বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা (পিএফএম) একটি মূল ভূমিকা পালন করে। দেশের অর্থনীতি গত এক দশকে যত দ্রুত এগিয়েছে, তার চেয়েও ধীরে এগিয়েছে অর্থ ব্যবস্থাপনার সংস্কার।

রাষ্ট্রীয় আয় বাড়ছে, কিন্তু সেই টাকা কীভাবে, কোথায় খরচ হচ্ছে, তার স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হিসাব এখনো জনগণের নাগালের বাইরে।

গত তিন দশকে দেশটির দারিদ্র্য হ্রাস, গড়ে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি এবং ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধির মতো উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে।

তবে সরকারি খাতের অদক্ষতা ও স্বচ্ছতার অভাব এই অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ প্রেক্ষাপটে ২০২৫-৩০ পিএফএম প্রস্তাবিত সংস্কার কৌশল একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

এই কৌশল পূর্ববর্তী উদ্যোগগুলো (২০০৭-১২ এবং ২০১৬-২১) থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে প্রযুক্তিগত সংস্কারের বাইরে গিয়ে নীতিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক মাত্রা সমন্বিত করেছে।

তবে লক্ষ্য অর্জনের জন্য এর বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার, ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন এবং একটি বিশদ পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা কাঠামোর অভাব রয়েছে, যা এর কার্যকারিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।

অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা আরও স্পষ্ট হয়।

আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলের সংস্কার ও আর্থিক স্বচ্ছতা কত দূর১৯ আগস্ট ২০২৫

প্রস্তাবিত পিএফএম সংস্কার কৌশল ২০২৫-৩০ কৌশলটি ছয়টি আন্তনির্ভর লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে কর আদায় বৃদ্ধি, ঋণ ব্যবস্থাপনা, বাজেটের কার্যকরিতা ও জলবায়ু-সমর্থিত বাজেটিং।

২০২৪ সালের নভেম্বরে এই কৌশলের জন্য ওয়ার্কশপ এবং এক্সপার্ট আলোচনার মাধ্যমে সীমাবদ্ধতা দূর করার চেষ্টা চলছে।

এটি আইবিএএস++ সিস্টেমের সম্প্রসারণ, লিঙ্গ-সমর্থিত ও যুব বাজেটের মতো ক্রসকাটিং বিষয়গুলো নিয়ে বলা হলেও এই জলবায়ু-সমর্থিত, লিঙ্গ–সমর্থিত বাজেটিংয়ের মতো বিষয়গুলো দৈনন্দিন বাজেট–প্রক্রিয়ায় কার্যকরভাবে কীভাবে যুক্ত হবে, সে সম্পর্কে কৌশলে স্পষ্ট নির্দেশনা অনুপস্থিত।

কৌশলটির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, এটি স্বীকার করে যে পিএফএম সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা অপরিহার্য, কিন্তু সেই সদিচ্ছা কীভাবে বাস্তবায়ন কৌশল বা রোডম্যাপে প্রতিফলিত হবে, তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেওয়া হয়নি।

পিইএফএ (পাবলিক এক্সপেন্ডিচার অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টেবিলিটি) ২০২৩ মূল্যায়ন অনুসারে, পিইএফএ মূল্যায়নে বাংলাদেশের স্কোর এখনো ‘সি প্লাস’–এর নিচে।

নীতিভিত্তিক বাজেটিংয়ে (পিলার ৫) দেশটি ‘বি’ স্কোর অর্জন করলেও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় (পিলার ৩) ‘ডি/সি’ স্কোর প্রকাশ করে দুর্বলতা।

আরও পড়ুনআর্থিক খাতে সংস্কার কখন ও কীভাবে১১ জানুয়ারি ২০২৪

কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশ (২০২৩, ওইসিডি), তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এটি আরও কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এটা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সর্বনিম্ন।

এ তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার গড় কর-জিডিপি অনুপাত ১০ থেকে ১২ শতাংশ। ওইসিডির গ্লোবাল রেভিনিউ স্ট্যাটিসটিকস (২০২৩) অনুযায়ী, মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় কর-জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশের ওপরে থাকে।

কৌশলটি এসব দুর্বলতা দূর করার লক্ষ্য নিয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি ও পর্যাপ্ত সম্পদ ছাড়া এটি কাগজে সীমাবদ্ধ থাকার ঝুঁকি রয়েছে।

কর-জিডিপি অনুপাত কম থাকার পেছনে কর ফাঁকি, অপ্রত্যক্ষ করের ওপর অত্যধিক নির্ভরতা এবং কর প্রশাসনের সীমিত সক্ষমতা প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে।

নতুন কৌশলে কর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও করদাতা সেবা উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হলেও কর বিভাগের আমূল সংস্কার ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে।

আরও পড়ুনআর্থিক সাক্ষরতায় বাংলাদেশ কতদূর এগোল০৩ মার্চ ২০২৫

আমাদের সমস্যা টেকনিক্যাল নয়, রাজনৈতিক। বাজেট তৈরির সময় আমরা যতটা গুরুত্ব দিই বরাদ্দে, ততটা দিই না খরচের দায়বদ্ধতায়। সংসদীয় নজরদারি বা নিরীক্ষার সংস্কৃতি এখনো দুর্বল।

সংস্কারের স্বার্থে শক্তিশালী স্বার্থগোষ্ঠী, বিশেষ করে যারা বাজেটে অদক্ষ ভর্তুকি ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থেকে লাভবান হয়, তাদের বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হবে।

তাই সংস্কার কেবল প্রযুক্তিগত নয়, একটি রাজনৈতিক প্রকল্পও বটে, যার জন্য সর্বস্তরের সমর্থন দরকার।

এ ছাড়া সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি পেশাদার ক্যাডার তৈরি করতে ‘ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিন্যান্স’কে একটি আন্তর্জাতিক মানের কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য তার আইনগত ও আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ শিক্ষা হিসেবে নিতে পারে। ভিয়েতনামে ২০১০-এর দশকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সমর্থনে পিএফএম সংস্কার অর্থ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ভূমিকা জোরদার করেছে।

আরও পড়ুনআর্থিক ব্যবস্থাপনায় ডেটা অ্যানালিটিকস১০ জুন ২০২৪

পিইএফএ ২০২৪ মূল্যায়নে তাদের সামগ্রিক স্কোর ‘বি’ (৪টি ‘এ’, ৮টি ‘বি/বি+’, ৮টি ‘সি+’) এবং কর-জিডিপি অনুপাত ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ (২০২৩, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক), যা বাংলাদেশের দ্বিগুণের বেশি। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এবং ই-প্রকিউরমেন্ট এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

বাংলাদেশের আইবিএএস++ উদ্যোগ ভিয়েতনামের মডেলের অনুরূপ; তবে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি এখানে প্রধান বাধা।

কেনিয়া আফ্রিকার পিএফএম নেতা হিসেবে ২০১০-এর দশকে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করেছে। পিইএফএ ২০২২ মূল্যায়নে তাদের ‘এ’ স্কোর ৩ থেকে ৪-এ এবং ‘বি’ স্কোর ৬ থেকে ৮-এ উন্নীত হয়েছে।

তাদের কর-জিডিপি অনুপাত ১৬ শতাংশ (২০২৩, আইএমএফ), যা বাংলাদেশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

স্টেকহোল্ডার সমন্বয় এবং ই-গভর্ন্যান্স তাদের সাফল্যের ভিত্তি, যদিও দুর্নীতি ও বাজেট সীমার মধ্যে রাখতে তারা সমস্যায় পড়ছে।

ইন্দোনেশিয়ার মতো, বাংলাদেশকে বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারত্ব (পিপিপি) জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশের অ-আনুষ্ঠানিক অর্থনীতি (৪০%) ও দুর্নীতি এই প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২৪-এ বাংলাদেশের অবস্থান (স্কোর: ২৩, অবস্থান: ১৮০টির মধ্যে ১৫১তম) ইঙ্গিত করে যে প্রাতিষ্ঠানিক ও শাসনতান্ত্রিক দুর্বলতা এখনো কতটা গভীরে।

বাংলাদেশের জন্যও দুর্নীতি (সিপিআই ২৪/১০০, ২০২৩) ও বাজেটে শৃঙ্খলার অভাব পরিচিত সমস্যা। কেনিয়ার মতো বাংলাদেশকে সুপ্রিম অডিট ইনস্টিটিউশন (ওসিএজি) শক্তিশালী করতে হবে।

ইন্দোনেশিয়ার পিএফএম সংস্কার ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পিএফএম এমডিটিএফের মাধ্যমে স্টেকহোল্ডার সমন্বয়ে সফল হয়েছে। তাদের পিইএফএ স্কোর ‘বি/সি’ (২০২২) এবং কর-জিডিপি অনুপাত ১১ দশমিক ৮ শতাংশ (২০২৩, সিইসি)।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের তুলনায়—ভারত (১১.

৭%), পাকিস্তান (৯.৩%), শ্রীলঙ্কা (১৩.১%)—বাংলাদেশের ৭ দশমিক ৩ শতাংশ কর আদায় স্থানীয় অর্থায়নের অক্ষমতা প্রকাশ করে।

ইন্দোনেশিয়ার মতো, বাংলাদেশকে বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারত্ব (পিপিপি) জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশের অ-আনুষ্ঠানিক অর্থনীতি (৪০%) ও দুর্নীতি এই প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২৪-এ বাংলাদেশের অবস্থান (স্কোর: ২৩, অবস্থান: ১৮০টির মধ্যে ১৫১তম) ইঙ্গিত করে যে প্রাতিষ্ঠানিক ও শাসনতান্ত্রিক দুর্বলতা এখনো কতটা গভীরে।

কিন্তু এই তিন দেশের অভিজ্ঞতা এককথায় শেখায়, সংস্কারের মূল শর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দুর্নীতি দমন, প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা ও নাগরিক আস্থা।

বিশ্বব্যাপী ১২০টি দেশের পিইএফএ মূল্যায়নে দেখা গেছে, যারা বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে নিরীক্ষাকে সংযুক্ত করেছে, তাদের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি গড়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। বাংলাদেশ সেই পথে এখনো হাঁটতে পারেনি।

রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ এর অদক্ষতা ও দুর্নীতিতে এই দেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ দশমিক ৫ থেকে ২ শতাংশ জিডিপি।

কৌশলটি ৩১টি স্টেকহোল্ডার সম্মেলন ও রাজনৈতিক অর্থনীতির বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠলেও বাস্তবায়নের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা পিএফএম সংস্কারকে প্রভাবিত করেছে, যা আইএমএফের প্রোগ্রামে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করেছে।

তবে পিএফএম অ্যাকশন প্ল্যান ২০২৪-২৮–এর মাধ্যমে আর্থিক ডিসিপ্লিন এবং রিসোর্স অ্যালোকেশনকে জোরদার করা হচ্ছে। নেতৃত্বের পরিবর্তন, প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের অভাব ও সংস্কার-ক্লান্তি পূর্ববর্তী কৌশলগুলোর ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল।

ভিয়েতনাম ও কেনিয়ার মতো সাফল্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্কার সেল গঠন করতে হবে, যা স্থায়ী নেতৃত্ব প্রদান করবে।

এ ছাড়া পর্যবেক্ষণ-মূল্যায়ন ফ্রেমওয়ার্ককে শক্তিশালী করে কেপিআই-ভিত্তিক ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড চালু করা অপরিহার্য। নিরীক্ষা কমিশনকে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন ও কার্যকর করতে হবে।

সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। ওপেন বাজেট সার্ভেতে স্কোর উন্নয়নের লক্ষ্যে সব বাজেট ডকুমেন্ট জনগণের জন্য অনলাইনে প্রকাশের বিধান রাখতে হবে।

২০২৫-৩০ কৌশলটি বাংলাদেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের সুযোগ তৈরি করবে। তবে অর্থমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্ব ও সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার, যাতে আমলাতান্ত্রিক ও কায়েমি স্বার্থের বাধা অতিক্রম করতে পারে।

এ ছাড়া পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ছাড়া এটি কেবল কাগজের পরিকল্পনা হয়ে থাকবে। এখন সময় এসেছে, আশার আলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার।

বাংলাদেশ এখন আইএমএফ প্রোগ্রাম ও রাজস্ব সংস্কারের যুগপৎ চাপে আছে। এই মুহূর্তে কার্যকর পিএফএম সংস্কার কেবল উন্নয়ন কৌশল নয়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত।

প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক শ্রেণি, আমলা ও নাগরিক সমাজ—সবাই মিলে কি এই আলোর পথ দেখাতে সত্যিই প্রস্তুত?

[সূত্র: পিইএফএ রিপোর্ট ২০২১-২৪, ওইসিডি রেভিনিউ স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ডেটা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সিপি আই ইনডেক্স ২০২৪ এবং সরকারি পিএফএম অ্যাকশন প্ল্যান ২০২৪-২৮, ড্রাফট পিএফএম রিফরম স্ট্র্যাটেজি ২০২৫-৩০, বাংলাদেশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বার্ষিক আয় অনুমান প্রস্তাব (২০২৪-২৫)]

সুবাইল বিন আলম, অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক; সদস্য, বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক ও নাগরিক কোয়ালিশন

ই–মেইল: [email protected]

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প এফএম স স ক র র প এফএম ২০২৫ ৩০ র জন ত ক আর থ ক স প রস ত ব কর জ ড প দ র বলত দশম ক ৫ সমর থ ত অবস থ ন দ র কর অন প ত য় র মত স ফল য র জন য দ র বল লক ষ য সমন ব র ওপর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হরিয়ানার ৫০ তরুণকে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরিয়ে দেশে পাঠানো হলো

যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত জীবনের আশায় জমি বিক্রি, ঘর বন্ধক রেখে এবং এজেন্টদের বিশ্বাস করে তাঁরা দেশ ছেড়েছিলেন। তাঁদের সেই আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। অবৈধভাবে বসবাস করা এসব ভারতীয় নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল রোববার ভোরে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৫০ তরুণকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। এ সময় তাঁদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি ছিল।

ফেরত আসা এসব তরুণের অনেকের দাবি, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপে ধরা পড়ার পর ঋণের বোঝায় ডুবে গেছেন তাঁরা।

হরিয়ানার কর্মকর্তাদের মতে, ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জন কারনালের, ১৪ জন কাইথালের, ৫ জন কুরুক্ষেত্রের ও ১ জন পানিপথের বাসিন্দা। তাঁরা সবাই দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার মধ্য দিয়ে মানব পাচারের ‘ডানকি রুট’ হিসেবে পরিচিত পথ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ সেখানে কয়েক বছর ছিলেন, আবার কেউ মাত্র কয়েক মাস। ফেরত পাঠানোর আগে তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে কারাভোগও করতে হয়েছিল।

ফেরত আসা ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে ছিলেন কারনালের রাহরার অঙ্কুর সিং (২৬)। তিনি বলেন, ২০২২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে তাঁর ২৯ লাখ রুপি খরচ হয়েছিল। ‘দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ’ হয়ে যেতে তাঁর এই যাত্রায় ‘প্রায় চার মাস’ লেগেছিল।

অঙ্কুর সিং দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘আমি “ডানকি রুট” হয়ে গিয়েছিলাম। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব ঠিকঠাক চলছিল। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি মদের দোকানে কাজ করার সময় আমি ধরা পড়ি।’

অঙ্কুর বলেন, এরপর তাঁকে একটি আটককেন্দ্রে রাখা হয়। ২৪ অক্টোবর ভারতে ফেরার জন্য তাঁদের উড়োজাহাজে উঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের এই ফ্লাইটে হরিয়ানার প্রায় ৫০ জন ছাড়াও পাঞ্জাব, হায়দরাবাদ, গুজরাট ও গোয়ার তরুণেরাও ছিলেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৫০০ ভারতীয় নাগরিককে আটটি সামরিক, চার্টার্ড এবং বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে ফেরত পাঠানো বা প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং গুজরাটের মানুষ।

আরও পড়ুনজানুয়ারি থেকে ১ হাজারের বেশি ভারতীয়কে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৩০ মে ২০২৫

গতকাল রোববার ফেরত পাঠানো দলে ছিলেন কারনালের ঘোরাউন্দা ব্লকের পোপরা গ্রামের হুসন (২১)। তিন বোনের একমাত্র ভাই হুসন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হন। তাঁর কাকা, সুরেন্দর সিং জানান, এজেন্টদের ৪৫ লাখ রুপি পরিশোধ করতে পরিবারকে তিন একর জমি বিক্রি করতে হয়েছিল।

সুরেন্দর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই হুসন ধরা পড়ে। এটা আমাদের জন্য এক বিশাল ধাক্কা ছিল। তাঁরা রোববার রাত ১টার পর দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাঁদের হাতে হাতকড়া এবং পায়ে বেড়ি পরানো ছিল।’

কারনালের কালসী গ্রামের হরিশ এসসি (তফসিলি জাতি) শ্রমিক পরিবার থেকে এসেছেন। তাঁর ভাই রিঙ্কু বলেন, ‘তিনি ২০২৩ সালে কর্মীভিসায় কানাডায় গিয়েছিলেন। প্রায় এক বছর সেখানে থাকার পর গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখানে একটি দোকানে কাজ শুরু করেন। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ধরা পড়েন।

কাইথালের তারাগড় গ্রামের নরেশ কুমার এক বছরের বেশি সময় আটক থাকার পর দেশে ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘উড়োজাহাজে উঠানোর সময় আমাদের হাতকড়া পরানো হয়েছিল। তবে তাঁরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। ফেরত পাঠানোর আগে আমি সেখানে ১৪ মাস কারাগারে ছিলাম।’

আরও পড়ুন৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পরও বিতাড়িত হলেন ৭৩ বছর বয়সী ভারতীয় নারী২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নরেশ আরও বলেন, ‘আমি ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি দিল্লি থেকে রওনা হয়ে ব্রাজিল হয়ে ৬৬ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাই। আমাদের এজেন্টরা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারা ৫৭ লাখ ৫০ হাজার রুপি নিয়েছিল। প্রথমে তারা ৪২ লাখ টাকায় পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পরে আরও টাকা চাইতে থাকে। আমি এক একরের বেশি জমি বিক্রি করেছি। সুদে ৬ লাখ টাকা ধার করেছি, আমার ভাই ৬ লাখ ৫০ হাজার রুপির জমি বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া আমাদের এক আত্মীয় আরও ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন।’

কাইথালের পুলিশ সুপার উপাসনা বলেন, ওই জেলার ১৪ জন ফেরত আসা ব্যক্তিকে রোববার বেলা ২টার দিকে দিল্লি থেকে নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, তাঁরা সবাই ‘ডানকি রুট’ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন আবগারি মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছিলেন। একাধিকবার আদালতের শুনানিতে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

জিণ্ডর এসপি কুলদীপ সিং নিশ্চিত করেছেন, তাঁর জেলা থেকে তিনজন ফেরত আসা ব্যক্তি ছিলেন। তাঁদেরকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এসপি সিং সতর্ক করে বলেন, ‘ডানকি রুটে’ বিদেশে যাওয়া গুরুতর অপরাধ। এটি পরিবারকে আর্থিকভাবে নিঃস্ব করে এবং জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। পথে অনেকেই দুর্ব্যবহার, প্রতারণা, এমনকি মৃত্যুর মুখে পড়েন।

আরও পড়ুন২০৫ অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিথ্যা ধর্ষণ মামলা করায় বাদীর ৫ বছর কারাদণ্ড
  • আল নাসরের বিদায়, ১৩টি টুর্নামেন্টে খেলেও শিরোপাহীন রোনালদো
  • নয় মাসে বড় লোকসানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
  • গাজায় আবার তীব্র হামলা চালানোর নির্দেশ নেতানিয়াহুর
  • ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নয় মাসে মুনাফা বেড়েছে ৮.১৬ শতাংশ
  • রবি আজিয়াটার নয় মাসে মুনাফা বেড়েছে ৫৪.৫৪ শতাংশ
  • টেস্ট অধিনায়ক হচ্ছেন লিটন!
  • যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হরিয়ানার ৫০ তরুণকে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরিয়ে দেশে পাঠানো হলো
  • আমিরাতের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানকে সৌদি আরবে দীপাবলি উদ্‌যাপন বলে প্রচার