যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার কয়েকজন অবৈধ অভিবাসীকে কিউবার গুয়ানতানামো বেতে অবস্থিত কুখ্যাত বন্দিশিবিরে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গত শনিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে দেশটিতে নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন।

ওই সংগঠনের নাম দ্য আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন (এসিএলইউ)। তারা ওয়াশিংটন ডিসির একটি ফেডারেল আদালতে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়েছে। গুয়ানতানামো বের কঠিন পরিস্থিতি এবং সেখানে অবস্থান করা অভিবাসীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতার কথা উল্লেখ করে সংগঠনটি বলেছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী আইন লঙ্ঘন করা হবে।

আদালতে জমা দেওয়া এসিএলইউর নথিতে ১০ জন অবৈধ অভিবাসীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ভেনেজুয়েলা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাগরিকেরা রয়েছেন। তাঁদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা টেক্সাস, অ্যারিজোনা ও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে আটক রয়েছেন। তাঁদের কয়েকজনকে গুয়ানতানামো বে কারাগারে পাঠানো হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি আগে থেকেই দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। সেখানে এসিএলইউর এই আইনি পদক্ষেপকে ‘ভিত্তিহীন’ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন। তিনি জানান, এ বিষয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে মিলে পদক্ষেপ নেবেন তারা।

গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসেন ট্রাম্প। এরপর ফেব্রুয়ারির শুরুর দিক থেকেই গুয়ানতানামো বেতে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটির বন্দিশিবিরে অবৈধ অভিবাসীদের পাঠানো শুরু করা হয়। বিদেশি অপরাধীদের আটক রাখার জন্য এই বন্দিশিবিরের কুখ্যাতি রয়েছে। তবে ওই ১০ অভিবাসীর কেউ কোনো সন্ত্রাসী দলের সদস্য বা অপরাধী নন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েমের ভাষ্য অনুযায়ী, আটক অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে যাঁরা ‘সবচেয়ে খারাপ’ তাঁদের গুয়ানতানামো বের বন্দিশিবিরে পাঠানো হচ্ছে। তবে তাঁর মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যই বলছে, এর আগে ওই শিবিরে পাঠানো ভেনেজুয়েলার ১৭৭ অভিবাসীর এক–তৃতীয়াংশের বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো অভিযোগ ছিল না।

এসিএলইউর আবেদনে বলা হয়েছে, গুয়ানতানামো বের ওই বন্দিশিবিরে জানালাবিহীন কক্ষে অভিবাসীদের প্রতিদিন অন্তত ২৩ ঘণ্টা করে আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের বিবস্ত্র করে তল্লাশি করা হয়। যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না পরিবারের সঙ্গে। বন্দিশিবিরের নিরাপত্তারক্ষীরা আটক ব্যক্তিদের ওপর মৌখিক ও শারীরিকভাবে আক্রমণও করেন। তাঁদের চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পান করতে দেওয়া হয় না পানি। নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তির হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

নির্যাতনের এসব ঘটনার জেরে বন্দীদের মধ্যে আত্মহত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ভেনেজুয়েলার কয়েকজন অভিবাসীকে গুয়ানতানামো বেতে স্থানান্তর আটকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ফেডারেল বিচারক। তাঁদের বিষয়েও আদালতে গিয়েছিল এসিএলইউ। পরে তাঁদের নিজ দেশ ভেনেজুয়েলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন দ শ ব র পদক ষ প অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

আশিরের গবেষণাগারে বিএনপি নেতা রিজভী, বললেন, তারেক রহমান পাঠিয়েছেন

ড্রোন ও বিমানের ছয় শতাধিক মডেল তৈরি করে আলোচনায় আসা চট্টগ্রামের বাঁশখালীর তরুণ মো. আশির উদ্দীনের গবেষণাগার পরিদর্শন করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ পুঁইছড়ি গ্রামে আশিরের গবেষণাগার পরিদর্শনে যান তিনি।

পরিদর্শনকালে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পতনের মূল কারিগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমরা এখানে এসেছি। তারেক রহমান লন্ডন থেকে আশির উদ্দীনের ড্রোন প্রযুক্তির ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের পাঠিয়েছেন এই প্রতিভাকে মূল্যায়ন করার জন্য।’

রিজভী আরও বলেন, ‘সারা দেশে কেউ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, কেউ সংগীতে, কেউ শিল্পী হিসেবে নানাভাবে প্রতিভার ছাপ রাখছে। আমরা খোঁজখবর নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা যেন উন্নতি করতে পারে, সেটাই মূল লক্ষ্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমরা এসেছি। আশির উদ্দীনের মতো প্রতিভাবান তরুণেরা আগামী দিনের বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে।’

পরিদর্শনকালে রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’–এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান, সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন; বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিচ মিয়া, সদস্যসচিব হেলাল উদ্দীন প্রমুখ।

আশির উদ্দীন সরকারি পলিটেকনিক কলেজ থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। গ্রামে তাঁর ‘এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ল্যাব’ নামের ১৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ল্যাব আছে। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘খুদে বিজ্ঞানী’ ও ‘বিমানবিজ্ঞানী’ নামে পরিচিত। ২০১৬ সালে শুরু করে ড্রোন ও বিমানের ছয় শতাধিক মডেল তৈরি করেন তিনি। এরই মধ্যে তাঁকে সম্মানিত করেছে সামরিক বাহিনী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ