শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে ট্রেনের টিকিট যেন সোনার হরিণ
Published: 21st, October 2025 GMT
শায়েস্তাগঞ্জ জংশন। এটি হবিগঞ্জ জেলার একমাত্র রেলওয়ে জংশন হিসেবে গুরুত্ব বহন করছে। ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে সেকশনের সিলেট বিভাগে পাঁচটি জংশন ছিল। এরমধ্যে অন্যতম ছিল এই জংশন। বর্তমানে প্রতিদিন এখান থেকে বিভিন্ন ট্রেনযোগে আড়াই থেকে তিন হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করেন। ট্রেন ভ্রমণের আগে টিকিট কিনতে গেলেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। এখানে টিকিট যেন সোনার হরিণ।
মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জে শিল্পাঞ্চলে কাজ করেন দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েক লাখ শ্রমিক। তাদের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা এই জংশন। অথচ, টিকিটের সংখ্যা এক দশকেও বাড়েনি একটিও। অনেকেই টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিট (দাঁড়ানো টিকিট) নিয়ে প্রচণ্ড ভিড়ে ট্রেন ভ্রমণে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে আবার ভেতরে জায়গা না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
আরো পড়ুন:
তিস্তাপাড়ে দুর্ভোগ কমেনি, পুনর্বাসনে নেই কার্যকর পদক্ষেপ
কমেছে তিস্তার পানি, দুর্ভোগে মানুষ
টিকিট বরাদ্দ সম্পর্কে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়- জেলার সাড়ে ২৩ লাখ মানুষের জন্য এই জংশনে আন্তঃনগর ছয়টি ট্রেনের টিকিটের সংখ্যা মাত্র ৩১৯টি। এর মধ্যে, সিলেট-ঢাকা লাইনে চলাচলকারী কালনী এক্সপ্রেসের টিকিট রয়েছে ৪৩টি, জয়ন্তিকা এক্সেপ্রেসে ৭০টি, পারাবত এক্সপ্রেসে ৩৫টি, উপবনের ৫০টি টিকিট রয়েছে। অন্যদিকে, সিলেট-চট্টগ্রাম লাইনের পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ৬৬টি এবং উদয়ন এক্সপ্রেসে ৫৫টি টিকিট রয়েছে। যাত্রীর সংখ্যা যেখানে আড়াই থেকে তিন হাজার, সেখানে এই টিকিট পাওয়া কষ্টকে বাড়িয়েই তুলছে শুধু।
যাত্রীদের অভিযোগ- শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে ৩১৯টি টিকিট থাকলেও তার বেশিরভাগই চলে যায় কালোবাজারির হাতে। রাত ১২টার পরই নামে-বেনামে টিকিট সংগ্রহ করে চক্রটি। সকাল থেকেই দাম বাড়িয়ে যাত্রীদের কাছে এসব টিকিট বিক্রি করে তারা।
শায়েস্তাগঞ্জ জংশন কথা হয় চট্টগ্রামগামী যাত্রী গাজীউর রহমান সাজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, “কোনভাবে টিকিট কালোবাজারি থামছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে টিকিটের ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়ে। যারা কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত, তারা খুব সহজেই টিকিট পেয়ে যায়, বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। কারণ, ওই চক্রের কাছ থেকে বেশি দামে টিকিট কাটতে হয়।”
ঢাকাগামী যাত্রী সেলিম মিয়া বলেন, “এই জংশন দিয়ে বেশির ভাগ মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন। সময় মতো টিকিট না পেয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রেন ও টিকিটের বরাদ্দ বাড়াতে কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।”
অপর যাত্রী রতন মিয়া বলেন, “দিন দিন যাত্রী বেড়েই চলেছে। বাড়ছে না ট্রেন ও টিকিট। শত শত যাত্রীকে ট্রেনে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে ট্রেন ও টিকিট বাড়ানো ছাড়া বিকল্প পথ নেই। কালোবাজারি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শায়েস্তাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীলিপ কান্ত নাথ বলেন, “যাত্রীসেবার কথা চিন্তা করে কালোবাজারি রোধে জংশনে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। জংশন কালোবাজারি মুক্ত রাখতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার লিটন চন্দ্র দে বলেন, “যাত্রী পরিমাণে ট্রেনের আসন সীমিত। চাকরি-নিয়োগ, ভর্তি পরীক্ষা এবং উৎসব আসলে যাত্রীর সংখ্যা ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়। যাত্রী সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই যাত্রীদের বসার আসনসহ জরুরি ভিত্তিতে টিকিট সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।”
ঢাকা/মামুন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে ট্রেনের টিকিট যেন সোনার হরিণ
শায়েস্তাগঞ্জ জংশন। এটি হবিগঞ্জ জেলার একমাত্র রেলওয়ে জংশন হিসেবে গুরুত্ব বহন করছে। ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে সেকশনের সিলেট বিভাগে পাঁচটি জংশন ছিল। এরমধ্যে অন্যতম ছিল এই জংশন। বর্তমানে প্রতিদিন এখান থেকে বিভিন্ন ট্রেনযোগে আড়াই থেকে তিন হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করেন। ট্রেন ভ্রমণের আগে টিকিট কিনতে গেলেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। এখানে টিকিট যেন সোনার হরিণ।
মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জে শিল্পাঞ্চলে কাজ করেন দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েক লাখ শ্রমিক। তাদের যাতায়াতের অন্যতম ভরসা এই জংশন। অথচ, টিকিটের সংখ্যা এক দশকেও বাড়েনি একটিও। অনেকেই টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিট (দাঁড়ানো টিকিট) নিয়ে প্রচণ্ড ভিড়ে ট্রেন ভ্রমণে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে আবার ভেতরে জায়গা না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
আরো পড়ুন:
তিস্তাপাড়ে দুর্ভোগ কমেনি, পুনর্বাসনে নেই কার্যকর পদক্ষেপ
কমেছে তিস্তার পানি, দুর্ভোগে মানুষ
টিকিট বরাদ্দ সম্পর্কে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়- জেলার সাড়ে ২৩ লাখ মানুষের জন্য এই জংশনে আন্তঃনগর ছয়টি ট্রেনের টিকিটের সংখ্যা মাত্র ৩১৯টি। এর মধ্যে, সিলেট-ঢাকা লাইনে চলাচলকারী কালনী এক্সপ্রেসের টিকিট রয়েছে ৪৩টি, জয়ন্তিকা এক্সেপ্রেসে ৭০টি, পারাবত এক্সপ্রেসে ৩৫টি, উপবনের ৫০টি টিকিট রয়েছে। অন্যদিকে, সিলেট-চট্টগ্রাম লাইনের পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ৬৬টি এবং উদয়ন এক্সপ্রেসে ৫৫টি টিকিট রয়েছে। যাত্রীর সংখ্যা যেখানে আড়াই থেকে তিন হাজার, সেখানে এই টিকিট পাওয়া কষ্টকে বাড়িয়েই তুলছে শুধু।
যাত্রীদের অভিযোগ- শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে ৩১৯টি টিকিট থাকলেও তার বেশিরভাগই চলে যায় কালোবাজারির হাতে। রাত ১২টার পরই নামে-বেনামে টিকিট সংগ্রহ করে চক্রটি। সকাল থেকেই দাম বাড়িয়ে যাত্রীদের কাছে এসব টিকিট বিক্রি করে তারা।
শায়েস্তাগঞ্জ জংশন কথা হয় চট্টগ্রামগামী যাত্রী গাজীউর রহমান সাজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, “কোনভাবে টিকিট কালোবাজারি থামছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে টিকিটের ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়ে। যারা কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত, তারা খুব সহজেই টিকিট পেয়ে যায়, বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। কারণ, ওই চক্রের কাছ থেকে বেশি দামে টিকিট কাটতে হয়।”
ঢাকাগামী যাত্রী সেলিম মিয়া বলেন, “এই জংশন দিয়ে বেশির ভাগ মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন। সময় মতো টিকিট না পেয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রেন ও টিকিটের বরাদ্দ বাড়াতে কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।”
অপর যাত্রী রতন মিয়া বলেন, “দিন দিন যাত্রী বেড়েই চলেছে। বাড়ছে না ট্রেন ও টিকিট। শত শত যাত্রীকে ট্রেনে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে ট্রেন ও টিকিট বাড়ানো ছাড়া বিকল্প পথ নেই। কালোবাজারি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শায়েস্তাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীলিপ কান্ত নাথ বলেন, “যাত্রীসেবার কথা চিন্তা করে কালোবাজারি রোধে জংশনে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। জংশন কালোবাজারি মুক্ত রাখতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার লিটন চন্দ্র দে বলেন, “যাত্রী পরিমাণে ট্রেনের আসন সীমিত। চাকরি-নিয়োগ, ভর্তি পরীক্ষা এবং উৎসব আসলে যাত্রীর সংখ্যা ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়। যাত্রী সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই যাত্রীদের বসার আসনসহ জরুরি ভিত্তিতে টিকিট সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।”
ঢাকা/মামুন/মাসুদ