জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো.
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।
এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তিনি জবানবন্দিতে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি ‘লেথাল উইপন’ (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার ওই নির্দেশনা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে পেয়েছিলেন তিনি।
রায় ঘোষণার আগে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে।
মামলার বিচার কার্যক্রম
চলতি বছর ১০ জুলাই অভিযোগ (চার্জ) গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকাজ শুরু হয় এবং ২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। গত বছর ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অভিযোগ গঠনের পর থেকে তিন মাস ১৩ দিনের মধ্যে বিচার শেষ হলো।
একনজরে শেখ হাসিনার বিচার
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গত বছরের ১৪ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ করেন শহীদ সিয়ামের বাবা বুলবুল ফকির। এতে প্রথম অভিযোগ ছিল শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, এক থেকে ৯ নম্বর আসামির নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা দেশি এবং আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করে মামলা হিসেবে ট্রাইব্যুনালের ‘কমপ্লেইনার’ রেজিস্টারে নথিভুক্ত করা হয়।
এরপর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি মামুনকে এ মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। আর প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে গত ১ জুন। প্রসিকিউশনের দাখিল করা অভিযোগপত্রটি ছিল ১৩৫ পৃষ্ঠার। এর সঙ্গে আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার বিভিন্ন নথি ও তথ্যপ্রমাণ জমা দেওয়া হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার জানে আলম খান ও মো. আলমগীর।
পাঁচ অভিযোগ
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ এ মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। সেগুলো হলো উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছিল।
ট্রাইব্যুনালে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা
এই মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে। সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গেইটসহ সুপ্রিম কোর্টের প্রবেশ পথে সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের বিপুল উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়াও ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশমুখ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সড়কে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশেপাশে বসানো হয়েছে সাঁজোয়া যান। ঢাকা ছাড়াও আশপাশের তিন জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা/রায়হান/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র তদন ত স স থ ল র তদন ত গত বছর আস ম র বছর র সদস য আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
এটাই ‘শক্তিশালী’ স্কোয়াড, সুযোগ দেখছেন জামাল
২০১৩ সালে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯২ ম্যাচ খেলেছেন জামাল ভূঁইয়া। এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন ৬ ম্যাচ। কিন্তু এই ৬ ম্যাচের কোনোটিতেই জেতেনি বাংলাদেশ। এবার অন্তত সেই গেরো খুলতে চাইছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
জামালের চোখে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্কোয়াড। তাই এবার ভারতকে হারানোর সুযোগও দেখছেন তিনি, ‘আমরা যে অবস্থায় আছি এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্কোয়াড। তাই অবশ্যই আমাদের একটা বড় সুযোগ আছে।’
২০২৫ সালে সাত ম্যাচ খেলে শুধু ভুটানের সঙ্গে জিতেছে বাংলাদেশ। আগামীকাল জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতকে হারিয়ে বছরটা অন্তত জয় দিয়ে শেষ করার প্রত্যাশা জামালের, ‘এটা অনেক আবেগের ম্যাচ, উত্তেজনার ম্যাচ। এই ম্যাচের পর জাতীয় দলের জন্য অনেক লম্বা বিরতি আছে। বছরটা যদি জয় দিয়ে শেষ করতে পারি, তা শুধু আমাদের জন্য নয়, সমর্থক ও আপনাদের জন্যও ইতিবাচক হবে।’
জয় দিয়ে বছর শেষ করতে চান জামাল