সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর লুট থামছে না। গতকাল শনিবার রাতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের অভিযানে কোম্পানীগঞ্জের টুকেরবাজার এলাকা থেকে ট্রাকভর্তি পাথরসহ এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে।

পরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিন মিয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওই ব্যবসায়ীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্ত ওই পাথর ব্যবসায়ীর নাম মনির হোসেন (৩৫)। তিনি কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুরের খায়ের গাঁও এলাকার বাসিন্দা। টুকেরবাজার এলাকায় তাঁর স্টোন ক্রাশার মিল (পাথর ভাঙার) আছে। শাহ আরেফিন টিলা থেকে লুট হওয়া পাথর মজুত রাখেন তিনি। পরে পাথরগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন। গতকাল রাতে বিক্রির জন্য ট্রাকে থাকা পাথরসহ তাঁকে আটক করা হয়। আজ রোববার দুপুরে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সরকারি খাস খতিয়ানে ১৩৭ দশমিক ৫০ একর জায়গায় শাহ আরেফিন টিলার অবস্থান। কথিত আছে, প্রায় ৭০০ বছর আগে হজরত শাহজালাল (রহ.

)-এর অন্যতম সফরসঙ্গী হজরত শাহ আরেফিন (রহ.) খাসিয়া পাহাড় এলাকা পরিভ্রমণকালে পাহাড়-টিলার চূড়ায় বিশ্রাম নিতেন। শাহ আরেফিনের একটি ‘আসন’ (বিশ্রামের স্থান) হিসেবে পরিচিতি থেকে ওই টিলার নামকরণ হয় শাহ আরেফিন টিলা।

লালচে, বাদামি ও আঠালো মাটির এ টিলার নিচে আছে বড় বড় পাথর। এসব পাথর উত্তোলন করতেই চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। এর মধ্যে টিলার প্রায় ৮৫ শতাংশ পাথর লুট হয়ে গেছে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রতন শেখ এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হ আর ফ ন ট ল ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

আবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত

প্রথম হিজরতের কয়েক মাস পর হাবশায় এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে মক্কার সবাই ইসলাম গ্রহণ করেছে। সাহাবিরা ভেবেছিলেন, নির্যাতনের দিন ফুরিয়েছে, এখন মক্কা নিরাপদ শহর। এই ভাবনা থেকে মক্কায় ফিরে এলেন।

কিন্তু শিগগিরই বুঝলেন, সেটা ছিল একেবারেই ভুল সংবাদ। সবকিছু আগের মতোই আছে, তবে কুরাইশদের নিষ্ঠুরতা আগের চেয়েও তীব্র হয়ে উঠেছে। মক্কার সীমাবদ্ধ পরিসরে ইমান নিয়ে বেঁচে থাকা তখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এমন সময় নবীজি (সা.) সাহাবিদের পুনরায় হাবশার দিকে রওনা হওয়ার নির্দেশ দেন। হাবশা ৬১৫ সালে তাঁরা আলাদাভাবে হাবশায় গিয়ে পৌঁছান। ইতিহাসে এটি ‘হাবশায় দ্বিতীয় হিজরত’ নামে খ্যাত—যেখানে নারী সাহাবিদের অংশগ্রহণ ছিল আরও সক্রিয় ও তাৎপর্যপূর্ণ।

হাবশা হল প্রাচীন আবিসিনিয়া, অর্থাৎ বর্তমান ইথিওপিয়া ও এর আশপাশের অঞ্চল। এটি ইসলামের ইতিহাসে মক্কা থেকে প্রথম হিজরতের স্থান হিসেবে পরিচিত, যেখানে সাহাবিরা তৎকালীন খ্রিষ্টান শাসক নাজাশী (আসহামা ইবনে আবজার)-এর আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।

এই পর্বে আমরা হিজরতকারী সেই নারী সাহাবিদের কথা জানব, যাঁদের ইমান ও ত্যাগ ইসলামি সভ্যতার প্রারম্ভিক ইতিহাসে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।

১. হজরত রুকাইয়া বিনতে মুহাম্মদ (রা.): নবীজি (সা.)–এর দ্বিতীয় কন্যা এবং হজরত ওসমান ইবনে আফফানের (রা.) সহধর্মিণী। তিনি সেসব মহীয়সী নারীর একজন যিনি তিন-তিনবার হিজরত করেছিলেন।

২. হজরত আসমা বিনতে উমায়স (রা.): ইসলামের প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণকারী ও নবীজি (সা.)-এর চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবু তালিবের (রা.) সহধর্মিণী। হাবশায় তাঁর গর্ভে আবদুল্লাহ, আওন ও মুহাম্মদ নামে তিন সন্তানের জন্ম হয়।

সপ্তম হিজরিতে তাঁরা যখন মদিনায় ফিরে আসেন, তখন অনেকেই বলাবলি করছিল—যেহেতু তাঁরা একেবারে প্রথম দিকেই হিজরত করে মক্কাবাসীর নির্যাতন থেকে বেঁচে গেছিলেন, তাই তাঁদের হিজরত ‘প্রকৃত হিজরত’ নয়।

আসমা বিনতে উমায়স (রা.) এ বিষয়ে সরাসরি নবীজি (সা.)–কে জিজ্ঞাসা করেন। নবীজি (সা.) তখন বলেন, ‘তারা মিথ্যা বলছে। তোমাদের হিজরত দুবার হয়েছে। একবার নাজ্জাশির কাছে, আরেকবার আমার দিকে।’ (জামিউস সুন্নাহ ওয়া শুরুহিহা, হাদিস: ১০,২৫৬)

আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় প্রথম হিজরত১৫ এপ্রিল ২০২৩

৩. হজরত ফাতিমা বিনতে সাফওয়ান (রা.): হজরত আমর ইবনে সাইদের (রা.) স্ত্রী। কিনানা গোত্রের নারী। তিনি হাবশাতেই ইন্তেকাল করেন।

৪. হজরত আমিনা বিনতে খালফ (রা.): কেউ কেউ তাঁর নামের উচ্চারণ উমায়মা বা উমায়নাও করেন। তিনি খুজাআ গোত্রের সদস্য ও হজরত খালিদ ইবনে সাইদ ইবনুল আসের (রা.) স্ত্রী। হাবশায় তাঁর দুই সন্তান সাইদ ও আমাহ জন্মগ্রহণ করেন।

৫. হজরত উম্মে হাবিবা রামলাহ (রা.): আবু সুফিয়ানের কন্যা। তিনি তাঁর সেই সময়ের স্বামী উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশের (রা.) সঙ্গে হিজরত করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর অভিভাবকের মধ্যস্ততায় হাবশাতেই তাঁর সঙ্গে নবীজি (সা.)-এর বিয়ে হয়।

বাদশাহ নাজ্জাশি নবীজির (সা.) পক্ষ থেকে তাঁকে মোহর প্রদান করেন, তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠান করেন এবং মদিনায় প্রেরণের যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন। (সহিহ আবু দাউদ, হাদিস: ২১০৭)

৬. হজরত বারাকাহ বিনতে ইয়াসার (রা.): আবু সুফিয়ানের মুক্তদাসী। তিনি স্বামী কায়েস ইবনে আবদুল্লাহর (রা.) সঙ্গে হিজরত করেন।

৭. হজরত উম্মে হারমালা খাওলা বিনতে আবদুল আসওয়াদ (রা.): খুজাআ গোত্রের সদস্য। জাহম ইবনে কায়স (রা.)-এর স্ত্রী। হাবশায় তাঁর তিন সন্তান হুরাইমালাহ, আবদুল্লাহ ও আমর জন্মগ্রহণ করে। হাবশাতেই তিনি ইন্তেকাল করেন।

৮. হজরত রামলা বিনতে আওফ (রা.): মুত্তালিব ইবনে আজহারের (রা.) স্ত্রী। হাবশায় তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন।

৯. হজরত রায়তা বিনতে হারিস ইবনে জাবালা (রা.): হারিস ইবনে খালিদের (রা.) স্ত্রী। হাবশায় তাঁর চার সন্তান মুসা, আয়েশা, জয়নব ও ফাতেমা জন্মগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর হিজরত কেন মদিনায় হলো?১০ আগস্ট ২০২৪

১০. হজরত উম্মে সালামাহ হিন্দ (রা.): আবু উমাইয়ার কন্যা। তিনি তাঁর সেই সময়ের স্বামী হজরত আবু সালামাহর (রা.) সঙ্গে হিজরত করেন। তিনি সেসব সৌভাগ্যবানদের একজন, যিনি তিন-তিনবার হিজরত করেছিলেন।

হজরত উম্মে সালামাহ (রা.) ছিলেন খুবই মেধাবী ও জ্ঞানী। মক্কার মুশরিকেরা যখন হাবশা থেকে মুসলমানদের ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিধিদল পাঠায়, তখন বাদশাহ নাজ্জাশি মুসলমানদের রাজদরবারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন এবং তাদের কাছে ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। সেই সময় জাফর ইবনে আবু তালেব (রা.) বাদশাহর কাছে ইসলাম ধর্মের পরিচয় ও তাদের হিজরতের প্রকৃত কারণ স্পষ্ট করেন।

এ পুরো ঘটনাকে যিনি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করেন, তিনি এই উম্মে সালামাহ (রা.)। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১,৭৪০) স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি নবীজি (সা.)–এর স্ত্রী হওয়ার মহাভাগ্য অর্জন করেন।

১১. হজরত ফাতিমা বিনতে মুজাল্লাল (রা.): স্বামী হাতিব ইবনে হারিস (রা.)–এর সঙ্গে হাবশায় হিজরত করেছিলেন, পরে মদিনায় হিজরত করেন।

১২. হজরত ফাকিহা বিনতে ইয়াসার (রা.): হজরত খাত্তাব ইবনুল হারিসের (রা.)-এর স্ত্রী।

১৩. হজরত হাসনা (রা.): তিনি উম্মে শুরাহবিল নামে অধিক পরিচিত। স্বামী সুফিয়ান ইবনে মামারের (রা.) তিনি হাবশায় হিজরত করেছিলেন।

১৪. হজরত উম্মে কুলসুম বিনতে সুহায়ল (রা.): নবীজি (সা.)–এর ফুফাতো ভাই হজরত আবু সাবরাহ ইবনে আবু রাহমের (রা.) স্ত্রী।

১৫. হজরত সাওদা বিনতে জামআ (রা.): তিনি তাঁর সেই সময়ের স্বামী সাকরান ইবনে আমরের (রা.) সঙ্গে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তাঁর স্বামী সেখানেই ইন্তেকাল করেন। পরে তিনি উম্মাহাতুল মুমিনিনের অন্তর্ভুক্ত হন। তিনিই প্রথম নারী, হজরত খাদিজার (রা.) ইন্তেকালের পর যাঁকে নবীজি (সা.) বিয়ে করেছিলেন।

১৬. হজরত ওমরা বিনতে সাদি (রা.): স্বামী মালিক ইবনে জামআর (রা.) সঙ্গে হিজরত করেছিলেন।

তথ্যসূত্র: সীরাতুল মুস্তফা, ইদরীস কান্ধলভী, ১/২১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

[email protected]

মওলবি আশরাফ: আলেম, লেখক ও অনুবাদক।

আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত