দেশের মানুষ এখনো ঠিকমতো ইভিএম বোঝে না, তারা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) বুঝবে কী করে—এমন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নতুন নতুন চিন্তা আসছে। সেই চিন্তাগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশ, জাতি ঠিক পরিচিত নয়। এ ব্যাপারে আমি কমেন্ট করব না। তবে একটা কমেন্ট করতে চাই। এই যে পিআর বা আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি, এটা আমাদের দেশের মানুষ বোঝেই না। তারা বলে পিআর কী জিনিস ভাই? যারা এখনো ইভিএমে ভোট দিতে পারে না, বোঝে না ঠিকমতো। যার ফলে ইভিএমে ভোট দেয় না। তারা পিআর বুঝবে কী করে? এই চিন্তাভাবনা থেকে দূরে সরে যেতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথাগুলো বলেন। সভার আয়োজন করে ‘মরহুম শফিউল বারী বাবু স্মৃতি সংসদ’।

দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে পণ করে বসে আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দেশের মানুষ যেটাতে অভ্যস্ত সেই ভোটের ব্যবস্থা করেন। তার যেন প্রতিনিধিত্ব থাকে, সেই সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। তাহলেই সমস্যাগুলো সমাধান হবে। না হলে হবে না। বাইরে থেকে এসে বসে বা কাউকে আপনার নতুন নতুন চিন্তাভাবনা দিয়ে কিন্তু দেশের সমস্যার সমাধান করা যাবে না।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে সংস্কারকাজগুলো শেষ করতে এবং জুলাই সনদ ঘোষণা করতে মির্জা ফখরুল আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের জন্য যে সময়টা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই সময়টাতে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘মানুষকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন।’

বিএনপি সংস্কারকে ভয় পায় না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের অনেকে খোঁটা দিয়ে কথা বলেন, আমরা সংস্কার চাই না। সংস্কারের চিন্তাটাই তো আমাদের। সংস্কারের শুরুটা আমাদের দিয়ে।’

এ সময় তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ফ্যাসিজমের মূল হোতা’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের আগে শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি ফ্যাসিজমের মূল হোতা, তিনি গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল করে দিয়েছিলেন। সেই বাকশাল থেকে ফিরিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রে নিয়ে এসে মাল্টিপার্টি সিস্টেমের ব্যবস্থা চালু করলেন জিয়াউর রহমান।’

ঐকমত্য কমিশনের প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি কিছু ভালো দিক দেখছি। আজকে খবরের কাগজে দেখলাম, বোধ হয় বারোটি মৌলিক বিষয়ে পরিবর্তনে সবগুলো দল এক হয়েছে।’

এ সময় মির্জা ফখরুল সরকারকে শিশু একাডেমি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিয়েছি। আজকে আবার অনুরোধ করব। আমি শুনেছি, এটা নাকি হাইকোর্টের জায়গা। যারই জায়গা হোক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া সবার মতামত নিয়ে সেদিন আমাদের শিশুদের বিকশিত করার জন্য এই শিশু একাডেমি স্থাপন করেছিলেন।’

গতকাল এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের চাঁদাবাজির খবর শুনে তিনি বেদনায় নীল হয়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে অনেক বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা আসলে তা–ই।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক দুই সহসভাপতি আজহারুল হক ও ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রয়াত শফিউল বারীর সহধর্মিণী বিথিকা বিনতে হোসাইন উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ব যবস থ আম দ র ফখর ল রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’

তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’

পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’

আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’

ঢাকা/আসাদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভোটারদের আস্থা নিশ্চিত করা বিএনপির দায়িত্ব’
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • আমেরিকানদের হাতে সময় আছে মাত্র ৪০০ দিন
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • কেমন সংবিধান চান, জানালেন এনসিপি নেতা আখতার হোসেন
  • বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় ইইউ