এক মাস বন্ধ থাকার পর তেল সরবরাহ আজ শুরু
Published: 29th, October 2025 GMT
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইন প্রকল্প উদ্বোধনের এক মাসের মধ্যেই ধরা পড়েছে তেলের হিসাবে গরমিল, মজুতের জালিয়াতি ও প্রযুক্তিগত ত্রুটি। এ কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে তেল সরবরাহ বন্ধ ছিল। অবশেষে আজ বুধবার ৫০ লাখ লিটার তেল সরবরাহের কথা রয়েছে।
বিপিসির একাধিক সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পাইপলাইনে তেল পাঠানো বন্ধ। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড পাঠায় ৩৯ লাখ ৯০ হাজার ৯০৭ লিটার তেল। এর আগে ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর মেঘনা পেট্রোলিয়াম পাঠায় ৭০ লাখ লিটার এবং ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর আরও ৭৫ লাখ লিটার। যমুনা অয়েল কোম্পানি ১৫ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঠায় ১ কোটি ৮ লাখ লিটার ডিজেল।
এক মাসের বেশি সময় তেল সরবরাহ বন্ধের পেছনে মূল কারণ হিসাবে তেল ঘাটতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোয় পৌঁছানোর পর পদ্মা ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের অন্তত ৫০ হাজার লিটার তেল কম পাওয়া গেছে। তবে সবচেয়ে বড় ঘাটতি ধরা পড়ে যমুনা অয়েল কোম্পানির ক্ষেত্রে। ফতুল্লা ডিপোয় দুই দফায় মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার লিটার ডিজেল কম পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার পর পাইপলাইনে সরবরাহ বন্ধ করা হয়।
কিছু ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। তেলের হিসাবে গরমিলও পাওয়া গেছে। কয়েকটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ত্রুটি ঠিক হলে পুরোদমে সরবরাহ শুরু হবে।এ কে এম আজাদুর রহমান, পরিচালক (অপারেশনস), বিপিসিজানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (অপারেশনস) এ কে এম আজাদুর রহমান বলেন, কিছু ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে। তেলের হিসাবে গরমিলও পাওয়া গেছে। কয়েকটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ত্রুটি ঠিক হলে পুরোদমে সরবরাহ শুরু হবে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তেলের হিসাবে গরমিল, ট্যাংক মজুতের সক্ষমতা জালিয়াতি ও পরিমাপে ত্রুটি ধরা পড়েছে। এসব কারণে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সরবরাহ বন্ধ থাকায় তেল পুরোনো পদ্ধতিতেই—নদী, রেল ও সড়কপথে ঢাকায় আনা হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে, অপচয় ও চুরির ঝুঁকি ফিরেছে পুরোনো অবস্থায়।
২০১৬ সালে নেওয়া এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। ২২ জুন পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ শুরু হয়। এরপর ১৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সেনাবাহিনী, কিন্তু এখনো বিপিসি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্প বুঝে নেয়নি। অর্থাৎ সম্পূর্ণ হস্তান্তরের আগেই বিপুল ব্যয়ে নির্মিত পাইপলাইন চালু করা হয়। ফলে সরবরাহ শুরু হলে ধরা পড়ে গলদ।
দেশে বছরে গড়ে ৬৫ লাখ টন তেলের চাহিদা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরবরাহ ছিল ৬৮ লাখ টন, যার ৬৩ শতাংশ ডিজেল। পাইপলাইন চালু থাকলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বছরে ২৭ লাখ টন বা ৩১৭ কোটি লিটার ডিজেল সরবরাহ করা যাবে।
দেশে বছরে গড়ে ৬৫ লাখ টন তেলের চাহিদা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরবরাহ ছিল ৬৮ লাখ টন, যার ৬৩ শতাংশ ডিজেল। পাইপলাইন চালু থাকলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বছরে ২৭ লাখ টন বা ৩১৭ কোটি লিটার ডিজেল সরবরাহ করা যাবে।বিপিসি সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগেই ব্যবহৃত হয় দেশের ৪০ শতাংশ তেল। এখন পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের ডিপো, সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় পৌঁছায়। মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ লাগে। বছরে পরিবহন বাবদ খরচ হয় ২০০ কোটি টাকার মতো। এই ব্যয় কমাতে, চুরি ও অপচয় ঠেকাতে, এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সরবরাহ গড়তে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরবর হ শ র ত ল সরবর হ স প ট ম বর প রকল প ল খ টন এক ম স গরম ল
এছাড়াও পড়ুন:
টাইলসের বেচাবিক্রিতে মন্দাভাব
গ্রেটওয়াল সিরামিকসের গাজীপুরে কারখানায় মাসে টাইলসের উৎপাদন সক্ষমতা ১ কোটি বর্গফুট। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চাহিদা কমে যাওয়ায় কারখানার পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে দুটি বন্ধ। তারপরও যেটুকু উৎপাদন হচ্ছে, সেটুকু বিক্রি হচ্ছে না। গুদামে জমছে পণ্য। ফলে মূল্যছাড়ে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গ্রেটওয়াল সিরামিকসের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে টাইলসের বেচাবিক্রিতে মন্দাভাব চলছে। আগে স্বাভাবিক সময়ে আমরা মাসে গড়ে ৯০ লাখ বর্গফুট টাইলস বিক্রি করতাম। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিক্রি অনেক কমে গেছে। গত মাসে টাইলস বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ লাখ বর্গফুট।’
গ্রেটওয়ালের মতো দেশের অধিকাংশ টাইলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। প্রতিষ্ঠানভেদে বিক্রি কমার হার ১৫-৪০ শতাংশ। এই অবস্থায় উৎপাদন কমিয়ে, মূল্যছাড় দিয়ে কোনো রকমে ব্যবসায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে কোম্পানিগুলো। একাধিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা গেলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
সিরামিক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ পুরো নির্মাণ খাতেই বড় ধাক্কা লাগে। মূলত সরকারের উন্নয়নকাজে ধীর গতি আর বেসরকারি আবাসন খাতে মন্দার কারণে নির্মাণ খাতের ব্যবসায় প্রভাব পড়ে। ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে ব্যবসায়ও গতি ফিরে আসবে বলে মনে করেন তাঁরা।
সামগ্রিকভাবে টাইলসের বেচাবিক্রি ১৫-২০ শতাংশ কমেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। মইনুল ইসলাম, সভাপতি, বিসিএমইএজানতে চাইলে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, সামগ্রিকভাবে টাইলসের বেচাবিক্রি ১৫-২০ শতাংশ কমেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিসিএমইএর তথ্যানুযায়ী, দেশের টাইলসের বার্ষিক বাজার প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার। এই চাহিদার ৮৫ শতাংশ দেশীয় কারখানাগুলো সরবরাহ করে থাকে। বর্তমানে ৩১ টাইলস কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
দেশে টাইলস উৎপাদনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি শেলটেক সিরামিকস। ভোলায় তাদের নিজস্ব কারখানায় তিনটি ইউনিটে প্রতিদিন সাড়ে ৪ লাখ বর্গফুট টাইলস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৩০-৪০ শতাংশ কম। বিক্রি কমে যাওয়ায় গুদামে টাইলসের মজুত বাড়ছে।
বিক্রি কমে যাওয়ায় অন্য ব্যবসা থেকে টাকা এনে খরচ চালাতে হচ্ছে। তবে বছরের পর বছর সেটি করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে না।তানভীর আহমেদ, চেয়ারম্যান, শেলটেক সিরামিকসজানতে চাইলে শেলটেক সিরামিকসের চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রি কমে যাওয়ায় অন্য ব্যবসা থেকে টাকা এনে খরচ চালাতে হচ্ছে। তবে বছরের পর বছর সেটি করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না এলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে না। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে যা যা করণীয়, সেসব করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সিরামিক খাতের মূল কাঁচামাল খনিজ মাটি, ক্লে ও খনিজ পদার্থ, ফেলস্পার আমদানি হয়েছে ২২ লাখ ৬২ হাজার টন। তার আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছর আমদানি হয়েছিল ২২ লাখ ৮৭ হাজার টন। তার মানে, গত বছর কাঁচামালের আমদানি কমেছে প্রায় ১ শতাংশ।
মন্দার বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠান ভালোও করেছে। যেমন—টাইলস উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি আকিজ সিরামিক। ময়মনসিংহের ভালুকায় তাদের কারখানায় দিনে ৭৫ হাজার বর্গমিটার টাইলস উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। গত অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি ৩ শতাংশ বেড়েছে বলে জানালেন আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।
অবশ্য সামগ্রিকভাবে টাইলসের বাজার ভালো নয় বলে মন্তব্য করলেন বিসিএমইএর সভাপতি মইনুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস কিনছে না। যদিও আগের চেয়ে পরিস্থিতি ভালো। তবে পূর্ণ সক্ষমতা অনুযায়ী গ্যাস মিলছে না। অনেকেই বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করেছেন। এতে খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া সরকারি প্রকল্পের গতি কমে যাওয়া ও আবাসন খাতের ব্যবসা কমে যাওয়ায় টাইলসে বেচাবিক্রি কমেছে। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার এলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে। বিদেশি বিনিয়োগও আসবে। গ্যাসের জোগানও বাড়বে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’