প্রতিবছর কোরবানি ঈদের সময় চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে দাম বাড়ে সব ধরনের মসলার। তবে, এবছর মসলার বাজারের ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।
শুক্রবার (৩০ মে) রাজধানীর নিউমার্কেট ও কারওয়ানবাজারের কয়েকটি মসলার দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বেশিরভাগ মসলার দাম কমেছে। অপরিবর্তিত রয়েছে কয়েকটির দাম। বেড়েছে এলাচের দাম।
এলাচ:
এলাচ মাংস রান্না করার একটি অন্যতম মসলা উপাদান। এলাচের মধ্যে অনেক ধরনের জাত রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এলাচ হলো জাম্বু। এই এলাচ বা বড় এলাচ গুয়েতেমালা এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়।
আরো পড়ুন:
বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে: ড.
চবিতে বিআইসিএমর বিনিয়োগ শিক্ষা প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত, এমওইউ স্বাক্ষর
বাজারে গতমাসে (এপ্রিল) কেজিপ্রতি জাম্মু এচাল বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকা দরে। একই মানের জাম্মু এলাচ গতবছর কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার টাকা দরে। এছাড়াও সাধারণ যে এলাচ রয়েছে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮০০ টাকা কেজি দরে যা গতবছর একই সময়ে ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কোলো জাতের এলাচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০৪০ টাকায়, যা গতবছর একই সময়ে ২৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জিরা:
কোরবানির ঈদ আসলে বাজারে জিরার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিগত বছরগুলোতে ঈদের সময় জিরার দাম বৃদ্ধি পেলেও এবার দাম কমেছে।
এই মসলাটি মূলত ভারত, তুরস্ক এবং মিসর থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়। বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা জিরার দাম ভিন্ন ভিন্ন রয়েছে।
ক্রেতাদের কাছে প্রচলিত যে জিরাটি বেশি জনপ্রিয় এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬৮০টাকা, যা গত বছর ছিল ৭২০ টাকা।
দারুচিনি:
দারুচিনি মাংস রান্না করার একটি অন্যতম মসলা উপাদান। বাংলাদেশ সাধারণত দারুচিনি চীন, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং মাদাগাস্কার থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানিকারকরা ‘সিলন দারুচিনি’ বেশি আমদানি করেন, কারণ এটা উচ্চ মানের এবং সুগন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
বাজারে এখন সবচেয়ে প্রচলিত যে দারুচিনি রয়েছে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকা কেজি দরে যা গতবছরে ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
লবঙ্গ:
লবঙ্গ মসলাটি মাংস রান্না ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবহার আছে। লবঙ্গ Syzygium aromaticum নামের একটি গাছের ফুলের কুঁড়ি, যা শুকিয়ে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লবঙ্গের বিভিন্ন ওষুধি গুনাগুণ রয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশে লবঙ্গের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লবঙ্গ মূলত আমদানি হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে। কয়েক বছর মাদাগাস্কার থেকেও লবঙ্গ আমদানি হচ্ছে। এখন বাজারে যে লবঙ্গ পাওয়া যায় তা গড়ে ১৩০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। গতবছর একই লবঙ্গ বিক্রি হয়েছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে।
গোলমরিচ:
অন্যান্য মসলার মতো গোলমরিচও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হয় বাংলাদেশে। ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, মাদাগাস্কার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর থেকে এই মসলাটি আমদানি হয়ে থাকে। বাজারে দুই ধরনের গোলমরিচ পাওয়া যায়। সাদা গোলমরিচ ও কালো গোলমরিচ।
মানভেদে এই দুই ধরনের গোলমরিচের দামের তারতম্য রয়েছে। তবে বাজারে এখন সবচেয়ে যে ভালো গোলমরিচ পাওয়া যায় সেটা বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা কেজিতে। সাধারণ গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে। যা গতবছরে ছিল ১৩০০ টাকা।
জয়ফল:
জয়ফল মসলা হিসেবে বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের জয়ফল মূলত শ্রীলঙ্কা ও ভারত থেকে আমদানি হয়। জয়ফলের দাম আকারের উপর নির্ভর করে। আবার খোসাসহ ও খোসা ছাড়াও পাওয়া যায়।
বাজারে এখন যে জয়ফল পাওয়া যায় সেগুলো গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা গত বছর ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে।
এছাড়াও, মানভেদে প্রতি কেজি মরিচের গুঁড়া (খোলা) ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, হলুদের গুঁড়া (খোলা) ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, ধনেগুঁড়া ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, পাঁচফোড়ন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি রসুন ১৪০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা, দেশি আদা ১২০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মসলার দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজধানীর নিউমার্কেটের নিউ বিসমিল্লাহির মসলা হাউজের সত্ত্বাধিকারী মো. আল আমিন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় মসলার দাম কম। শুধুমাত্র এলাচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এবছর এখন পর্যন্ত বিক্রি কম। গতবছর এ সময়ে আমাদের বিক্রি বেশি ছিল। বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা কম। আশা করছি, ঈদের আগে আমাদের মসলা বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।”
নিউমার্কেটের আমিন এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আমিন উল্লাহ বলেন, “গত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর মসলার দাম অনেক কম। আমরা বিক্রি করেও শান্তি পাচ্ছি এবং ক্রেতাদের কোনো অভিযোগ নেই। এ বছর শুধু এলাচের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু গত মাসের তুলনায় এ মাসে আবার দাম কমেছে। মানুষ তাদের চাহিদা মতো মসলা কিনছে। এখনো মসলা বাজারে জমে ওঠেনি। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের বেচাবিক্রি ভালো হবে।”
ঢাকা/রায়হান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মসল র দ ম গতবছর এ র দ ম কম ব যবহ র গ লমর চ গত বছর এল চ র লবঙ গ ধরন র র মসল আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
এলাচ বাদে কমেছে অধিকাংশ মসলার দাম
প্রতিবছর কোরবানি ঈদের সময় চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে দাম বাড়ে সব ধরনের মসলার। তবে, এবছর মসলার বাজারের ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।
শুক্রবার (৩০ মে) রাজধানীর নিউমার্কেট ও কারওয়ানবাজারের কয়েকটি মসলার দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বেশিরভাগ মসলার দাম কমেছে। অপরিবর্তিত রয়েছে কয়েকটির দাম। বেড়েছে এলাচের দাম।
এলাচ:
এলাচ মাংস রান্না করার একটি অন্যতম মসলা উপাদান। এলাচের মধ্যে অনেক ধরনের জাত রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এলাচ হলো জাম্বু। এই এলাচ বা বড় এলাচ গুয়েতেমালা এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়।
আরো পড়ুন:
বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে: ড. আনিসুজ্জামান
চবিতে বিআইসিএমর বিনিয়োগ শিক্ষা প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত, এমওইউ স্বাক্ষর
বাজারে গতমাসে (এপ্রিল) কেজিপ্রতি জাম্মু এচাল বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকা দরে। একই মানের জাম্মু এলাচ গতবছর কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার টাকা দরে। এছাড়াও সাধারণ যে এলাচ রয়েছে এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮০০ টাকা কেজি দরে যা গতবছর একই সময়ে ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কোলো জাতের এলাচ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০৪০ টাকায়, যা গতবছর একই সময়ে ২৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জিরা:
কোরবানির ঈদ আসলে বাজারে জিরার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিগত বছরগুলোতে ঈদের সময় জিরার দাম বৃদ্ধি পেলেও এবার দাম কমেছে।
এই মসলাটি মূলত ভারত, তুরস্ক এবং মিসর থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়। বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা জিরার দাম ভিন্ন ভিন্ন রয়েছে।
ক্রেতাদের কাছে প্রচলিত যে জিরাটি বেশি জনপ্রিয় এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬৮০টাকা, যা গত বছর ছিল ৭২০ টাকা।
দারুচিনি:
দারুচিনি মাংস রান্না করার একটি অন্যতম মসলা উপাদান। বাংলাদেশ সাধারণত দারুচিনি চীন, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং মাদাগাস্কার থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানিকারকরা ‘সিলন দারুচিনি’ বেশি আমদানি করেন, কারণ এটা উচ্চ মানের এবং সুগন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
বাজারে এখন সবচেয়ে প্রচলিত যে দারুচিনি রয়েছে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকা কেজি দরে যা গতবছরে ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
লবঙ্গ:
লবঙ্গ মসলাটি মাংস রান্না ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবহার আছে। লবঙ্গ Syzygium aromaticum নামের একটি গাছের ফুলের কুঁড়ি, যা শুকিয়ে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লবঙ্গের বিভিন্ন ওষুধি গুনাগুণ রয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশে লবঙ্গের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লবঙ্গ মূলত আমদানি হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে। কয়েক বছর মাদাগাস্কার থেকেও লবঙ্গ আমদানি হচ্ছে। এখন বাজারে যে লবঙ্গ পাওয়া যায় তা গড়ে ১৩০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। গতবছর একই লবঙ্গ বিক্রি হয়েছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে।
গোলমরিচ:
অন্যান্য মসলার মতো গোলমরিচও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হয় বাংলাদেশে। ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, মাদাগাস্কার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর থেকে এই মসলাটি আমদানি হয়ে থাকে। বাজারে দুই ধরনের গোলমরিচ পাওয়া যায়। সাদা গোলমরিচ ও কালো গোলমরিচ।
মানভেদে এই দুই ধরনের গোলমরিচের দামের তারতম্য রয়েছে। তবে বাজারে এখন সবচেয়ে যে ভালো গোলমরিচ পাওয়া যায় সেটা বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা কেজিতে। সাধারণ গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে। যা গতবছরে ছিল ১৩০০ টাকা।
জয়ফল:
জয়ফল মসলা হিসেবে বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের জয়ফল মূলত শ্রীলঙ্কা ও ভারত থেকে আমদানি হয়। জয়ফলের দাম আকারের উপর নির্ভর করে। আবার খোসাসহ ও খোসা ছাড়াও পাওয়া যায়।
বাজারে এখন যে জয়ফল পাওয়া যায় সেগুলো গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা গত বছর ছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে।
এছাড়াও, মানভেদে প্রতি কেজি মরিচের গুঁড়া (খোলা) ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, হলুদের গুঁড়া (খোলা) ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, ধনেগুঁড়া ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, পাঁচফোড়ন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি রসুন ১৪০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা, দেশি আদা ১২০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মসলার দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজধানীর নিউমার্কেটের নিউ বিসমিল্লাহির মসলা হাউজের সত্ত্বাধিকারী মো. আল আমিন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় মসলার দাম কম। শুধুমাত্র এলাচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এবছর এখন পর্যন্ত বিক্রি কম। গতবছর এ সময়ে আমাদের বিক্রি বেশি ছিল। বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা কম। আশা করছি, ঈদের আগে আমাদের মসলা বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।”
নিউমার্কেটের আমিন এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আমিন উল্লাহ বলেন, “গত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর মসলার দাম অনেক কম। আমরা বিক্রি করেও শান্তি পাচ্ছি এবং ক্রেতাদের কোনো অভিযোগ নেই। এ বছর শুধু এলাচের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু গত মাসের তুলনায় এ মাসে আবার দাম কমেছে। মানুষ তাদের চাহিদা মতো মসলা কিনছে। এখনো মসলা বাজারে জমে ওঠেনি। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের বেচাবিক্রি ভালো হবে।”
ঢাকা/রায়হান/মাসুদ