ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলমের হরিলুট: অজ্ঞাত নামে টাকা তুলে পাঠানো হতো বিভিন্ন মাধ্যমে
Published: 12th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি থেকে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণের নামে জালিয়াতি করে নেয়া টাকাগুলো উত্তোলনও করা হতো অস্বাভাবিকভাবে। টাকা উত্তোলনে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি এস আলমের প্রতিষ্ঠান ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন, রেইনবো করপোরেশন, আনাস এন্টারপ্রাইজ, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন ও সোনালী ট্রেডার্স। এসব প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ১ হাজার ৯৮৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। আর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে এসব হিসাবসমূহ হতে প্রায় ৩ হাজার ২৪৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।
এছাড়া, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট ডেবিট করে এস আলম গ্রুপকে নগদ টাকা প্রদান ও এস আলম গ্রুপ পরিচালিত হিসাব ডেবিট করে ইন্টার ব্যাংক ক্রেডিট এডভান্স (আইবিসিএ) এর মাধ্যমে বিকাশ এজেন্ট, মানি চেঞ্জার এবং ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে পাঠানো হতো। আর এসব করা হতো ইসলামী ব্যাংকের এমডি মনিরুল মওলা, তৎকালীন ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন ও আকিজ উদ্দিনের নির্দেশে। হুন্ডির মাধ্যমে এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আর এমন সন্দেহজনক লেনদেন হলেও ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসটিআর হিসেবে দেখিয়ে কোনো রিপোর্ট দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা, চট্টগ্রাম ও প্রধান কার্যালয়ে এই পরিদর্শন করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাতুনগঞ্জ শাখা, চট্টগ্রাম এ রক্ষিত ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন, রেইনবো করপোরেশন, আনাস এন্টারপ্রাইজ, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন ও সোনালী ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠানসমূহের চলতি হিসাবে বিপুল অংকের অস্বাভাবিক ও বিধিবর্হিভূত নগদ উত্তোলন সংঘটিত হয়েছে যা তাদের ঘোষিত ব্যবসায়ের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে উপরিউক্ত ৫টি প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব থেকে জানুয়ারী, ২০২৪ থেকে আগস্ট, ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে প্রায় ১.
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নগদ অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সকল ব্যাংকিং রীতি-নীতি ভঙ্গকরত: অস্থিত্বহীন/অজ্ঞাত নাম ব্যবহার করে (পরিচয় পত্র ব্যতীত) ক্যাশ/বাহক চেক ব্যবহার করা হতো। কিছু চেকের পেছন পৃষ্ঠায় স্বাক্ষরে অবোধ্য আদ্যক্ষর ব্যবহৃত হতো যা শাখা কর্তৃকও যাচাই করা হয়নি। এ সকল চর্চা বিএফআইইউ নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ লক্ষ টাকা বা তদূর্ধ্ব মূল্যের লেনদেনে। গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রাহ ও সংরক্ষণের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লংঘন। এ বিষয়ে শাখা কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন দলকে অবহিত করে যে, শাখায় প্রায় প্রতিদিন সকালে এস আলম গ্রুপ ও প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন আকিজ উদ্দিন হতে মৌখিকভাবে শাখা প্রধানের নিকট নির্দেশ দেওয়া হতো যে কোনে নির্দিষ্ট দিনে কত টাকার বিনিয়োগ ছাড় করা হবে এবং উক্ত ছাড়কৃত বিনিয়োগ হতে কত টাকা পে অর্ডার বা আরটিজিএস ইস্যু করা হবে তা কত টাকা চেকের বিপরীতে গ্রুপের প্রতিনিধির কাছে নগদ প্রদান করা হবে। উক্ত নির্দেশক্রমে শাখা কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে এস আলম আওতাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের (ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি) খাতুনগঞ্জ শাখায় এবং এস আলম ভবনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া হতো। আবার কখনো কখনো এরূপ নগদ টাকা উপরিউক্ত ব্যাংক শাখাসমূহের ক্যাশ ইনচার্জগণ এবং এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে যেতেন।
প্রতিবেদন বলছে, এক্ষেত্রে কখনো দিনের শুরুতে উত্তোলিত অর্থ দিন শেষে সংশ্লিষ্ট হিসাবসমূহের স্থিতি দ্বারা সম্পূর্ণ সমন্বিত না হলে অবশিষ্টাংশ শাখার সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট ডেবিট করে সমন্বয় করা হতো। ১৬/১০/২০২২ তারিখ হতে ০৬/০৮/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত সময়ে মোট ৪৩টি এন্ট্রির মাধ্যমে শাখার সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট ডেবিট করে সর্বমোট ৪৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নগদ প্রদান করা হয়েছে। পরিদর্শন সময় (২৯/০৯/২০২৪) পর্যন্ত সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট এর ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা অসমন্বিত অবস্থায় ছিল। এরূপ কর্মকান্ড শাখার তৎকালীন শাখা প্রধান মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম, এসভিপি এবং মুহাম্মদ সিরাজুল কবির, এসভিপি এর সময়কালে সংঘটিত হয়েছিল। এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম পরিদর্শন দলকে অবহিত করেছে যে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা এবং তৎকালীন ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন এর নির্দেশে তিনি শাখার সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট ডেবিট করে নগদ টাকা প্রদান করতেন।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২৫(১)(খ) ধারায় কোন সন্দেহজনক লেনদেন বা লেনদেনের প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হলে তা স্ব-উদ্যোগে অবিলম্বে বিএফআইইউতে রিপোর্ট করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পরিদর্শনকালে দেখা যায় ২০২২ সাল হতে হিসাবসমূহে তাদের ব্যবসায়ের প্রকৃতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিপুল অংকের এরূপ নগদ উত্তোলন হলেও ব্যাংক কর্তৃক তা বিএফআইইউতে সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে রিপোর্ট করা হয়নি যা একই আইনের ২৫(১)(খ) ধারার সুস্পষ্ট লজ্ঞান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সাল হতে আগষ্ট, ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে শাখা কর্তৃক ব্যাংকের অন্যান্য শাখার উপর ইস্যুকৃত আইবিসিএ তালিকা হতে দৈবচয়ন ভিত্তিতে ৮৩টি আইবিসিএ এর সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায় সেগুলোর মাধ্যমে ব্যাংকটির ১১টি শাখা/উপশাখার সর্বমোট ৩৩৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়েছে।
অধিকাংশ লেনদেনের ক্ষেত্রেই নগদ টাকা প্রদানকৃত শাখা কর্তৃক গ্রহীতার সংক্ষিপ্ত পরিচয় সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়নি। ব্যাংক/শাখা কর্তৃক সরবরাহকৃত তথ্য/দলিলাদি বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচা আইবিসিএ সমূহের মাধ্যমে বিকাশ এজেন্ট, মানি চেঞ্জার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকের কর্মকর্তা/কর্মচারিসহ ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত নয় এরূপ অজ্ঞাত ব্যক্তিবর্গের নামে অর্থ প্রেরণ করে নগদ উত্তোলন করা হয়েছে।
বিকাশ এজেন্টের নামে আইবিসিএ ইস্যু
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপরে উল্লেখিত ৫টি প্রতিষ্ঠানের হিসাব হতে টাকা উত্তোলন করে জনৈক আহাদ (হুবাইব উদ্দীন আহাদ) এর নামে ২৭/০৫/২০২৪ তারিখ হতে ৩০/০৭/২০২৪ তারিখ সময়ে ইস্যুকৃত ৭টি আইবিসিএ এর বিপরীতে তিনি আনোয়ারা উপশাখা হতে সর্বমোট ৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করেন। আনোয়ারা উপশাখায় আহাদ এর মালিকানাধীন আহাদ এন্টারপ্রাইজ এর নামে ২৮/০২/২০২৩ তারিখে চলতি হিসাব খোলা হয় যার নম্বর ২০৫০৮২৯০১০০০১৬৩১৬। হিসাব খোলার ফরমে প্রতিষ্ঠানটির বাবসায়ের ধরণ উল্লেখ রয়েয়ে ‘বিকাশের এজেন্ট’। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা। হাইলধর, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম। আহাদ ২৭/০৫/২০২৪ তারিখে উত্তোলিত টাকা হতে আরটিজিএস এর মাধ্যমে মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ, পুবালী ব্যাংক পিএলসি, কাসিমপুর শাখা, হিসাব নং ০৭৪৮৯০১০২৯৬১১ এ ৫ লাখ টাকা, মদিনা লাইব্রেরি, পূবালী ব্যাংক পিএলসি, নাজিরহাট শাখা, হিসাব নং ১৯৭৯৯০১০১৬৮৩৮ এ ৫ লাখ টাকা, সওদাগর ট্রেডিং, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, হিসাব নং ১১৪১১১০০০০৭৩১৫ এ ৫ লাখ টাকা এবং নগদে ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে যথা ২০৫০২০৫০২০৪৯৩০৬০১ (আবু হানিফ) নং হিসাব এ ৩ লাখ টাকা, ২০৫০২০২০১০০৪৫১৫০৬ (মেসার্স মনোয়ারা এন্টারপ্রাইজ) নং হিসাব এ ২ লাখ টাকা এবং ২০৫০০১৮০২০২১১০৪০৫ (দেলোয়ার হোসেন) নং হিসাব এ ২ লাখ টাকা নগদ জমা করেন।
তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির হিসাবের লেনদেন বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা যায় হিসাবটিতে ব্যাংকের চক মুখলটুলি শাখা, খাতুনগঞ্জ শাখা, চকবাজার শাখা, মতিঝিল শাখা, মগবাজার শাখা, জমিগঞ্জ, ওসমানিনগর, সিলেট, দৌলতপুর শাখা, খুলনা, সোবরগাঁ জনপথ রোড শাখাসহ বিভিন্ন শাখায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নগদ জমা হতো এবং তা একই দিনে ঢাকা, টাঙ্গাইল, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনি, বরগুনা, চাঁদপুর, দেবিদ্বার, মুকসদপুর এর বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর ও নগদ উত্তোলন করা হতো।
আইবিসিএ সমূহের নথি পরীক্ষান্তে দেখা যায় সেগুলো জনৈক আবিদ কর্তৃক গ্রহণ করা হয়েছে। আবিদের নাম্বারে টেলিফোন আলাপে জানা যায় তিনি আহাদ এর কর্মচারি এবং আবিদ হতে জানা যায় যে, আহাদ প্রায়শই সৌদি আরব, দুবাই এবং মালয়শিয়াতে যাতায়াত করেন।
উপরোক্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিকাশ এজেন্ট আহাদ এন্টারপ্রাইজ এর হিসাবে এস আলম গ্রুপের হিসাব হতে খাতুনগঞ্জ শাখার মাধ্যমে আইবিসিএ এর মাধ্যমে বিপুল অংকের অর্থ জমা, স্বল্প সময়ের মধ্যেই নগদে উত্তোলন বা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর, হিসাবধারীর প্রায়শই সৌদি আরব, দুবাই এবং মালয়শিয়াতে যাতায়াত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, আহাদ অবৈধ হুন্ডির সাথে জড়িত এবং লেনদেনসমূহের মাধ্যমে হুন্ডির পেমেন্ট প্রদান করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে আইবিসিএ এর মাধ্যমে টাকা প্রেরণ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাখার ৫টি প্রতিষ্ঠানের হিসাব হতে উত্তোলন করে ফিরোজ মোল্লা, এনআইডি নং ৭৩৩৬৯৪৮৪৩০, এর নামে ইস্যুকৃত ১টি আইবিসিএ এর বিপরীতে তিনি লোকাল অফিস হতে ১৯/১১/২০২৩ তারিখে ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করেন। এছাড়া, মোঃ আবুল কালাম আজাদ, এনআইডি নং: ১৯৮৫৭৬১৭২৭৭৪১৩২৫৯ এর নামে ইস্যুকৃত ১টি আইবিসিএ এর বিপরীতে তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এর লোকাল অফিস হতে ২৮/০৫/২০২৪ তারিখে ১ কোটি টাকা নগদ উত্তেলন করেন।
ব্যাংক কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নামে আইবিসিএ ইস্যুর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, পাবলিক এ্যফেয়ার্স এন্ড ব্রান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা (বর্তমানে মানিকগঞ্জ শাখায় পদায়িত) এর প্রিন্সিপাল অফিসার এস, এম, জামাল উদ্দীন (রাসেল) এর নামে শাখার গ্রাহক প্রতিষ্ঠান এর হিসাব এবং শাখার ক্লিয়ারিং এডজাস্ট অ্যাকাউন্ট ডেবিট করে ইস্যুকৃত ৪টি আইবিসিএ এর বিপরীতে তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এর লোকাল অফিস ও গুলশান সার্কেল-১ শাখা হতে সর্বমোট ৩০ কোটি ৮১ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করেন।
শাখার ৫টি প্রতিষ্ঠানের হিসাব ডেবিট করে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, গুলশান শাখার ক্যাশ অফিসার মোহাম্মদ আলী এর নামে ইস্যুকৃত ৫টি আইবিসিএ এর বিপরীতে তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এর লোকাল অফিস ও পল্টন শাখা হতে সর্বমোট ৭৩ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন করেন।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, ঢাকা নর্থ জোন অফিস এর এফএভিপি তাহেরুল আমিন এর নামে শাখার গ্রাহক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব ডেবিট করে ইস্যুকৃত ২টি আইবিসিএ এর বিপরীতে তিনি লোকাল অফিস হতে সর্বমোট ২৩ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন করেন।
ইসলামী ব্যাংকের এইচ আর এর মাধ্যমে তাহেরল আমিন এর নিকট উক্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা যাচিত হলে তিনি জানান যে তৎকালীন ডিএমডি আকিজ উদ্দিনের নির্দেশে তিনি উক্ত অর্থ গ্রহণ করেন এবং তা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর প্রিন্সিপাল অফিসার এস, এম, জামাল উদ্দীন (রাসেল) এর নিকট প্রদান করেন।
এছাড়া, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এর ট্রেনিং একাডেমিতে কর্মরত মেসেঞ্জার কাম গার্ড ওসমান গনি (আইডি নং-৫০০৩৯২) এর নামে শাখার উল্লেখিত পাঁচটি গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব ডেবিট করে ইস্যুকৃত ১টি আইবিসিএ এর বিপরীতে তিনি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এর লোকাল অফিস হতে ০২/১১/২০২৩ তারিখে ৫ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন করেন। এ বিষয়ে তিনি জানান যে, তৎকালীন ডিএমডি আকিজ উদ্দিনের নির্দেশে তিনি উক্ত অর্থ গ্রহণ করে তার চেম্বারে পৌঁছে দেন।
এম জি
উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: এস আলম গ র প র হ স ব ড ব ট কর খ ত নগঞ জ শ খ ল দ শ প এলস ২০২৪ ত র খ র ব পর ত নগদ ট ক ল ইসল ম ক প এলস এর ন ম কর ত ক ন কর ন ব যবস ব যবহ র চলত
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।