নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও জারিয়া রুটে পৃথক দুটি লোকাল ট্রেনের চলাচল বন্ধ আছে কয়েক মাস। বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে আসা-যাওয়ার স্বল্প ভাড়ার এসব ট্রেন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ অন্য যাত্রীরা। ট্রেন দুটি চালুর দাবিতে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইঞ্জিনসংকটের কারণে ট্রেন দুটি চালু করা যাচ্ছে না।

নেত্রকোনা রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলা থেকে ঢাকা রুটে ২১০ কিলোমিটার রেলপথ আছে। এর মধ্যে মোহনগঞ্জ-ময়মনসিংহ রেলপথের দূরত্ব ৬৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ওই পথে হাওর এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামের দুটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া একটি লোকাল ও একটি কমিউটার ট্রেনও চালু আছে। লোকাল ডাউন ট্রেনটি প্রতিদিন ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে যথাক্রমে ভোর ৫টা ৪০ এবং বেলা ২টা ১০ মিনিটে মোহনগঞ্জ স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। অন্যদিকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা ও বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মোহনগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় এটি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লোকাল ট্রেনটিতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়াত করেন। গত ৩১ মে থেকে ট্রেনটির চলাচল বন্ধ আছে।

ময়মনসিংহ শহর থেকে লোকাল ট্রেনে করে নিয়মিত মোহনগঞ্জে যান সরকারি চাকরিজীবী সাদিয়া রহমান। তিনি বলেন, এই ট্রেনে কম খরচ ও সময়ের মধ্যে সহজে কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করা যায়। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে ট্রেনটি বন্ধ থাকায় ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

স্কুলশিক্ষক তরিকুল হাসান বলেন, অনেকেই ময়মনসিংহ স্টেশন থেকে পর্যায়ক্রমে শম্ভুগঞ্জ, বিশকা, গৌরীপুর, শ্যামগঞ্জ, হিরণপুর, চল্লিশা, নেত্রকোনার বড় স্টেশন, কোর্ট স্টেশন, ঠাকুরাকোনা, বারহাট্টা, অতিথপুর ও মোহনগঞ্জে সুবিধামতো যাওয়া-আসা করতে পারেন। ট্রেনটি বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

নেত্রকোনার স্টেশনমাস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, লোকাল ট্রেনটির ইঞ্জিনে সমস্যা হওয়ায় চলাচল বন্ধ আছে। ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। ইঞ্জিন মেরামত শেষ হলে আবার চালু হবে। তবে কবে নাগাদ ইঞ্জিন মেরামত শেষ হবে, তা তিনি জানেন না।

অন্যদিকে ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথে চলাচল করা লোকাল ট্রেনটিও প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ আছে। রেলপথটিতে চলাচলকারী যাত্রীরা একইভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন। বন্ধ ট্রেনটি চালুর দাবিতে সপ্তাহখানেক আগে জারিয়া রেলস্টেশন, পূর্বধলা রেলস্টেশন, ময়মনসিংহ স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেন যাত্রীরা।

পূর্বধলা রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ-জারিয়া ৫০ কিলোমিটার রেলপথে একটি কমিউটার ও একটি লোকাল ট্রেন আছে। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ আছে।

পূর্বধলার বাঘবেড় গ্রামের চাকরিজীবী সুমন্ত শর্মা সরকার জানান, ময়মনসিংহ-জারিয়া রুটে অন্য কোনো আন্তনগর ট্রেন চলাচল না করায় শম্ভুগঞ্জ, গৌরীপুর, শ্যামগঞ্জ, পূর্বধলাসহ আটটি স্টেশনে চলাচলকারী যাত্রীদের অন্যতম ভরসা ওই লোকাল ট্রেন। প্রতিদিনই ট্রেনটিতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। এ ট্রেনে করে পূর্বধলা, দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলাসহ পাশের ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। ট্রেনটি বন্ধ থাকায় যাত্রীদের খুবই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

দুর্গাপুরের বাসিন্দা ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী আল নোমান খান বলেন, ‘ট্রেনটিতে জারিয়া থেকে আমরা ময়মনসিংহ গিয়ে ক্লাস করে আবার চলে আসতাম। ট্রেন বন্ধ থাকায় এখন সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লাগছে। আমরা ট্রেনটি নিয়মিত চালুর দাবি জানাই।’

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘মোহনগঞ্জ ও জারিয়া দুটি লোকাল ট্রেনই ইঞ্জিন সংকটের কারণে বন্ধ আছে। ইঞ্জিন পেলে আবার ট্রেনগুলো চালু করতে পারব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ক ল ট র নট বন ধ থ ক য় ম হনগঞ জ ন ত রক ন চ কর জ ব প র বধল ন বল ন সরক র র লপথ

এছাড়াও পড়ুন:

হাদির ওপর গুলিবর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে জন্য সীমান্তে তৎপরতা জোরদার করেছে বিজিবি। ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে চেকপোস্ট স্থাপনসহ বিশেষ টহল, তল্লাশি অভিযান ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে থাকা আততায়ী তাঁকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করেই পালিয়ে যায়। হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর ব্যাপারে তথ্য দিতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি। এ ছাড়া ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আরও পড়ুনওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন কে এই ফয়সাল করিম দাউদ১ ঘণ্টা আগে

আজ শনিবার বিজিবির ৩৯ ব্যাটালিয়ন থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার পরিপেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সদর দপ্তর বিজিবির নির্দেশনা অনুযায়ী ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়নের (৩৯ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন যাতায়াতের পথে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আততায়ী যেন সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিশেষ টহল পরিচালনা করছে। সেই সঙ্গে সীমান্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চলাচল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় জনসাধারণের সহযোগিতার মাধ্যমেও সীমান্তে নজরদারি করা হচ্ছে।

ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান বলেন, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলার আন্তর্জাতিক সীমানা রক্ষায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

বিজিবি একই উদ্যোগ নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে। জেলার সীমান্তবর্তী কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায় যানবাহনে তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে কেউ অবৈধভাবে ভারতে যেতে না পারে, সে জন্য জেলার সরাইল (২৫ বিজিবি) ব্যাটালিয়ন ও সুলতানপুর (৬০ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের সদস্যরা গতকাল রাত থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। আজ দিনভর তাঁরা সীমান্ত এলাকায় টহল ও বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জব্বার আহমেদ জানান, সদর দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্বপূর্ণ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, বিজয়নগর ও হবিগঞ্জের কিছু সীমান্ত এলাকায় টহল কার্যক্রম স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। অবৈধভাবে কেউ সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবে না। সুলতানপুর ব্যাটালিয়নের (৬০ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান জানান, অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার রোধকল্পে বিজিবির সদস্যরা সর্বদা সীমান্তে টহল দেন। সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ত্রাসীদের অবৈধভাবে পারাপার ঠেকাতে বিজিবি বদ্ধপরিকর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে হেলে পড়েছে পাঁচতলা ভবন, আতঙ্কে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা
  • ত্রিশালে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন
  • হাদির ওপর গুলিবর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার
  • পরীক্ষা রেখে শিক্ষকদের আন্দোলন করাটা যুক্তিযুক্ত হয়নি: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
  • গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই পলাতক