Prothomalo:
2025-11-02@17:21:44 GMT

দেশে ধনীদের তালিকা হয় না কেন

Published: 24th, April 2025 GMT

বাংলাদেশে ধনীদের তালিকা করা হয় না। কারণ, এ দেশের ধনীদের সম্পদ কত, তাঁরা কত সম্পদ ভোগ করেন, এর প্রকৃত তথ্য জানার সুযোগ নেই বললেই চলে। এ ছাড়া সম্পদ বাড়ল না কমল—তা জানার সুযোগ কম। মূলত বড় বড় ধনী তাঁদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে আগ্রহী নন। তাই সম্পদ বৃদ্ধি-কমার দৈনন্দিন হিসাব পাওয়া যায় না। এমনকি সম্পদ বিক্রি বা কেনার তথ্যও প্রকাশ্যে আসে না।

যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধনীদের এ ধরনের তালিকা করা হয়। তা গণমাধ্যমেও আসে। বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকা প্রকাশের জন্য বিখ্যাত ফোর্বস সাময়িকী। সেখানে প্রতিনিয়তই ধনীদের হালনাগাদ অবস্থান দেখানো হয়। এ ছাড়া বিশ্বের বড় বড় শেয়ারবাজারের দরদামের ভিত্তিতেও ধনীদের সম্পদমূল্যের ওঠানামা করে।

কিন্তু বাংলাদেশে এমন কখনো হয়নি। ফলে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকার বড় বড় ব্যবসায়ীদের টপকে পুরোনো ঢাকার জর্দা ব্যবসায়ী প্রয়াত কাউছ মিয়া দেশের সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়ে এসেছেন। এ ছাড়া কোনো সরকারের আমলেই আলাদা করে ধনীদের তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খাতভিত্তিক সেরা করদাতাদের সম্মাননা ও কর কার্ড দিয়ে থাকে। এ বছর অবশ্য সেরা করদাতাদের সম্মাননা দেয়নি।

এবার দেখা যাক, কেন বাংলাদেশের ধনীদের তালিকা তৈরি করা যায় না।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়

এ দেশের বড় ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় না। ফলে কোম্পানি মালিকেরা কী পরিমাণ অর্থ লভ্যাংশ পান, তা প্রকাশ্যে ঘোষণায় আসে না। ফলে তাঁদের আয় বা সম্পদের পরিমাণ জানা কঠিন হয়।

বড় বড় দেশীয় কোম্পানিগুলো যদি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতো, তাহলে সেগুলোর মালিক বা কোম্পানি পরিচালকদের সম্পদের পরিমাণ জানা যেত। কে কত টাকার মালিক তা–ও প্রকাশ্যে আসত।

বাড়ি-গাড়ি কোম্পানির নামে

এ দেশের বড় কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের মালিক বা পরিচালকদের অনেকে কর ফাঁকি দিতে নিজেদের বাড়ি-গাড়ি নিজেদের নামে দেখান না। তাঁদের বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট—সবই প্রতিষ্ঠানের নামে থাকে। প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক বা বড় পদধারী হওয়ায় তাঁরা এসব সম্পদ ভোগ করেন বলে কাগজে-কলমে দেখানো হয়। এমনকি স্ত্রী-সন্তানের জন্য ব্যবহার করা গাড়িও প্রতিষ্ঠান দেয়। কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠানই এসব সম্পদ ব্যবহারের সুবিধা দেয়। ফলে ওই ধনী ব্যবসায়ীর কর নথিতে এসব সম্পদ দেখানো হয় না। এমনকি জীবনযাত্রার বিভিন্ন খাতের খরচও প্রতিষ্ঠান বহন করে। ফলে এই ব্যক্তির টাকাপয়সা বা সম্পদ কত তা জানা যায় না।

সম্পদ লুকিয়ে রাখার প্রবণতা

এ দেশে সম্পদ লুকিয়ে রাখেন একশ্রেণির মানুষ। কারণ, ঘুষ-দুর্নীতির টাকায় বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট কেনেন; কিন্তু কর নথিতে আয়ের উৎস দেখাতে পারেন না তাঁরা। তাই স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়স্বজনের নামে এসব সম্পদ দেখানো হয়।

তাই বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেও এই শ্রেণিকে কখনোই ধনীদের কাতারে রাখতে পারেন না কর কর্মকর্তারা। ফলে আড়ালেই থাকেন তাঁরা; কিন্তু বিলাসী জীবন উপভোগ করে যান।

সম্পদমূল্যের মিথ্যা ঘোষণা

এ দেশে সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন হয় না। জমি-ফ্ল্যাট কেনাবেচার সময় প্রকৃত মূল্য ঘোষণা দেন না ক্রেতা–বিক্রেতা কেউ। এ ছাড়া নির্ধারিত মৌজা মূল্যেই জমি কেনাবেচা হয়। বাজারমূল্যের চেয়ে মৌজা মূল্য অনেক কম থাকে। ফলে বাড়তি টাকার লেনদেনের হিসাব থাকে না। যা কালোটাকা হয়ে যায় এবং কর নথিতে দেখানো হয় না।

এ ছাড়া কর নথিতে প্রতিবছর সম্পদের মূল্য কেনা দামকে দেখানো হয়। যেমন কোনো করদাতা সত্তরের দশকে যদি এক লাখ টাকায় জমি কেনেন, এখনো কর নথিতে ওই জমির দাম এক লাখ টাকাই থাকবে। অথচ সেই জমির বাজারমূল্য এখন এক কোটি টাকা হয়ে গেছে; কিন্তু কর নথিতে ওই করদাতা মাত্র এক লাখ টাকার সম্পদের মালিক।

এভাবে সম্পদের বাজারমূল্য বিবেচনায় না আনায় ধনীদের চিহ্নিত করার অন্যতম প্রধান সমস্যা।

এনবিআরের সক্ষমতার অভাব

কোন করদাতা কত সম্পদের মালিক, কিংবা কার কত আয়-তা প্রকৃত অর্থে খুঁজে বের করার সক্ষমতাও কম জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। বর্তমানে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে ৪০ লাখের বেশি প্রতিবছর রিটার্ন জমা দেন।

কিন্তু এনবিআরের আয়কর বিভাগের সীমিত জনবল দিয়ে বিশালসংখ্যক রিটার্ন দেওয়া করদাতাদের কর নথি পর্যালোচনা করা কঠিন। ফলে এনবিআরের আয়কর বিভাগ যারা নিয়মিত করদাতা, তাঁদের কাছেই বেশি যায়।

সারচার্জ দেন মাত্র ১৫ হাজার করদাতা

বর্তমানে চার কোটি টাকার বেশি সম্পদধারীর প্রদত্ত আয়করের ওপর সারচার্জ দিতে হয়। এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র ১৪ হাজার ৮৫৪ জন করদাতা সারচার্জ দিয়েছেন। এতে এনবিআরের প্রাপ্তি মাত্র ৬২৬ কোটি টাকা। তখন অবশ্য তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে সারচার্জ দিতে হতো। এনবিআরের ভাষায়, সারচার্জ দেওয়া করদাতারাই দেশের অতিধনী।

সেই হিসাবে, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে সারচার্জ দেওয়া ‘অতিধনী’ করদাতার সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়ায়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ব যবস য় করদ ত বড় বড়

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্টে সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে সব ব্যক্তি করদাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।

গত বছর নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেন।

দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর মাত্র ৪০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেন।

এনবিআর জানায়, এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে চলতি বছর ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

চলতি ২০২৫-২৬ করবর্ষে যেসব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাঁরাও চাইলে অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। অন্যদিকে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এই সময়সীমা ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।

এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করদাতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ই-মেইল করলে ই-রিটার্নের নিবন্ধন লিংক পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। কোনো ধরনের কাগজপত্র বা দলিল আপলোড না করেই করদাতারা তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। ই-রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে জমা স্লিপ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আয়কর সনদও প্রিন্ট করে নিতে পারছেন করদাতারা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ই-রিটার্ন জমা সহজ করার জন্য গত বছরের মতো এবারও করদাতাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দিতে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আবার ওয়েবসাইটে ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালেও তার সমাধান পাচ্ছেন করদাতারা। কোনো করদাতা সশরীর নিজ নিজ কর অঞ্চলে গিয়েও ই-রিটার্ন জমা দেওয়াসংক্রান্ত সেবা নিতে পারছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর