চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় ও জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাঁর বড় ভাইকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার উত্তর উপাদী গ্রামে ওই দুজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

আহত এসএসসি পরীক্ষার্থীর নাম সাব্বির হোসেন (১৮) ও তাঁর বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন (২৪)। সাব্বির হোসেনকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে এবং সাদ্দাম হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনায় থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

আহত দুজন উত্তর উপাদী গ্রামের শহীদ তালুকদারের ছেলে। সাব্বির এ বছর মতলব জেবি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আহত দুজনের পরিবারের সঙ্গে একই গ্রামের কাজল ফকির ও তাঁর ছেলে বাদশা ফকিরের দীর্ঘদিনের জমিসংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গতকাল রাত ১০টার দিকে সাব্বিরের বাড়ির সামনে রাস্তায় মাদক বিক্রি করছিলেন বাদশা ফকির। এ সময় সাব্বির ও সাদ্দাম বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বাদশা ফকির সঙ্গে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে সাব্বির ও সাদ্দামকে পেট ও পিঠে ছুরিকাঘাত করেন। তাঁদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে বাদশা ফকির পালিয়ে যান। পরে স্বজনেরা দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শহীদ তালুকদার অভিযোগ করেন, মূলত মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ার কারণে তাঁর দুই ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করেন বাদশা ফকির। এ ঘটনায় আজ সকালে কাজল ফকির ও বাদশা ফকিরকে আসামি করে থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে কাজল ফকির ও তাঁর ছেলে বাদশা ফকিরের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি। স্থানীয় লোকজন বলেন, ঘটনার পর থেকে তাঁরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালেহ আহাম্মদ বলেন, এ ঘটনায় থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন

সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।

স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, ‍“নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”

মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।” 

পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”

মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্দোলনে গিয়ে ‘অসুস্থ হয়ে’ মারা যাওয়া শিক্ষকের স্মরণে কালোব্যাজ ধারণ
  • মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ
  • শিক্ষক সমাবেশে সাউন্ড গ্রেনেডে আহত শিক্ষকের ঢাকায় মৃত্যু
  • ঢাকায় সমাবেশে আহত সেই শিক্ষিকা মারা গেছেন
  • রুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা ২৩ জানুয়ারি, এবার পরীক্ষা কেন্দ্র ২টি, ২০২২ সালের এসএসসি পাসেও আবেদন