সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মালঞ্চ নদীর চর দেবে গিয়ে উপকূল রক্ষা বাঁধের পাঁচ নম্বর পোল্ডারের সিংহড়তলী অংশে ভয়াবহ ধসের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার দুপুরে শুরু হওয়া ধস আজ সোমবার আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এর আগে শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে চুনকুড়ি ও সিংহড়তলী এলাকায় চর দেবে যাওয়ার পর থেকেই বাঁধে ধস শুরু হয়।

খবর পেয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কাজ করছেন।

ধস একেবারে জনবসতির কোল ঘেঁষে হওয়ায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নদীতে জোয়ারের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের অবশিষ্ট দুই থেকে আড়াই ফুট অংশ যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে। এতে সুন্দরবন তীরবর্তী কয়েকটি জনপদ লবণ পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মালঞ্চ নদীর ছয়টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিলেও সিংহড়তলী অংশের অবস্থা সবচেয়ে সংকটাপন্ন। তারা জানান, দ্রুত বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা না হলে পরবর্তী জোয়ারে সাত থেকে আটটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।

স্বেচ্ছাসেবক আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, ‘মাত্র সাত-আট মাস আগে এখানে মাটির কাজ হয়েছিল। বাঁধের পাশে অতিরিক্ত মাটি নেওয়ায় বাঁধ অনেকটা খাড়া হয়ে ছিল। কয়েকদিন ধরে ফাটল দেখা দেয়ার পর শনিবার থেকে ধস শুরু হয়। পাউবো তাৎক্ষণিকভাবে জিওশিট চাপিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও শনিবার রাতে সবকিছু ধসে যায়।’

স্থানীয় বনজীবীদের নেতা বাবলুর রহমান সমকালকে বলেন, শনিবার দুপুরে বাঁধের প্রায় ৩০ ফুট অংশ নদীতে ধসে পড়ে। রোববার সকালের জোয়ারে আরও এক দফা ধসের পর বাঁধের অবশিষ্ট উচ্চতা এখন মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট। তিনি বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সিংহড়তলী, চুনকুড়ি, হরিনগর, যতীন্দ্রনগর, ছোট ভেটখালীসহ অন্তত সাতটি গ্রাম তাৎক্ষণিকভাবে প্লাবিত হতে পারে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নীপা রানী সমকালকে বলেন, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ছয়টি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সিংহড়তলীর অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বসতবাড়ির পাশে ভাঙন দেখা দেয়ায় এলাকাবাসী উদ্বাস্তু হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে একাধিকবার সর্বস্ব হারিয়েছেন।

ঘটনাস্থলে থাকা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

সালাউদ্দীন সমকালকে বলেন, শনিবার বিকেলে ভাঙন কবলিত অংশে শতাধিক জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও তাতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন বাঁধের ভেতর দিয়ে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি জানান, রোববার রাতের মধ্যে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ শেষ করা গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন সমকালকে বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভাটার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। পানি নামলে শত শত গ্রামবাসীকে নিয়ে ভাঙন রোধে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য মনগর

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা

সুন্দরবনে হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে ফেরার সময় বনরক্ষীদের তাড়া খেয়ে নৌকায় মাংস রেখে নদীতে ঝাঁপ দেন তিন ব্যক্তি। দুজন নদী সাঁতরে লোকালয়ে ফিরলেও একজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি তখন। পরদিন সুন্দরবনের মধ্যে খাল থেকে ওই ব্যক্তির লাশ পেয়েছেন স্বজনেরা। তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

লাশ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম মফিজুল সানা। বাড়ি খুলনার সুন্দরবন-সংলগ্ন দাকোপ উপজেলায়। তাঁর শ্বশুরবাড়ি খুলনার পাইকগাছায়। সেখান থেকে তিনিসহ চারজন ১৮ এপ্রিল সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যান। ২২ এপ্রিল ফেরার পথে ওই ঘটনা ঘটে। ২৪ এপ্রিল কয়রার আওতাধীন সুন্দরবনের বেতনাখালী খালের পশ্চিম পাড় থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাবিত মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার ভোরের আলো ফোটার আগে শিবসা নদীর পূর্ব পাশের কেওড়াতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নৌকা থেকে হরিণের ৪টি মাথা ও ৬০ কেজি মাংস জব্দ করা হয়েছিল। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বনরক্ষীদের উপস্থিতি টের পেয়ে নৌকা ফেলে পালিয়ে যান শিকারিরা। তবে কারও মৃত্যু বা লাশ উদ্ধারের বিষয়ে তাঁদের জানা নেই।

এ ঘটনায় মামলা করতে গতকাল মঙ্গলবার কয়রায় আসেন নিহত মফিজুলের বাবা আবদুল মজিদ সানা। তবে থানার পুলিশ মামলা না নেওয়ায় তিনি খুলনার আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আবদুল মজিদ সানা বলেন, ‘আমার ছেলে মফিজুল পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে সুন্দরবনে গিয়েছিল। তার সঙ্গে একই নৌকায় ওই এলাকার মিজান গাজী, রুহুল কুদ্দুস মোড়ল ও বাদশা গাজী ছিলেন। পরে ২২ এপ্রিল রাতে তাঁদের কয়েকজন বাড়ি ফিরে জানান, নৌকায় হরিণের মাংস থাকায় বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা মফিজুলকে আটক করেছে। আর তাঁরা পালিয়ে এসেছেন।’

আবদুল মজিদ আরও বলেন, পরে বন বিভাগে খোঁজ নিলে তাঁরা জানান, কোনো আসামি ধরেননি তাঁরা। ২৪ এপ্রিল সুন্দরবনের বেতনাখালী খালের পশ্চিম পাড় থেকে ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়। শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাত ও পায়ে রশি দিয়ে বাঁধার চিহ্ন স্পষ্ট। এখন তাঁর ছেলের মৃত্যুতে কে বা কারা জড়িত, সেটি খতিয়ে দেখার জন্য মামলা করতে এসেছেন।

তবে মামলা না নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক বলেন, এমন কোনো অভিযোগ নিয়ে কেউ মামলা করতে থানায় আসেননি। বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

মফিজুলের সঙ্গে সুন্দরবনে যাওয়া গড়ইখালী এলাকার মিজান গাজী বলেন, ‘মফিজুলসহ আমরা চারজন সুন্দরবনে গিয়েছিলাম হরিণ শিকার করতে। বনে ফাঁদ পাতার পর হঠাৎ দেখি একদল অস্ত্রধারী ডাকাত আসছে। পালানোর সময় আমাদের সঙ্গে থাকা বাদশা গাজীকে ডাকাতেরা ধরে ফেলে। সে এখনো ডাকাতদের হাতে বন্দী। পরে আমরা তিনজন রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের হড্ডা টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন শিবসা নদী ধরে লোকালয়ের দিকে আসছিলাম। তখন বনরক্ষীরা আলোর ইশারা দেয়। আমরা ভয়ে নৌকা ফেলে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তখন নদীতে প্রচণ্ড তুফান হচ্ছিল। আমাদের তিনজন সাঁতরে কে কোথায় যাচ্ছি বুঝিনি। পরে দুজন নদীর কিনারে পৌঁছালেও মফিজুলকে আর পাইনি। আমরা এলাকার লোকজন ডেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও কোনো সন্ধান পাইনি। ভেবেছিলাম, তাকে হয়তো বনরক্ষীরা ধরে নিয়ে গেছে। এক দিন পর বনের ভেতরে জেলেদের মাধ্যমে লাশের সন্ধান পাই। তখন বনের বেতনাখালী খালের পাড় থেকে মফিজুলের লাশ উদ্ধার করা হয়।’

নিহত মফিজুলের শ্বশুর মোস্তাক গাজী বলেন, সুন্দরবন থেকে অন্যরা ফিরে এসে মফিজুলের নিখোঁজ হওয়ার খবর দেন। তিনি বন বিভাগ, আদালত সবখানে খোঁজখবর নিয়েও হদিস পাননি। এক দিন পর খবর আসে, কয়রার হড্ডা টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন সুন্দরবনের একটি খালে মফিজুলের লাশ ভাসছে। পরে আত্মীয়স্বজন গিয়ে লাশ এনে বাড়িতে দাফন করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের মধুসহ ২৪ পণ্য পেল জিআই সনদ
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ‘জনপদের বর্ষবরণ ১৪৩২’
  • সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়া ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
  • বাঁধভাঙা বন্যার গল্প
  • ‘তোর সময় শেষ’ লেখা চিঠির সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে সাংবাদিককে হুমকি
  • সৌন্দর্যের সন্ধানে সুন্দরবনের গহীনে : দ্বিতীয় পর্ব
  • সাতক্ষীরায় পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত ২
  • সুন্দরবনে অস্ত্রসহ বনদস্যু আটক
  • সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধে বড় ফাটল, ঝুঁকিতে ১৫ গ্রামের মানুষ