‘ভূমিকম্পে ছিন্নভিন্ন হওয়া দেশকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার’
Published: 31st, July 2025 GMT
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের ১ বছর পূর্তিতে সরকারের কার্যক্রম, চ্যালেঞ্জ ও অগ্রগতি তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, “আমরা ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া একটি দেশ পেয়েছিলাম। সেখান থেকে আবার স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনার কাজটা খুব কঠিন ছিল, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তা করতে পেরেছে।”
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে আসিফ নজরুল: জাস্ট ওয়েট করুন, কিছু দিনের মধ্যে ঘোষণা
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর
প্রেস সচিব বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সেই কুখ্যাত ‘স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ বাতিল করেছি। আইনটির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে লাখ কোটি টাকা লুট করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ট্রেন্ডার প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো—‘আমি আর আমার দুলাভাই মিলে ঠিক করতাম কে কোথায় কাজ পাবে।’ এমন দুর্নীতির আইনি সুরক্ষা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে থাকতে পারে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। আমরা প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাজে হাত দিয়েছি, কোথাও বসে থাকিনি। পুলিশ, বিচার বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের সব জায়গায় সংস্কার আনার চেষ্টা করেছি “
তিনি আরো বলেন, “পুলিশ আমাদের একটা ২১ পাতার রিপোর্ট দিয়েছে। আগে যেভাবে জনদমন হত, এখন তার পরিবর্তে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে। গত ১ বছরে কোথাও পুলিশ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে কি না দেখুন।”
সংলাপে তিনি বিচার বিভাগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “জাজ নিয়োগে আমরা বড় ধরনের সংস্কার এনেছি। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে আমরা যতটা সম্ভব স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছি। বিচার বিভাগকে রাজনীতিমুক্ত করার চেষ্টা চলছে।”
“মূল্যস্ফীতি এখন ৮ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। এটা কমিয়ে আনা সহজ কাজ নয়। একবার মূল্যস্ফীতি আটকে গেলে তাকে নামিয়ে আনা খুবই কষ্টসাধ্য। আমরা সেটা করতে পেরেছি,” যুক্ত করেন প্রেস সচিব।
প্রেস সচিব আরো বলেন, “টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত পদক্ষেপ রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।”
রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, “এনবিআরে হস্তক্ষেপ করে কিছু সংস্কার এনেছি। এনবিআরের এই সংস্কারের সুফল শিগগিরই দৃশ্যমান হবে। বিআইডিএ-তেও সংস্কার এনেছি। আগামী সরকারের সময় বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “একটি-দুটি জঘন্য অপরাধ ঘটেছে, এটা আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু সামগ্রিক চিত্র দেখুন। আমাদের পুলিশকে পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। আমরা তথ্য লুকাই না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন একটি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে এবং ভবিষ্যতে আরো উন্নতি হবে। পুলিশের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।”
শফিকুল আলম বলেন, “আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের ১ বছর হয়ে গেছে। আমরা কতটুকু সফল বা ব্যর্থ, তা জনগণ বিচার করবে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, এ সরকার দেশের ভিতকে আবার শক্ত করে তুলতে পেরেছে।”
ঢাকা/এএএম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা
শেখ হাসিনা সরকার পতনের বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি ঘিরে ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি’ নৈরাজ্য করতে পারে-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা। সেই চিঠিতে ২৯ জুলাই হতে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালকে ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ডিআইজি (রাজনীতিক উইং) এ সংক্রান্ত চিঠিতে এ সময়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনাসহ যানবাহন তল্লাশির পরামর্শও দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এসবি প্রধান গোলাম রসুল গণমাধ্যমকে বলেন, “এটা কোনো এক মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তবে আমরা কোনো বিশেষ দিন-অনুষ্ঠান ঘিরে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ-নির্দেশনা দিয়ে থাকি, এটা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ।”
আরো পড়ুন:
সিজু নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
অধ্যাপক জওহরলাল বসাকের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে এসবি। নির্দেশনাগুলো হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত সন্দেহজনক ব্যক্তিসহ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন তল্লাশি করা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল অভিযান পরিচালনা করা। মোবাইল প্যাট্রোল জোরদার করা। গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা। এছাড়া কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসবিকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।
ঢাকা/এমআর/এসবি