রাজধানীর বাজারগুলোতে ঈদের পর খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে, চড়া গরুর মাংসের দামও। তবে অনেকটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে ব্রয়লারসহ অন্যান্য জাতের মুরগির মাংস। মাছের বাজার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় স্বস্তিতে ক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, চালকল মালিকরা ঈদের পরে কারবার চাঙ্গা হওয়ায় সঙ্গে এই দাম বৃদ্ধি করেছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন মিলগেটে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চালের দাম ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

আজ শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতি কেজি চাল ২ থেকে ৫ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮০ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে।

এদিকে ছোট বাজারে ও পাড়ার মুদি দোকানে এ দাম আরেকটু বেশি। রামপুরা বাজারে চাল বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, ঈদের পর থেকে চালের দাম বস্তায় ৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি। দিনাজপুর, নওগাঁ ও কুষ্টিয়া সব মোকামেও চালের দাম বাড়ছে।

তিনি বলেন, মিল মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলছেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম এখন বেড়েছে।

এদিকে ঢাকার বাজারে ঈদের পর থেকে বেশ স্বস্তিদায়ক মুরগি, ডিম ও মাছ, সবজিসহ অন্যান্য বেশকিছু পণ্যের দাম। আবার এরমধ্যে মুদি পণ্যগুলো দামেও তেমন হেরফের হয়নি। কম দামে কেনা যাচ্ছে পেঁয়াজ আলুসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যও।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫০ টাকায় নেমে এসেছে। আর ডিমের ডজন এখন ১২০-১৩০ টাকা। ঈদের পর রাজধানীর বাজারে এখনো ক্রেতা উপস্থিতি কম। আবার ঈদুল আজহার কোরবানি মাংসও রয়েছে বেশিরভাগ ঘরে। যে কারণে ডিম-মুরগির চাহিদা কম।

আজ শুক্রবারও বেশিরভাগ দোকানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যেখানে ঈদের আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। সেই হিসাবে ঈদের ছুটির আগে-পরে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ২০ টাকা কমেছে।

ব্রয়লারের পাশাপাশি সোনালি মুরগির দামও কমেছে। আজ বাজারে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়।

অন্যদিকে বাজারে পোটল, ঢ্যাঁড়স ও ঝিঙের মতো বিভিন্ন সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে মিলছে। বড় বাজার, আবার ভ্রম্যমাণ দোকানে দাম আরও কম। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদের পর থেকে রাজধানীর বাজারে সবজির দাম নিম্নমুখী।

এদিকে মুরগির দাম কমলেও বাজারে আগের মতোই চড়া রয়েছে খাসি ও গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়। 

সেলিনা হোসেন নামের এক গৃহিণী বলেন, এক কেজি গরুর মাংস নিয়েছি ৮০০ টাকায়। দাম কিছুটা বেশিই মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। দামাদামি করারও কোনো সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীদের ভাবখানা এমন যে নিলে নেন, না নিলে বিদায় হন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ রদর ব জ র দর ম রগ র দ ম ঈদ র পর

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৬ গ্রাম প্লাবিত

ফেনীর ফুলগাজীতে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত ১০টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বরইয়া এলাকার বণিকপাড়া ও সিলোনিয়া নদীর গোসাইপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।

শুক্রবার (২০ জুন) সকাল পর্যন্ত উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বসন্তপুর, জগতপুর, বাসুড়া ও বিজয়পুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুসমান পানি জমে। বাঁধ ভাঙার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বছরের পর বছর ধরে দায়সারা কাজ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

উত্তর বরইয়ার বাসিন্দা নিশাদ বলেন, “একটু পানি বাড়লেই আমাদের ঘর পানিতে পুরোপুরি ডুবে যাবে। আমরা পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি। কোথায় যাব, কীভাবে রক্ষা পাব বুঝতে পারছি না।”

আরো পড়ুন:

হঠাৎ বন্যা, পানির নিচে চলনবিলের ১১৩ হেক্টর জমির ধান  

দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে

বরইয়া এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, “গতকাল সকাল থেকেই নদীতে পানি বাড়ছিল। স্থানীয়রা মিলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হইনি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারো সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে এসেছে।”

বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদ বলেন, “প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ে এমন হয়। একটু বৃষ্টি হলেই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে পড়ে। দোকানের পণ্য ভিজে যায়, বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। অভিযোগ করে লাভ নেই। এখন এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।”

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “গতকাল রাত ১০টার দিকে উত্তর বরইয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে অন্তত চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার বৃষ্টিপাত কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকায় অবস্থান করছেন। পানি নেমে গেলে সংস্কার কাজ শুরু হবে।”

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, “উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলছে।”

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির চাপেই বাঁধ দুটি ভেঙেছে। আজ দুপুরে পানি নামতে শুরু করেছে। নদীর পানি এ মূহূর্তে বিপৎসীমার ৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি, বিষয়টি তদন্তাধীন।”

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।”

২০২৪ সালের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জন প্রাণ হারান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোসহ প্রায় সব খাত। পানিবন্দি হন ১০ লাখের বেশি মানুষ।

ঢাকা/সাহাব/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ