আট কোটি টাকার প্রকল্প চালুর আগেই অচল
Published: 12th, June 2025 GMT
পদ্মা ও বড়াল নদীবেষ্টিত রাজশাহীর চারঘাট অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর অন্তত এক ফুট নামছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট এতটাই তীব্র হয়, ভ্যানগাড়িতে ট্যাঙ্ক নিয়ে বাড়ি বাড়ি পানি সরবরাহ করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালে চারঘাট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ গ্রহণ করে।
প্রকল্পের আওতায় ২৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, পাঁচটি পাম্পহাউস ও ৬ লাখ ৮০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার ওভারহেড পানির ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হয়। এর পর সাত বছরে চারবার প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আজও এ প্রকল্প থেকে এক ফোঁটা পানি পায়নি পৌরবাসী। উল্টো প্রকল্পের সুবিধা ভোগের আগেই যন্ত্রপাতি
অকেজো হয়ে পড়েছে। মিলেছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ঘটা করে প্রকল্পকাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি ও তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। দরপত্র অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর। এর পর সাত বছরে চারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও কোনো স্থাপনা চালু করা যায়নি। এরই মধ্যে গত ১৩ আগস্ট প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে বিল তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুক্তা কনস্ট্রাকশন।
চারঘাট পৌরসভা সূত্র জানায়, দেশের প্রথম শ্রেণির ১৯টি পৌরসভায় বিশেষ এ প্রকল্প নেওয়া হয়। এডিবি এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ প্রকল্পের (ইউজিপ-৩) আওতায় বাস্তবায়ন করা হয় প্রকল্পটি। প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অন্তত ৪৪ হাজার মানুষ এর সুবিধা ভোগ করত।
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষামূলক মাত্র এক দিন পাম্পগুলো চালু করা হয়। কিন্তু চালুর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই অধিকাংশ পাইপলাইন ফেটে যায় ও বিভিন্ন পাম্প অকেজো হয়ে যায়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, দরপত্র অনুযায়ী প্রকল্পে পাঁচটি পাম্পহাউসে ২৫ হর্সপাওয়ারের পাম্প স্থাপনের কথা। কিন্তু স্থাপন করা হয়েছে ১৫ হর্সপাওয়ারের। যে ২৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে পাইপের পুরুত্ব হওয়ার কথা ৫ মিলিমিটার। কিন্তু দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৭ মিলিমিটার পুরুত্বের পাইপ। মাটির চার ফুট নিচে পাইপগুলো স্থাপনের কথা থাকলেও মাত্র দুই ফুট নিচে স্থাপন করা হয়েছে। ফলে পাম্প চালুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সব পাইপলাইন ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। অকেজো হয়ে গেছে পাম্পও। এ ছাড়া প্রকল্পে ব্যবহৃত প্রতিটি সরঞ্জামই নিম্নমানের দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মজিবর রহমান। তিনি বলেন, পানির পাইপ ও পাম্প স্থাপনে দরপত্রের ন্যূনতম নীতিমালা মানা হয়নি। প্রকল্প চলাকালে আমাদের কাজ দেখতে দেওয়া হতো না। প্রকল্প বুঝে পাওয়ার পর দেখি পাইপ, পাম্প, পাইপ স্থাপন সবকিছুতেই অনিয়ম। এ প্রকল্প সচল করা সম্ভব নয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চারঘাট উপজেলার সহসভাপতি আঞ্জুমান আরা বলেন, পানি সরবরাহের নামে প্রকল্পের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। স্থাপনা দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু ভেতরে সব নিম্নমানের অকেজো সরঞ্জাম। প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার, প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ব্যক্তি টাকা ভাগাভাগি করেছে বলে শুনেছি।
পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, আমি দুই মাস আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী কাগজ-কলমে আমি থাকলেও বাস্তবে কোনো কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তার পরও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ দেখে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন পানি সরবরাহ না হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুক্তা কনস্ট্রাকশনের পক্ষে কাজটি করছেন বাঘা উপজেলা পৌর যুবলীগের সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু। তিনি বর্তমানে পলাতক। জানা গেছে, পিন্টু ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের ঘনিষ্ঠজন। ফলে আরও অনেক ঠিকাদারকে টপকে মুক্তা কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে পিন্টুকে কাজ দেওয়া হয়।
চারঘাট পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, ওই প্রকল্পের সব সরঞ্জাম ব্যবহারের আগেই অকেজো হয়ে গেছে। কোনোভাবেই সেই পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সমাধানে গত ২৪ এপ্রিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবদুল বারেক বলেন, চলমান প্রকল্পে পানি সরবরাহ সংক্রান্ত কোনো কম্পোনেন্ট ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত নেই। ফলে প্রকল্পের আওতায় চারঘাট পৌরসভার ওভারহেড ট্যাঙ্কসহ পানি সরবরাহ লাইন সঞ্চালনের কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র সরবর হ র প রক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।