মন্দির ভাঙচুরের অভিযোগে সরকার জানাল, রেলের জমি থেকে মণ্ডপ উচ্ছেদ
Published: 27th, June 2025 GMT
রাজধানীর খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সরকার জানিয়েছে, রেলের জমিতে নির্মিত অস্থায়ী পূজা মণ্ডপ আয়োজকরা সরিয়ে না নেওয়ায় উচ্ছেদ করা হয়েছে। মণ্ডপের প্রতিমা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেলের পাঁচ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে।
তবে সরকারের এ বক্তব্যকে গ্রহণ না করে শুক্রবার শ্রী শ্রী সার্বজনীন মন্দির ভাঙার অভিযোগে প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণী জোট। মহাজোট নেতারা দাবি করেন, ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র কুমার চৌধুরীর জমিতে রেললাইন নির্মাণ হওয়ায় মন্দির নির্মাণের অধিকার রয়েছে হিন্দুদের।
ভারতও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে উল্টো অবৈধ জমি ব্যবহারের যুক্তিতে ভাঙার অনুমতি দিয়েছে। আমরা অত্যন্ত হতাশ।
যা ঘটেছে
গত বছরের অক্টোবরে খিলক্ষেত রেল গেইট এলাকায় রেলের জমিতে পূজা মণ্ডপ স্থাপন করে স্থানীয়রা। সম্প্রতি জায়গাটি টিন দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে মন্দিরের সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এতে লেখা হয়েছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক অর্পনা রায় দাস মন্দিরের প্রধান উপদেষ্টা। অর্পনা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে।
সাইনবোর্ড লাগানোর পর স্থানীয় শ’খানেক মুসলমান গত মঙ্গলবার রাতে মন্দির স্থাপন না করার দাবিতে বিক্ষোভ করে। টিনের বেষ্টনী অপসারণে উপস্থিত পুলিশকে চাপ দেয়। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার পর গত বৃহস্পতিবার রেলওয়ে খিলক্ষেত রেল গেইট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মন্দিরের সাইনবোর্ড লাগানো টিনে বেষ্টনী বুলডোজার দিয়ে অপসারণ করা হচ্ছে। আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে মাথাবিহীন একটি প্রতিমা পড়ে রয়েছে।
সরকারের জবাব
এতে হিন্দু ধর্মের অবমাননা হয়েছে অভিযোগে সমালোচনা হয় সামাজিক মাধ্যমে। আজ রেল উপদেষ্টার বরাতে প্রধান উপদেষ্টার রেল কর্তৃপক্ষের বরাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বিভিন্ন মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। গত বছর দুর্গাপূজার সময় কিছু ব্যক্তি অনুমতি ছাড়াই খিলক্ষেতে রেলের জমিতে একটি পূজা মণ্ডপ তৈরি করে। পূজা শেষে মণ্ডপ সরিয়ে নেওয়ার শর্তে অনুমতি দেয় রেল। পূজার আয়োজকরা মণ্ডপ সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পূজা শেষে বারবার বলার পরও তারা মণ্ডপটি সরিয়ে নেয়নি। উল্টো স্থায়ী মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এ প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলা হলেও পূজার আয়োজকরা কর্ণপাত করেননি। এ পরিস্থিতিতে জনসাধারণের সম্পত্তি অবৈধ দখলমুক্ত করতে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার খিলক্ষেত এলাকায় রেলের জমি থেকে অস্থায়ী মণ্ডপটি সরিয়ে ফেলা হয়।
উপদেষ্টা জানান, প্রায় শতাধিক দোকানপাট, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, কাঁচাবাজার উচ্ছেদ করা হয়েছে। অস্থায়ী মন্দিরের প্রতিমা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বালু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভ প্রতিবাদ
গতকাল প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী আমলে একের পর এক হিন্দু নির্যাতন হয়েছে সরকারি মদতে। কিন্তু সরকারের সরাসরি অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। এবার দেখেছি পুলিশ নিজে মন্দিরের টিনের বেড়া খুলেছে। সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে মন্দির ভেঙেছে, বুলডোজার দিয়ে প্রতিমা গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
গোবিন্দ প্রামাণিক প্রশ্ন তুলে বলেন, রেলের জমিতে শত শত অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সেগুলো না সরিয়ে হিন্দু মন্দির ধ্বংস কেন? এর মানে সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ও ওপর মহলে মৌলবাদের আখড়া তৈরি হয়েছে। ভাওয়ালের রাজার জমিতে রেললাইন হয়েছে। তাই সেখানে মন্দির অবৈধ নয়। হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দীনবন্ধু রায়সহ জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন মানববন্ধনে।
আজ শাহবাগে সনাতনী জোটের মানববন্ধন থেকে বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান না হলে খিলক্ষেত অভিমুখে লংমার্চ করা হবে। কর্মসূচিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের পক্ষে প্রদীপ কান্তি দে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: খ লক ষ ত মন দ র র উপদ ষ ট সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
দফায় দফায় সময় বাড়লেও শেষ হয়নি সড়কের কাজ
কোনো রোগী রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন না। গরমের সময় বাড়িঘর, দোকানপাট ধুলোয় ঢেকে যায়। বৃষ্টির সময় কাদাপানিতে জীবন অতিষ্ঠ। এই সড়ক দিয়ে চলাচলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়েন। সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেছেন আবুল হোসেন নামে এক দোকানি।
দফায় দফায় সময় বাড়লেও বাগেরহাটের দশাআনি-রামপাল-মোংলা সড়কে নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এ কারণে দুর্বিষহ জীবন কাটছে এই সড়কে চলাচলকারী মানুষের। গতকাল বুধবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের দশআনি ট্রাফিক মোড় এলাকায় সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
এলাকাবাসীকে বাঁচাতে হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে আইনের আওতায় আনতে হবে বলে দাবি করেছেন বক্তারা। তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্সের কার্যাদেশ বাতিল করে, নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান। অন্যথায় আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
সরেজমিন দেখা যায়, নির্মাণকাজের জন্য বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হয়েছে। রাস্তার ওপরে এলোমেলো খোয়া, কিছুদূর পরপর বড় বড় গর্ত। এসব কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। এতে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় জেমিস মল্লিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তা দিয়ে চলাচলের কোনো উপায় নেই। যখন-তখন দুর্ঘটনা ঘটে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৩৩ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার বাগেরহাট-রামপাল-মোংলা সড়ক সংস্কারে ৪টি প্যাকেজে ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২২ সালের আগস্টে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৮টি সেতু, ২১টি কালভার্ট, জমি অধিগ্রহণসহ নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৭ কোটি টাকা। প্রথম প্যাকেজে দশআনি থেকে হেলাতলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্স। দুই দফা সময় বাড়ানো হলেও প্রতিষ্ঠানটি ১৫ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি। গত ২২ মে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে সড়ক বিভাগ। নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য কাজ চলছে বলে জানান সড়ক বিভাগ, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এই সড়কের ৪টি প্যাকেজের তিনটি প্যাকেজের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রথম প্যাকেজের কাজ দুই দফায় সময় বাড়িয়েও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স; যার কারণে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।