Prothomalo:
2025-06-15@22:25:31 GMT

দেশে ধনীদের তালিকা হয় না কেন

Published: 24th, April 2025 GMT

বাংলাদেশে ধনীদের তালিকা করা হয় না। কারণ, এ দেশের ধনীদের সম্পদ কত, তাঁরা কত সম্পদ ভোগ করেন, এর প্রকৃত তথ্য জানার সুযোগ নেই বললেই চলে। এ ছাড়া সম্পদ বাড়ল না কমল—তা জানার সুযোগ কম। মূলত বড় বড় ধনী তাঁদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে আগ্রহী নন। তাই সম্পদ বৃদ্ধি-কমার দৈনন্দিন হিসাব পাওয়া যায় না। এমনকি সম্পদ বিক্রি বা কেনার তথ্যও প্রকাশ্যে আসে না।

যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধনীদের এ ধরনের তালিকা করা হয়। তা গণমাধ্যমেও আসে। বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকা প্রকাশের জন্য বিখ্যাত ফোর্বস সাময়িকী। সেখানে প্রতিনিয়তই ধনীদের হালনাগাদ অবস্থান দেখানো হয়। এ ছাড়া বিশ্বের বড় বড় শেয়ারবাজারের দরদামের ভিত্তিতেও ধনীদের সম্পদমূল্যের ওঠানামা করে।

কিন্তু বাংলাদেশে এমন কখনো হয়নি। ফলে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকার বড় বড় ব্যবসায়ীদের টপকে পুরোনো ঢাকার জর্দা ব্যবসায়ী প্রয়াত কাউছ মিয়া দেশের সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়ে এসেছেন। এ ছাড়া কোনো সরকারের আমলেই আলাদা করে ধনীদের তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খাতভিত্তিক সেরা করদাতাদের সম্মাননা ও কর কার্ড দিয়ে থাকে। এ বছর অবশ্য সেরা করদাতাদের সম্মাননা দেয়নি।

এবার দেখা যাক, কেন বাংলাদেশের ধনীদের তালিকা তৈরি করা যায় না।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়

এ দেশের বড় ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় না। ফলে কোম্পানি মালিকেরা কী পরিমাণ অর্থ লভ্যাংশ পান, তা প্রকাশ্যে ঘোষণায় আসে না। ফলে তাঁদের আয় বা সম্পদের পরিমাণ জানা কঠিন হয়।

বড় বড় দেশীয় কোম্পানিগুলো যদি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতো, তাহলে সেগুলোর মালিক বা কোম্পানি পরিচালকদের সম্পদের পরিমাণ জানা যেত। কে কত টাকার মালিক তা–ও প্রকাশ্যে আসত।

বাড়ি-গাড়ি কোম্পানির নামে

এ দেশের বড় কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের মালিক বা পরিচালকদের অনেকে কর ফাঁকি দিতে নিজেদের বাড়ি-গাড়ি নিজেদের নামে দেখান না। তাঁদের বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট—সবই প্রতিষ্ঠানের নামে থাকে। প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক বা বড় পদধারী হওয়ায় তাঁরা এসব সম্পদ ভোগ করেন বলে কাগজে-কলমে দেখানো হয়। এমনকি স্ত্রী-সন্তানের জন্য ব্যবহার করা গাড়িও প্রতিষ্ঠান দেয়। কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠানই এসব সম্পদ ব্যবহারের সুবিধা দেয়। ফলে ওই ধনী ব্যবসায়ীর কর নথিতে এসব সম্পদ দেখানো হয় না। এমনকি জীবনযাত্রার বিভিন্ন খাতের খরচও প্রতিষ্ঠান বহন করে। ফলে এই ব্যক্তির টাকাপয়সা বা সম্পদ কত তা জানা যায় না।

সম্পদ লুকিয়ে রাখার প্রবণতা

এ দেশে সম্পদ লুকিয়ে রাখেন একশ্রেণির মানুষ। কারণ, ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট কেনেন; কিন্তু কর নথিতে আয়ের উৎস দেখাতে পারেন না তাঁরা। তাই স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়স্বজনের নামে এসব সম্পদ দেখানো হয়।

তাই বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেও এই শ্রেণিকে কখনোই ধনীদের কাতারে রাখতে পারেন না কর কর্মকর্তারা। ফলে আড়ালেই থাকেন তাঁরা; কিন্তু বিলাসী জীবন উপভোগ করে যান।

সম্পদমূল্যের মিথ্যা ঘোষণা

এ দেশে সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন হয় না। জমি-ফ্ল্যাট কেনাবেচার সময় প্রকৃত মূল্য ঘোষণা দেন না ক্রেতা–বিক্রেতা কেউ। এ ছাড়া নির্ধারিত মৌজা মূল্যেই জমি কেনাবেচা হয়। বাজারমূল্যের চেয়ে মৌজা মূল্য অনেক কম থাকে। ফলে বাড়তি টাকার লেনদেনের হিসাব থাকে না। যা কালোটাকা হয়ে যায় এবং কর নথিতে দেখানো হয় না।

এ ছাড়া কর নথিতে প্রতিবছর সম্পদের মূল্য কেনা দামকে দেখানো হয়। যেমন কোনো করদাতা সত্তরের দশকে যদি এক লাখ টাকায় জমি কেনেন, এখনো কর নথিতে ওই জমির দাম এক লাখ টাকাই থাকবে। অথচ সেই জমির বাজারমূল্য এখন এক কোটি টাকা হয়ে গেছে; কিন্তু কর নথিতে ওই করদাতা মাত্র এক লাখ টাকার সম্পদের মালিক।

এভাবে সম্পদের বাজারমূল্য বিবেচনায় না আনায় ধনীদের চিহ্নিত করার অন্যতম প্রধান সমস্যা।

এনবিআরের সক্ষমতার অভাব

কোন করদাতা কত সম্পদের মালিক, কিংবা কার কত আয়-তা প্রকৃত অর্থে খুঁজে বের করার সক্ষমতাও কম জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। বর্তমানে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে ৪০ লাখের বেশি প্রতিবছর রিটার্ন জমা দেন।

কিন্তু এনবিআরের আয়কর বিভাগের সীমিত জনবল দিয়ে বিশালসংখ্যক রিটার্ন দেওয়া করদাতাদের কর নথি পর্যালোচনা করা কঠিন। ফলে এনবিআরের আয়কর বিভাগ যারা নিয়মিত করদাতা, তাঁদের কাছেই বেশি যায়।

সারচার্জ দেন মাত্র ১৫ হাজার করদাতা

বর্তমানে চার কোটি টাকার বেশি সম্পদধারীর প্রদত্ত আয়করের ওপর সারচার্জ দিতে হয়। এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র ১৪ হাজার ৮৫৪ জন করদাতা সারচার্জ দিয়েছেন। এতে এনবিআরের প্রাপ্তি মাত্র ৬২৬ কোটি টাকা। তখন অবশ্য তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে সারচার্জ দিতে হতো। এনবিআরের ভাষায়, সারচার্জ দেওয়া করদাতারাই দেশের অতিধনী।

সেই হিসাবে, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে সারচার্জ দেওয়া ‘অতিধনী’ করদাতার সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়ায়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ব যবস য় করদ ত বড় বড়

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস

বাবা সন্তানের ওপর ছায়ার মতো স্নেহময় এক উপস্থিতি। নিঃশর্ত ভরসার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়োজনে নিজের বর্তমান, এমনকি নিজের স্বপ্নও নীরবে উৎসর্গ করে দিতে পারেন যিনি– আজ তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। বাবা দিবস উপলক্ষে সমতা’র বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত

আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে। এখন সেই জায়গাটা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার সমুদয়কাঠি গ্রাম। তখনকার সামাজিক পরিসরে আমাদের পরিবারের অবস্থা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভালো ছিল। আমার বাবা বিজয় কুমার আইচ তখন পিরোজপুরে কাজ করতেন। তাঁর রেশনের দোকান ছিল। প্রতি শনিবার বাড়ি আসতেন। আমরা বাবার আশায় বসে থাকতাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একরকম আশীর্বাদের মতো।
বাবার একটি ব্যবসাও ছিল। এ থেকে মূলত আমাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের চেয়ে সম্ভবত বাবার জ্ঞান বা বোধ উন্নততর ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য দশ গ্রামের লোকজন তাঁকে মানত। গ্রামে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। বাবার সঙ্গে কথা না বলে কেউ থানা-পুলিশ করতে যেত না। বাবা সবাইকে খুব বুঝিয়ে বলত– মামলা করলে কে জিতবে, কে হারবে– এটি অনেক পরের কথা। মামলা নিয়ে বরিশাল-পিরোজপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দুই পক্ষই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তারচেয়ে বরং তোমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেল।
গ্রামের পণ্ডিতরা তখন তালপাতায় অ-আ-ক-খ শেখাতেন হাত ধরে ধরে। আমার সেটি একদম পছন্দ হতো না। বাবা কী করলেন, তিনি একটা স্লেট ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন। অ-আ-ক-খ দিয়ে যত ছবি আঁকা হয়, তা শেখাতেন। এর মধ্যে আমার যে ছবিটা পছন্দ হতো, সেটি আমি মনের মধ্যে গেঁথে নিতাম। যার ফলে বাবার মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক শিক্ষা পেয়েছি আমি। 
আমার বাবারা ছিলেন ৪ ভাই। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দু’জন পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার বাবা ও এক কাকা বাড়ি ছেড়ে যাননি। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ৩ বোন। কাকাতো ভাই ৪ জন, বোন একজন। মোট ১৪ ভাইবোন। কাকা কম বয়সেই গত হন। বিলাসী জীবন আমাদের ছিল না। তবে গ্রামের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বড়লোক। পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও খাবারের অভাব হতো না কখনোই। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়ও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি। আমাদের একটা গুদামঘর ছিল। সেখানে বাবা পাশের বন্দর কাউখালী থেকে সারা বছরের চাল, ডাল, পাউডার দুধ, চিনি, লবণ, গুড় এনে ড্রামে ভরে রাখতেন। বাইরে যত সংকটই থাকুক না কেন, বছরজুড়ে খাবারের অভাব হতো না। সমস্যা হতো ঝড়ের সময়। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন ঝড় মাঝে মাঝেই আসত। কখনও ঘরের চাল উড়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম। 
অন্যদের সামনে বাবা নিজের অবস্থানের জন্যই বেশি হাসি-তামাশা করতেন না। যখন আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো হাসি-খুশি থাকতেন। তখনকার বাবাদের আমরা মারধর করতে দেখেছি, এমনকি খড়ম দিয়ে পেটাতে দেখেছি। বাবা আমার গালে জীবনেও একটা চড় মারেনি। কোনো ভাইবোনকেও মারধর করতে দেখিনি। তখন হয়তো আরও এমন বাবা ছিলেন। তবে গ্রামে আমি এমন বাবা আর দেখিনি। সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলেও তিনি কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, কেন দেরি করে ঘরে ফিরেছি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্রকে থামাইতেই হইবে
  • বন্ধু হওয়ার সুযোগ দিন, শত্রু নয়
  • ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’
  • একদিনে আয় ৮১ লাখ, ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের তাণ্ডব!
  • ফুসফুসের সুরক্ষায় যা করণীয়
  • লন্ডন বৈঠকের পর এখন বিএনপির দৃষ্টি নির্বাচনে , কী ভাবছে অন্য দলগুলো
  • সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার যেভাবে হলে ভালো হয়
  • হামলার আগে ইরানে গোপন অভিযান চালায় মোসাদ