গোপনে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের লক খুলতে সক্ষম অ্যান্ড্রয়েডের ত্রুটি সারাল গুগল
Published: 5th, March 2025 GMT
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে থাকা জিরো ডে ঘরানার ত্রুটি কাজে লাগিয়ে যেকোনো অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের লক খোলা সম্ভব। ত্রুটিটি কাজে লাগিয়ে এরই মধ্যে সার্বিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন আনলক করেছে এবং এতে নজরদারি সফটওয়্যার স্থাপনের চেষ্টা করেছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাব। সংস্থাটির কাছে থেকে এ বিষয়ে জানার পর অ্যান্ড্রয়েডের মার্চ মাসের নিরাপত্তা হালনাগাদে এই ত্রুটিসহ মোট ৪৩টি নিরাপত্তা ত্রুটির সমাধান করেছে গুগল। সাইবার হামলার পাশাপাশি তথ্য চুরি ঠেকাতে দ্রুত অ্যান্ড্রয়েডের হালনাগাদ সংস্করণ ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গুগলের তথ্যমতে, সমাধান করা ত্রুটিগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইউএসবি ভিডিও ক্লাস ড্রাইভারের নিরাপত্তা ত্রুটি, যা গত মাসে সমাধান করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউএসবি সাউন্ড ড্রাইভারের একটি ত্রুটি ছিল, যা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিকিউরিটি ল্যাব শনাক্ত করেছে। এই ত্রুটিটি এ মাসের নিরাপত্তা হালনাগাদের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ইউএসবি ড্রাইভার, ফার্মওয়্যার এবং কার্নেলে থাকা নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো কাজে লাগিয়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব। এ ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটির মাধ্যমে মেমোরি দুর্বলতা তৈরি, ক্ষতিকর কমান্ড ইনজেক্ট বা লক স্ক্রিন বাইপাসের মতো কাজ করা যায়। তবে এই ধরনের আক্রমণ চালাতে সরাসরি ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিতে হয়, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সহজ। তারা সহজেই কোনো ব্যক্তিকে আটক করে তার ফোন জব্দ করতে পারে।
এ ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটি থেকে নিরাপদ থাকতে হলে ব্যবহারকারীদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য ফোনের ইউএসবি ডিবাগিং বন্ধ রাখার পাশাপাশি এনক্রিপশন সুবিধা ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত নিরাপত্তা আপডেট ইনস্টল করাসহ ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহারে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
সূত্র: ব্লিপিং কম্পিউটার
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।