‘সুপার’ সাদিয়ার জাদুতে সুপার ওভারে ইংল্যান্ডকে হারালো বাংলাদেশ
Published: 15th, January 2025 GMT
সবশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলা বাংলাদেশ নারী অনূর্ধ্ব-১৯ দল রীতিমত উড়ছে। মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিতব্য নারী অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিজেদেরকে দারুণভাবে ঝালিয়ে নিয়েছে ছোট বাঘিনীরা। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর আজ জয় পেয়েছে আসরের বর্তমান রানার্স-আপ ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও।
নারীদের যেকোন পর্যায়ের কিংবা সংস্করণের ক্রিকেটে এটাই ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম জয় বাংলাদেশের।
দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচটা জিততে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের সামনে সমীকরণটা ছিল একদম সহজ। শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান করতে হতো। উইকেটে ছিলেন ১৫ বলে ২০ রান করা সাদিয়া আক্তার ও ৪ বলে ৮ রান করা হাবিবা ইসলাম পিংকি। তবে এই সহজ সমীকরণ মেলাতে গিয়েই তালগোল পাকিয়ে ফেলে বাংলাদেশ দল। প্রথম বলেই রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাদিয়া।
আরো পড়ুন:
‘তামিম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললে আমার নিজের আত্মবিশ্বাসটাও বাড়ে’
ছোট সীমানা পেরিয়ে ‘আদর্শ ক্রিকেট’ মাঠে চট্টগ্রামের বিপিএল
পরের চার বল থেকে এসেছে মাত্র ২ রান। জিততে হলে শেষ বলে তাই এক রান করতে হতো বাংলাদেশের মেয়েদের। হাবিবা রান আউট হয়ে যাওয়ায় ১১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ অল আউট হয় ১১৩ রানেই। ফলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
বাঁহাতি স্পিনার কোর্টিন কোলম্যানের করা সুপার ওভারে ১১ রান তোলে বাংলাদেশের মেয়েরা। যা আসে মূলত সাদিয়া আক্তারের ৩ বলে অপরাজিত ৮ রানের ইনিংসের সৌজন্যে। ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মারেন এই ব্যাটার।
সেই ১১ রানের মধ্যে প্রতিপক্ষকে বেঁধে রাখার চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের হয়ে সুপার ওভারটি করেন পেসার হাবিবা আক্তার। টানটান উত্তেজনার সেই ওভারের শেষ বলে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৪ রান। প্রিশা তানাওয়ালা ২ রানের বেশি নিতে পারেননি।
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরে বাংলাদেশ রয়েছে গ্রুপ ‘ডি’তে। যেখানে তাদের খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়া, স্কটল্যান্ড ও নেপালের বিপক্ষে। মালয়েশিয়াতে ১৬ দলের বিশ্বকাপ শুরু হবে ১৮ জানুয়ারি, ফাইনাল হবে ২ ফেব্রুয়ারি।
ঢাকা/নাভিদ/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে পুলিশকে ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ পালনে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আসন্ন নির্বাচনকে দেশের জন্য ‘শত বছরের ভিত্তি নির্মাণের’ সুযোগ উল্লেখ করে তিনি এই দায়িত্বকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেন।
আরো পড়ুন:
দেশের সুরক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর ত্যাগ ও নিষ্ঠা দৃষ্টান্তমূলক: প্রধান উপদেষ্টা
এভারকেয়ারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজ নিলেন প্রধান উপদেষ্টা
তিনি বলেন, “ভূমিকম্প হলে আমরা বিল্ডিং কোড মানা হয়েছে কি না তার কথা বলি। এই নির্বাচন আমাদের সমাজের জন্য সেই বিল্ডিং কোড তৈরি করার সুযোগ। এমন একটি কোড তৈরি করতে হবে, যা যত বড় ঝাঁকুনিই আসুক, নড়বে না।”
পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনাদের ওপর যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হোন। জীবনের শেষে যখন আমরা ভাবব, কী করেছি—তখন এটিই প্রথমে আসা উচিত যে, আমরা এই বিল্ডিং কোড তৈরিতে অংশ নিতে পেরেছি।”
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, “আসন্ন নির্বাচন শুধু পাঁচ বছরের একটি প্রচলিত নির্বাচন নয়, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি এবার একটি গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি বলেন, “গণভোট আরো বড় বিষয়—এটা সেই ‘বিল্ডিং কোড’। আমরা যে বিল্ডিং কোড স্থাপন করব, সেটাই আগামী একশ বছর জাতিকে পথ দেখাবে।”
তিনি বলেন, “নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসপিদের পদায়নে দৈবচয়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।”
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এটি সহজভাবে নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বক্তব্য রাখেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম।
আসন্ন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ‘একটি নতুন বাংলাদেশ’ জন্ম নেবে উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, “আমাদের কাজ হবে ধাত্রীদের মতো—একটি নতুন জাতির জন্ম দিতে সহায়তা করা।”
তিনি বলেন, “এই নির্বাচন বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ‘পর্যবেক্ষকরা বাইরে থেকে এসে আমাদের মধ্যে ত্রুটি খুঁজতে চাইবে... কিন্তু আমরা এমন একটি (স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর) নির্বাচন উপহার দেব, যা তারা উদাহরণ হিসেবে বহন করে বহু দেশে আলোচনা করবে।”
“এই নির্বাচন তাদের জন্য একটি স্মরণীয় পরিদর্শন ও অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে,” যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “এটি গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচন। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছিল এবং আমরা যারা সেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত—এই নির্বাচন তাদের আদর্শ ও স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম।”
“যে স্বপ্নের জন্য তারা জীবন দিয়েছে, সে স্বপ্ন আমরা এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিদিন ভাবতে হবে—আজ আমার করণীয় কী—এবং সেটি সম্পন্ন করতে হবে।”
সেবার মান বাড়াতে ও কর্মসম্পাদনে সৃজনশীলতা দেখাতে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সেরা কর্মসম্পাদনকারী কর্মকর্তাকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে।”
২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাসকে (১৭) স্মরণ করতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আনাস মিছিলে যোগ দেওয়ার আগে তার মায়ের কাছে যে চিঠি লিখেছিল, তার একটি অংশ উদ্ধৃত করার সময় প্রফেসর ইউনূসের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
তিনি আনাসের চিঠি উদ্ধৃত করে বলেন, “আমি স্বার্থপরের মতো বসে থাকতে পারি না। আমি যদি ফিরতে না পারি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর তিনি বলেন, “তার (আনাসের) কথাই আমাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করে। আমরা নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আনাস যেভাবে বলেছিল কাপুরুষের মতো বসে থাকতে চায় না—আমরাও বসে থাকতে চাই না। তার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। সেটিই আমাদের দায়িত্ব।”
তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের আগামী তিন মাস নিরলসভাবে কাজ করে আনাসের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
তিনি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, মিছিলে যোগ দেওয়ার আগে আনাস তার মায়ের কাছে যে চিঠি লিখেছিল, সেটি সঙ্গে রাখার জন্য।
সভায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুন এবং জামালপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাবের সাদেক বক্তব্য দেন।
এ সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ