকমে এবং সিপাওতে প্রতিদিনই তীব্র লড়াই চলছে। চলতি বছর সেনাবাহিনীর আরো সেনা, আরো ভারী অস্ত্র এবং আরো বিমান শক্তি রয়েছে। সিপাওকে রক্ষা করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”
বিবিসি তার সাথে কথা বলার পর থেকে জান্তার বাহিনী সিপাও পুনরুদ্ধার করেছে, যা গত বছর টিএনএলএ-এর দখল করা শেষ শহর ছিল।
এই শহরগুলোর পতন মূলত জান্তা সরকারের প্রতি চীনের সমর্থনের কারণেই হয়েছে। কারণ চীন ডিসেম্বরে জান্তার নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে। এই পরিকল্পনার ব্যাপক নিন্দা করা হয়েছে। কারণ এতে অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যারা গত নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানে তাদের সরকার উৎখাত হয়েছিল এবং মিয়ানমারের বেশিরভাগ অংশ গৃহযুদ্ধের অবস্থায় রয়েছে।
এই মুহূর্তে সামরিক বাহিনী যতটা সম্ভব হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে, যাতে এই অঞ্চলগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সফলতা পেতে জান্তা চীন থেকে হাজার হাজার নিজস্ব ড্রোন কিনেছে এবং তাদের অগ্রবর্তী ইউনিটগুলোকে কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে হয় তা প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
সামরিক জান্তা ধীর এবং সহজেই উড়তে পারে এমন মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডারও ব্যবহার করছে, যা হালকাভাবে সুরক্ষিত এলাকার উপর দিয়ে উড়তে পারে এবং নির্ভুলতার সাথে বোমা ফেলতে পারে। তারা চীনা এবং রাশিয়ান সরবরাহিত বিমান দিয়ে নিরলসভাবে বোমাবর্ষণ করছে, যার ফলে মিয়ানমারে চলতি বছর বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, তবে মোট সংখ্যা সম্ভবত আরো বেশি।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বন্য হাতিকে ‘মামা’ ডাকলে আসলেই কি তারা ক্ষতি করে না
রাত তখন সাড়ে ১০টা। বন অফিসজুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার। পাহাড় থেকে ১৫–২০টি বন্য হাতির পাল নিঃশব্দে এগিয়ে আসে তাওয়াকুচি বিট অফিসের সামনে থাকা বিশাল কাঁঠালগাছের নিচে।
সেই অফিসে ছিলেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী তাওয়াকুচি বিট কর্মকর্তা আবদুল বারী। পাশে একটি কক্ষে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। অন্য কক্ষে থাকা দুই কর্মী ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তাঁকে খবর দেন, ‘স্যার, হাতির পাল অফিস ঘেঁষে এসে গেছে।’
আবদুল বারী এক হাতে দুনলা বন্দুক, অন্য হাতে মোটরসাইকেলে স্টার্ট দেন। হেডলাইটের আলো গিয়ে পড়ে হাতির শরীরে। সেই মুহূর্তে ভয়ে কাঁপা কণ্ঠে বারী বলেন, ‘মামারা, তোমাদের কেউ ক্ষতি না করলে তোমরাও কারও ক্ষতি করো না। যদি কাঁঠাল খাইতে চাও, খাইয়া চলে যাইও।’
ঠিক সেই সময় গাছের উঁচু কাঁঠালে শুঁড় তুলছিল এক বড় হাতি। আলো, শব্দ ও অনুনয়ের কথা—সব যেন একসঙ্গে গিয়ে লাগে তাদের অনুভূতিতে। হাতিরা কাঁঠাল না ছুঁয়েই ধীরে ধীরে বনের দিকে ফিরে যেতে শুরু করে।
২০১৫ সালের সেই রাতের কথা মনে পড়লে এখনো রোমাঞ্চিত হন আবদুল বারী। বর্তমানে তিনি নালিতাবাড়ীর গোপালপুর বিট কার্যালয়ে কর্মরত আছেন।
শেরপুরের পাহাড়ে বসবাসকারী গারো সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠের দাবি, হাতিকে ‘মামা’ বা ‘বাবু’ সম্বোধন করলে হাতি সাধারণত উত্তেজিত হয় না। আক্রমণাত্মক আচরণ করে না।
মধুটিলা গ্রামের দিনা মারাক (৫৫) বলেন, ‘হাতিরে মামা কইলে ক্ষতি করে না। আমরা ছোটবেলা থাইকাই শুনছি, হাতিরে হাতি কইলে রাগ করে। তাই সম্মান দিয়া আমরা মামা ডাকি।’
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে ভারতের মেঘালয়ের পিক পাহাড় থেকে ২০–২৫টি বন্য হাতি শেরপুর সীমান্তে ঢোকে। এখন সেই সংখ্যা শতাধিক। বছরজুড়ে খাবারের সন্ধানে তারা শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ীসহ ময়মনসিংহ ও জামালপুরের পাহাড়ঘেঁষা জনপদে ঘুরে বেড়ায়। লোকালয়ে ঢুকলে পটকা, মশাল ও হইচই করে তাড়ানোর চেষ্টা। এতেই বেশির ভাগ সংঘাতের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুনশেরপুরে বন্য হাতির হানা, তিন দিনে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ একর জমির ধান০৮ অক্টোবর ২০২৫বিশপনগরের বাসিন্দা কুবির মারাক (৬৭) প্রতিবছরই হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব দেখেন। তিনি বলেন, ‘এই জঙ্গল তো হাতি–পশুপাখির। খাবারের লাইগা হাতিরা নিচে নাইমা আসে। তাদেরে মামা বা বাবু কইয়া অনুরোধ করলে, হাতি কথা রাহে। বনে ফিইরা যায়। এ রহম মেলা ঘটনা দেখছি।’
ঢাকা আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আবদুল মোতালেব বলেন, ‘হাতির আচরণ মানুষের মতোই। আমরা কাউকে বিনয়ের সঙ্গে ডাকলে যেমন সে ইতিবাচক সাড়া দেয়, হাতিও তেমন অনুভব করতে পারে। “মামা” বলে অনুনয় করলে হাতি সেটা বুঝে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে শাবক সঙ্গে থাকলে কোনো অনুরোধই কাজে দেয় না।’
আরও পড়ুনবুনো হাতিরা এখন কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কবলে, প্রাণ ও ফসল ঝুঁকিতে১৪ নভেম্বর ২০২৫বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান বলেন, হাতির চোখ ছোট; কিন্তু শ্রবণ ও ঘ্রাণশক্তি অসাধারণ। তারা মনে রাখতে পারে, কে কোথায় কখন গালি দিয়েছে। ‘মামা’ শব্দের মানে না বুঝলেও স্বরের ভঙ্গি ও আচরণ থেকে বোঝে—এ লোক ক্ষতি করবে না। কিন্তু একই সঙ্গে যদি কেউ ‘মামা’ বলে ঢিল ছোড়ে, হাতি তখনই বুঝে যায়, এই অনুনয় ভুয়া।
আরও পড়ুননদীতে নেমে হাতির সে কী আনন্দ, পাড়ে আসতেই চাচ্ছিল না২৯ অক্টোবর ২০২৫