প্রথম প্রথম বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল যখন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হতো, তখন দেখা যেত, ওয়েবসাইট সারা বছর কাজ করত, শুধু ফলাফল প্রকাশের দিনে কাজ করত না। এত এত ব্যবহারকারীর একসঙ্গে ফলাফল দেখার অনুরোধে সার্ভার ডাউন হয়ে যেত। উচিত হতো ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এক দিনের জন্য বেশি ক্ষমতার সার্ভার প্রস্তুত রাখা। 

তবে যে প্রতিষ্ঠান কাজটি করেছে, তাদের দিক থেকে তারা বলতেই পারত, বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৬৪ দিন, অর্থাৎ শতকরা ৯৯ ভাগের বেশি সময়, সাইট ঠিকঠাক কাজ করে। কিন্তু বাস্তবে ফলাফল প্রকাশের ওই এক দিনই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এক শতে নিরানব্বই পাওয়া সিস্টেমও অর্থহীন, যদি অতি প্রয়োজনের ওই এক দিন কাজ না করে থাকে।

পবিত্র ঈদুল আজহায় সরকারি ছুটি ছিল ১০ দিন। সে অনুযায়ী বন্ধ ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বভাবতই ব্যাংক যখন বন্ধ থাকবে, তখন বিকল্প হিসেবে গ্রাহক এটিএম বুথে যাবে।

এটিএম বুথ গ্রাহকের জন্য অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক একটি ব্যবস্থা। রাতবিরাতে, অসুখ-বিসুখে, বিপদ-আপদে মানুষ এটিএম বুথের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু বন্ধের এই জরুরি সময়ে, যখন মানুষের সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল এটিএম বুথের, তখন এটিএম বুথগুলো মুখ ফিরিয়ে নিল। আশাহত হলো গ্রাহক। কোনো এটিএম বুথ মেসেজ দেখাল আউট অব সার্ভিস, কোনোটি দেখাল ইনভ্যালিড কার্ড। কোনোটি আবার কোনো মেসেজ দেখানোর সৌজন্য না দেখিয়ে কেবল ‘টুট টুট’ শব্দ করে স্লট থেকে কার্ড বের করে দিল। 

কোনো কোনো ব্যাংকের এটিএম আবার শুধু নিজেদের গ্রাহকদের টাকা দিতে রাজি হলেও অন্যদের ক্ষেত্রে অপারগতা প্রকাশ করল। সেটিও আবার স্বাভাবিকের চেয়ে কম টাকা তোলার সুযোগ দিয়ে। প্রায় সব ব্যাংকের গ্রাহকেরাই এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে কমবেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন (প্রথম আলো, ১১ জুন ২০২৫)। এটিএমে টাকার সংকটে বুথে বুথে ঘুরেছেন গ্রাহক (বণিক বার্তা, ১২ জুন ২০২৫)। অথচ কোরবানির এই সময়ে মানুষের টাকা লাগবে বেশি, যৌক্তিক ছিল এ সময় স্বাভাবিকের থেকে বেশি টাকা তোলার সুযোগ রাখার।

ব্যাংকগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে এ সেবা পরিচালনা করা হয়তো লাভজনক নয়। এর পেছনে বেশ ভালো রকমের ব্যবস্থাপনা খরচ লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাড়াগাঁয়ের একজন দোকানদারও তো বোঝেন, দোকানে চা বিক্রি করে তিনি বেশি লাভ করতে পারবেন না। কিন্তু চায়ের উপলক্ষে ক্রেতা এলে সঙ্গে যে অন্য বাজারসদাই করে নিয়ে যাবেন, লাভ সেখান থেকে হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল পর্যন্ত দেশে এটিএম বুথের সংখ্যা ১২ হাজার ৯২৯। সঙ্গে আছে ৭ হাজার ২২৯টি সিআরএম বা ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন, যেটির মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়া ও উত্তোলন—দুটিই করা যায়। শুধু এপ্রিল মাসেই এটিএম বুথে ২ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০টি লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে, টাকার অঙ্কে যেটির পরিমাণ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। একই মাসে সিআরএমে সম্পন্ন হয় ১৫ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকার দেড় কোটির বেশি লেনদেন। এ হিসাব থেকে সহজে অনুমেয়, কী পরিমাণ গ্রাহক লেনদেনের জন্য এটিএম বুথের ওপর নির্ভরশীল।

ব্যাংকগুলো বলছে, বন্ধে লোকবলসংকট। ঈদের সময় চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বুথগুলোয় টাকা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। শহরের বুথগুলোয় কাছাকাছি শাখা থেকে টাকা সরবরাহ করা গেলেও দূরবর্তী বুথগুলোয় তাৎক্ষণিক টাকা জোগান দিতে সমস্যা তৈরি হয় (প্রথম আলো, ১১ জুন ২০২৫)।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, সমস্যা শুধু দূরবর্তী বুথে হয়নি, হয়েছে একেবারে শহরের প্রাণকেন্দ্রেও। তা ছাড়া এই ব্যতিক্রমী সময়ে দূরবর্তী বুথগুলোয় টাকা জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা তো করতে হতো। বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলের ওয়েবসাইটের মতো সারা বছর টাকা জোগান দিয়ে যতটুকু না গ্রাহক সন্তুষ্টি হলো, বহুল প্রয়োজনের সময় সেবা বন্ধ রেখে সারা বছরের সে অর্জিত আস্থা তো নষ্ট হয়ে গেল।

ব্যাংকগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে এ সেবা পরিচালনা করা হয়তো লাভজনক নয়। এর পেছনে বেশ ভালো রকমের ব্যবস্থাপনা খরচ লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাড়াগাঁয়ের একজন দোকানদারও তো বোঝেন, দোকানে চা বিক্রি করে তিনি বেশি লাভ করতে পারবেন না। কিন্তু চায়ের উপলক্ষে ক্রেতা এলে সঙ্গে যে অন্য বাজারসদাই করে নিয়ে যাবেন, লাভ সেখান থেকে হবে। 

ওদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ‘কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া’ হবে বলে হাঁকডাক দিয়েই যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্কটা যেন শুধুই কঠোরতার, অধিকর্তা আর অধীনস্থের। এক পক্ষ খালি কঠোর হবে, আরেক পক্ষ পারুক না পারুক, বিনয়ে নুইয়ে পড়বে। সম্পর্কটা কেন সহযোগী ভূমিকার হতে পারে না? 

অনলাইন ব্যাংকিং, অ্যাপ, এটিএম ইত্যাদি প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ দেশের মানুষকেও স্বস্তি দিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন প্রশংসনীয় উদ্যোগের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের জন্য সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ‘বন্ধু তুই লোকাল বাস, আদর কইরা ঘরে তুলস, ঘাড় ধইরা নামাস’ গানের মতো আমরা প্রত্যাশা করি না, তারা আদর করে অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে নিয়ে বিরস বদনে গ্রাহককে এটিএম বুথ থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করবে। 

বি এম মইনুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব যবস থ গ র হক প রক শ র জন য প রথম ফল ফল

এছাড়াও পড়ুন:

সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন

র‍াস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা

রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।” 

দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।” 

তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” 

পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন