নারায়ণগঞ্জে জনদাবিতে রূপ নিয়েছে মেট্রোরেল
Published: 14th, September 2025 GMT
রাজধানীর পাশর্^তবর্তী জেলা বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র নারায়ণগঞ্জে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন নগর পরিকল্পনাবিদ আর সুশীল সমাজের দাবি নয়, এটা এখণ রূপ নিয়েছে জনদাবিতে। মেট্রোরেল হয়ে উঠেছে জেলার আলোচনার তপ্ত মঞ্চ।
প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার পর থেকেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব চত্বরে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয়েছে।
প্রকল্প থেকে বাদ পড়াকে জেলার অর্থনীতি ও টেকসই নগরায়ণ পরিকল্পনার জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন জেলাবাসী। তাই দাবি অগ্রাহ করলে পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করছেন অন্দোলনকারীরা।
সংহঠনের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা নূরউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এ কর্মসূচিতে এমআরটি-২ মেট্রোরেল প্রকল্প নারায়ণগঞ্জ ও মদনপুরকে সংযুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। বক্তারা বলেন, অবহেলিত নারায়ণগঞ্জকে সব সময় অবজ্ঞা করা হচ্ছে।
এ জেলা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রী ঢাকায় চলাচল করে। ট্রেনের অপেক্ষা ও গণপরিবহণের বিড়ম্বনায় যাত্রী সাধারণের কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য অবশ্যই এমআরটি-২ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
মেট্রোরেলের দাবিতে জেলার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট থেকে শুরু করে বামপন্থী দলগুলো এক কাতারে দাঁড়িয়েছ।
বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরকে ঘিওে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক বিস্তাারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বহু আগেই। এমআরটি-৬ থেকে শুরু করে এমআরটি-১, এমআরটি-৫ ও এমআরটি-২ ধাপে ধাপে পাঁচটি জেলা ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী যুক্ত থাকলেও বাদ পড়েছে নারায়ণগঞ্জ।
এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি কেবল নগর পরিকল্পনাবিদ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই তা জনদাবিতে রূপ নিয়ে জেলা সদর, ফতুল্লা, আড়াইহাজার, সোনারগাঁ,রূপগঞ্জ ও বন্দর উপজেলাবাসীও এ নিয়ে কথা বলছেন।
কারণ, টেকসই নগর উন্নয়ন করতে হলে ঢাকার পাশ^বর্তী জেলা শহরগুলোর সঙ্গে আধুনিক গণপরিবহন সংযোগ জরুরি। নারায়ণগঞ্জের মত জেলাকে এ প্রকল্প থেকে বাদ দিলে পুরো পরিকল্পনার ক্ষতি হবে।
অপরদিকে, প্রকল্প থেকে নারায়ণগঞ্জ বাদ পড়ার পর গত ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মো.
তরিকুল সুজন বলেন, নারায়ণগঞ্জের লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন ঢাকায় যান শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের জন্য। অথচ এমআরটি-২ প্রকল্প থেকে নারায়ণগঞ্জকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা নারায়ণগঞ্জবাসীর সঙ্গে অবহেলা।
প্রকল্প থেকে বাদ পড়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ফলে জেলায় রাজনৈতিক অবস্থান সংঘাতমুখর হলেও মেট্রোরেল প্রশ্নে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সকল বামদলগুলো এক কাতারে দাঁড়িয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী নূসরাত বলেন, আমরা যদি সকাল আটটার ক্লাসে যেতে চাই, ভোর পাঁচটা-ছয়টায় বের হতে হয়। যানজটের কারণে সময়মতো পৌঁছানো কঠিন। মেট্রোরেল হলে পথচলা অনেক সহজ হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট. এবি সিদ্দিক, সিপিবি নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি শিবনাথ চক্রবর্ত্তী, উপদেষ্টা বাবু সুভাষ সাহা, উপদেষ্টা হানিফুল কবির, সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন মন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বদরুল হক, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা খোদেজা খানম নাসরিন, পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক ক্যাডেট সভাপতি ফারুক আহম্মদ রিপন।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন,জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালাম খোকন, বীরমুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী, আব্দুল মতিন, তাওরাদ হোসেন মকুল, আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ প রকল প থ ক ন র য়ণগঞ জ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের উপর অটো চালকদের হামলা, আহত ২০
নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজট নিরসনে সড়কে কাজ করা শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাটারিচালিত রিকশা (ইজিবাইক) চালকরা হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে ইজিবাইক চালকদের সাথে সংঘাতে জড়ালে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইজিবাইকচালকরা প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে রাখেন। তাদের অবরোধে পুরো শহরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাষাঢ়া ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশ গেটে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষার্থী ও ইজিবাইক চালকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হয়।
এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো- মোঃ আবু সাঈদ (১৯), মারুফ (১৯), আসিফ (৩০), মাহিম (২২), ফয়সাল আহমেদ (২৮), হুমায়ন কবির (২৬), এনামুল হক শান্ত (২৩), শাহীন খন্দকার (২২) ও নুহেল মুন্সী আপন (২২)। তবে আহত ইজিবাইক চালকদের নাম পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীরা চাষাড়ায় ঢুকতে বাঁধা দেয় ইজিবাইক চালকদের। এ নিয়ে কথাকাটাকিাটি হয় উভয়ের মধ্যে এক পর্যায়ে ইজিবাইকরা চালকরা সংঘবদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অনেকেই আহত হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ইজিবাইক চলকরা সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ। পরে আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সংঘর্ষের সময় ইজিবাইক চালকদের অনেকেই তাদের গাড়ির সিটের নিচ থেকে লাঠি ও লোহার রড বের করে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়।
ধারণা করা হয়, আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল ইজিবাইক চালকরা যে শিক্ষার্থীদের উপর সুযোগ পেলেই হামলা করবে। কারণ গত এক দেড় মাস ধরেই চাষাড়ায় ইজিবাইক ঢুকতে বাধা দিয়ে আসছিল শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষোভ জমতে থাকে ইজিবাইক চালকদের মধ্যে। আজকে তারা সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে।
ওদিকে যানজট নিরসনে কাজ করা শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘আমরা এক মাস ধরে শহরের যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। চেম্বার অব কমার্স এবং বিকেএমই থেকে আমাদেরকে ট্রাফিক মনিটরিং সেলে দেওয়া হয়। আমাদের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই বড় অটোরিকশাগুলো চাষাঢ়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
কিন্তু তারা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চাষাঢ়ায় প্রবেশ করেন। পরে বাধা দিলে তারা আমাদের ওপর ক্ষেপে যান। এবং পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
তবে উজ্জল নামে এক অটোরিকশাচালক জানায়, ‘আমাদের চাষাঢ়া যাওয়া নিষেধ। আমরা নিষেধ উপেক্ষা করে চাষাঢ়া গেছি, এটা আমাদের অপরাধ। কিন্তু তারা আমাদের অটোরিকশার গ্লাস ভেঙে দিয়েছে। গ্লাস ভাঙার কারণ জানতে চাইলে তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের অনেককে তারা মারধর করেছে। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভালো একটি সমাধানে আসা সম্ভব হয়েছে। আলোচনা সভায় দুই পক্ষই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসনের সব সিদ্ধান্ত মানতে একমত হয়েছেন। এ ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করা হবে।