রাকিবের রঙিন মাছের খামার, মাসে আয় ৪৫ হাজার টাকা
Published: 16th, October 2025 GMT
দিনাজপুর সদর উপজেলার কর্ণাই হাজীপাড়া গ্রামের তরুণ ইয়াছিন আলী রাকিব (২৫)। বাড়ির উঠানে তিনি তৈরি করেছেন রঙিন মাছের খামার। সিমেন্ট, মাটি, পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে বানানো ৪৫টি চৌবাচ্চায় স্বচ্ছ পানিতে খেলা করছে গাপ্পি, গোল্ডফিশ, জেব্রা, কইকাপ, টাইগার বার্পসহ ১৮ প্রজাতির শৌখিন মাছ।
বিশেষ কৌশলে মাছের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। নিয়মিত খাবার দেওয়া হয়। মাছ বড় হচ্ছে, বাচ্চাও দিচ্ছে। এই মাছ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় শৌখিন মাছপ্রেমীদের কাছে বিক্রি করে রাকিব প্রতি মাসে আয় করছেন ৪০-৪৫ হাজার টাকা। সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি তুলেছেন পাকা বাড়ি, কিনেছেন মোটরসাইকেল।
রাকিবের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুরু করোনাকালে। ইউটিউবে রঙিন মাছ চাষের ভিডিও দেখে আগ্রহী হয়ে ৩৬০ টাকায় গাপ্পি প্রজাতির ছয়টি মাছ কেনেন। বাড়ির উঠোনে চৌবাচ্চা বানিয়ে তাতে মাছ ছাড়েন। কয়েক দিনের মধ্যে মাছ বাচ্চা দেয়। আনন্দ আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে গরু বিক্রি করে নতুন প্রজাতির মাছ যোগ করেন খামারে। ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন জেলার শৌখিন মাছচাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে।
২০২১ সালে বাবা মারা গেলে সংসারের ব্যয় মেটাতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি নেন রাকিব। দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি কাজের চাপ সামলে খামারের দেখাশোনা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই সেই বছরই চাকরি ছেড়ে দেন। রাকিব বলেন, ‘চাকরি ছেড়ে পুরোদস্তুর খামারি হয়ে গেলাম। নিজের ফেসবুক আইডিতে (ইয়াছিন অ্যাকোয়া ফার্ম) খামারের ভিডিও দিতাম। এখন ফলোয়ার ১০ হাজারের বেশি। ক্রেতাদের বেশির ভাগই ফেসবুকের মাধ্যমে পাই।’
খামারের ব্যস্ততা ও বিক্রির ধরন
সোমবার রাকিবের খামারে গিয়ে দেখা যায়, তিনি মাছকে ক্ষুদ্র দানাদার ফিড খাওয়াচ্ছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। ৯ শতাংশ জমির মধ্যে ৫ শতাংশে খামার গড়ে তুলেছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্ডার নেওয়া, মাছ প্রস্তুত করা ও গ্রাহকের কাছে পাঠাতে সময় চলে যায়। সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩০০টি মাছ পাঠান তিনি, দাম পান সাড়ে সাত হাজার টাকা। দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের এক গ্রাহকের জন্য ১৫০টি মাছ প্রস্তুত করেন।
মাছ বিশেষ পলিব্যাগে ভরে মিথাইল মিশ্রিত পানি ও অক্সিজেন দিয়ে প্যাকেট করেন। ব্যাগে গ্রাহকের ঠিকানা লিখে পরিবহনে করে পাঠানো হয়। টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আগে নিয়েই সরবরাহ দেন।
সিমেন্ট, মাটি, পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে বানানো ৪৫টি চৌবাচ্চায় স্বচ্ছ পানিতে খেলা করছে গাপ্পি, গোল্ডফিশ, জেব্রা, কইকাপ, টাইগার বার্পসহ ১৮ প্রজাতির শৌখিন মাছ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এসব খাবার আপনাকে সারা দিন চনমনে রাখবে
কাজের চাপে ক্লান্ত লাগলে বা দুপুরের পর অফিসে ঘুম পেলে অনেকেই কফি বা মিষ্টি কিছু খেয়ে ক্লান্তি কাটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো আপনাকে সারা দিন চনমনে রাখতে পারে, আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো উল্টো আপনাকে দুর্বল করে দেয়!
সকালের নাশতা বাদ দেওয়া আমাদের অন্যতম বড় ভুল। এতে ক্লান্তি ও মানসিক চাপ তুলনামূলক বেশি হয়। তাই সকাল শুরু হোক এমন খাবার দিয়ে, যা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করবে; যেমন ওটস, চিড়া, ডিম ও পূর্ণ শস্যের টোস্ট, দুধ বা দইয়ের সঙ্গে ফল ও বাদাম—এই খাবারগুলো শরীরে শর্করা, প্রোটিন ও ফাইবার সরবরাহ করে, যা আপনাকে দীর্ঘ সময় সতেজ রাখবে।
সারা দিন শক্তি ধরে রাখার কৌশলবাদাম, বীজ আর শস্যজাতীয় খাবার শক্তির অন্যতম বড় উৎস। এগুলোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন ও ভিটামিন—যা রক্তে চিনির মাত্রা স্থির রাখে এবং হঠাৎ এনার্জি ড্রপ থেকে বাঁচায়। একমুঠো কাজু, আখরোট বা সূর্যমুখীর বীজের মতো স্ন্যাক হতে পারে আপনার দুপুরের ‘এনার্জি ব্রেক’।
প্রোটিন: ঠিকভাবে দেহের প্রতিটি কোষের কাজ চালাতে প্রোটিন অপরিহার্য। মাছ, মুরগি, ডিম, ডাল ও ছোলা হলো এমন কিছু প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যা দ্রুত ক্লান্তি দূর করে। বিশেষ করে মাছ (যেমন ইলিশ, রুই, টুনা) শুধু প্রোটিন নয়, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও দেয়, যা মস্তিষ্ককেও সক্রিয় রাখে।
জটিল শর্করা: সাদা চাল বা পরিশোধিত ময়দা শরীরে দ্রুত শক্তি দেয়, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়েও যায়। এর পরিবর্তে বেছে নিন লাল চাল, ব্রাউন রাইস, গমের রুটি বা ওটস—এগুলো ‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট’, যা ধীরে হজম হয় এবং সারা দিন স্থিতিশীল এনার্জি দেয়।
শাকসবজি ও ফল: নিয়মিত রঙিন শাকসবজি ও ফল খান। আপেল, কলা, কমলা, পালংশাক, ব্রকলি, গাজর—এগুলোর ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে চাঙা রাখে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
আরও পড়ুনকৈশোরে সঠিক পুষ্টি না পেলে যা হয়, যেসব খাবার খেতে হবে১৬ নভেম্বর ২০২৫যেগুলো এড়িয়ে চলা ভালোঅতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিজাত খাবার দ্রুত শক্তির জোগান দিলেও খুব দ্রুতই ক্লান্ত করে ফেলে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন সাময়িকভাবে মনোযোগ বাড়ায়, কিন্তু ঘুমের ছন্দ নষ্ট করে দেয়।
অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত বা ভারী খাবার। এগুলো হজমে সময় নেয়, ফলে ঘুম ঘুম লাগে।
ছোট ছোট টিপসপানিশূন্যতা ক্লান্তি ডেকে আনে, নিয়মিত পানি পান করুন।
দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকবেন না।
পর্যাপ্ত ঘুম ও হালকা ব্যায়াম প্রাকৃতিকভাবে আপনার শক্তি বাড়াবে।
শক্তি ধরে রাখার কোনো ‘জাদুকরি খাবার’ নেই, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসই পারে আপনাকে সারা দিন প্রাণবন্ত রাখতে। তাই পরেরবার শক্তি কমে গেলে চিনি বা সফট ড্রিংকের দিকে না ছুটে, বেছে নিন প্রকৃতির দেওয়া সঠিক খাবারগুলো।
আরও পড়ুনএকবারে কতটা বাদাম খাওয়া নিরাপদ২১ অক্টোবর ২০২৫