মাহির-বর্ষাসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা, প্রেমের কারণে খুন বলছে পুলিশ
Published: 21st, October 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর ভাই হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বংশাল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। আসামিরা হলেন, মাহির রহমান, বার্জিস শাবনাম বর্ষা ও ফারদীন আহম্মেদ আয়লান।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, প্রেমের দ্বন্দ্ব থেকে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। বার্জিসের সঙ্গে মাহির রহমানের ৯ বছরের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে বর্ষা ও জোবায়েদের সম্পর্ক হয়। এতে মাহির ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন।
ওসি আরও বলেন, সম্পর্কের টানাপোড়েনের একপর্যায়ে বর্ষা প্রথমে মাহিরকে প্রত্যাখ্যান করলেও পরে আবার যোগাযোগ করে জানান, জোবায়েদকে তাঁর আর ভালো লাগে না। পরে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বর্ষা ও মাহির।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বর্ষা হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। পরে মাহির ও বর্ষাকে মুখোমুখি করলে তারা পুরো ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বংশাল থানার ওসি।
গতকাল রোববার রাতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। জোবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
আরও পড়ুনপ্রধান সন্দেহভাজন মাহিরকে থানায় দিলেন তাঁর মা১৭ ঘণ্টা আগেসহপাঠী ও পুলিশের তথ্যমতে, ভবনটির একটি বাসায় উচ্চমাধ্যমিকের এক ছাত্রীকে পড়াতেন জোবায়েদ।
পুলিশের বরাতে জানা যায়, সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনাস্থল থেকে দুজন তরুণকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়, যদিও তাদের মুখ পরিষ্কারভাবে দেখা যায়নি।
গতকাল সোমবার সকালে মা রেখা আক্তার মাহিরকে বংশাল থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বলে তাঁদের এক স্বজন জানান। তবে পুলিশ বলছে, মাহিরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন১৮ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি, প্রেমের কারণে খুন সন্দেহ পুলিশের২০ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মতলবে দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন যুবদল নেতা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. হোসেন মিয়া হঠাৎ করেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি এ ঘোষণা দেন। ভিডিওতে তাকে দুধ দিয়ে গোসল করতে দেখা যায়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভিডিওর সাথে দেওয়া স্ট্যাটাসে ক্ষোভ, হতাশা ও বঞ্চনার কথা প্রকাশ করেছেন হোসেন মিয়া। তিনি লিখেছেন: আমার এই ভিডিওটা দেখার পর সবার কাছে আমি হাসির পাত্র হিসেবে থাকবো, এমনিতেই আমি আজ সবার হাসির পাত্র। আমি ধ্বংস হইনি। আমাকে ধ্বংস করা হয়েছে, আর সেটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সিস্টেমের কাছে যে সিস্টেমটার নাম হচ্ছে টাকা আর ষড়যন্ত্র।
তিনি আরও লেখেন, আমার কাছের মানুষগুলো আমার সাথে ষড়যন্ত্র করেছে। আমার মতো মানুষের রাজনীতিতে দুই-চারটা না থাকলে কিছুই হবে না। কিন্তু একটা প্রশ্ন রেখে যাই আমার লড়াইটা কিসের জন্য ছিল? আমার লড়াইটা ছিল বিএনপির জন্য, যুবদলের জন্য, চাঁদপুর-২ আসনের মনোনীত প্রার্থী জালাল সাহেবের জন্য।
হোসেন মিয়া দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ‘দোসরদের যোগসাজশে’ তাকে রাজনীতি থেকে সরানো হয়েছে। আজ বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের দোসররা মিলেমিশে ষড়যন্ত্র করে, টাকার পাওয়ারে, ক্ষমতার পাওয়ারে আমার মত ক্ষুদ্র কর্মীকে ধ্বংস করেছে- লেখেন তিনি।
পোস্টে তিনি আরো উল্লেখ করেন, সকল প্রকার রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। বলার মতো অনেক কথা আছে কিন্তু ভাষা নেই। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
হোসেন মিয়ার ভিডিও ও বক্তব্য ঘিরে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, অনেকে এ ঘটনাকে ‘আবেগী সিদ্ধান্ত’ বা ‘অতিরঞ্জন’ হিসেবে দেখছেন।
কলাকান্দা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. মহসিন ও সাধারণ সম্পাদক রফিক তাতী এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, কলাকান্দা ইউনিয়ন যুবদলের অন্যতম সক্রিয় সদস্য মোহাম্মদ হোসেনের প্রতি গ্রাম্য সালিশে অপমানজনক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা শুধু তার প্রতি নয় কলাকান্দা ইউনিয়ন যুবদলসহ সংগঠনের মর্যাদা ও আত্মসম্মানের ওপর প্রকাশ্য আঘাত।
তারা আরও বলেন, রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপমান ও অসম্মান করার এই আচরণ অগ্রহণযোগ্য, নিন্দনীয় এবং পরিকল্পিত। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
যুবদল নেতারা দাবি করেন, এই সালিশ বিচারের মাধ্যমে যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত এবং যারা অপমানজনক রায় প্রদান করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ জামান টিপু বলেন, ‘‘আমরা হোসেন মিয়ার ভিডিওটি দেখেছি। রাজনীতি হচ্ছে আদর্শ ও সংগঠনের জন্য কাজ করার জায়গা। ব্যক্তিগত হতাশা বা চাপের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া দুঃখজনক। তিনি আমাদের কর্মী ছিলেন, ভুল বোঝাবুঝি বা অভিমান থাকলে আলোচনা ও সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যেই সমাধান হতে পারত। আমরা তাকে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যুবদলে কাউকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কখনো ব্যক্তিগতভাবে নেয় না। দলের নিয়ম, কমিটি ও মূল্যায়নের ভিত্তিতেই সব সিদ্ধান্ত হয়। যদি তিনি মনে করেন কেউ অন্যায় করেছে সংগঠন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।’’
ঢাকা/অমরেশ//