আপনি কি খাওয়া শুরু করলে খেতেই থাকেন? তাহলে বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারে ভুগছেন
Published: 1st, December 2025 GMT
বাঁধন নিজের যে ব্যাধির কথা বলেছেন, তার একটা কেতাবি নাম আছে—বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডার। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, যা মানুষের অনুভূতি ও চিন্তাভাবনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
কোনটাকে বলবেন বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারআমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সময় অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। যেমন কোনো উৎসবের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত খাবার আমরা চেয়ে নিই। ফলে একে আপনি বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডার বলতে পারবেন না। তাহলে?
অতিরিক্তি খাওয়াকে তখনই বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের লক্ষণ বলে চিহ্নিত করা হবে, যখন আপনার মনে হবে, খাওয়াদাওয়া নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং অস্বাভাবিকভাবে বেশি খাবার খাচ্ছেন।
যাঁরা এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা প্রায়ই লজ্জা বা বিব্রত বোধ করেন। তাঁরা অনেক সময় খাবার খাওয়া সীমিত করতে বা খুব কম খেতে চেষ্টা করেন। এতে বরং খাওয়ার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাড়তে পারে এবং বিঞ্জ-ইটিংয়ের একটি সাইকেল বা চক্র তৈরি হতে পারে।
সময়মতো চিকিৎসা বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডার নিয়ন্ত্রণ করতে ও ভারসাম্য আনতে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুনএসব খাবার আপনাকে সারা দিন চনমনে রাখবে২৯ নভেম্বর ২০২৫লক্ষণবিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে, তেমনটা মোটেই নয়, স্বাভাবিকও থাকতে পারে। কিন্তু ওজন যা-ই হোক না কেন, এমন সমস্যার কারণে বেশির ভাগ মানুষই শরীরের আকার বা আকৃতি নিয়ে বিব্রত বোধ করেন।
বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের অনেক লক্ষণ থাকতে পারে। যেমন—
খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। খাওয়া শুরু করলে তা থামানো কঠিন মনে হওয়া।
নির্দিষ্ট সময়ে খুব বেশি খাবার খাওয়া, যেমন দুই ঘণ্টার মধ্যে অত্যধিক খাবার খেয়ে ফেলা।
পেট ভরা বা ক্ষুধা না থাকা অবস্থায়ও খাওয়া।
অতিরিক্ত খাওয়ার সময় খুব দ্রুত খাওয়া।
খেতে খেতে পেট ভরার পর হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত খাওয়া।
প্রায়ই একা অথবা লুকিয়ে খাওয়া।
খাওয়ার পর হতাশা, ঘৃণা, লজ্জা, দুঃখ বা অপরাধবোধে ভোগা।
বুলিমিয়া নার্ভোসা নামের আরেক ধরনের ইটিং ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত কেউ অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার পর বমি করেন, পরিপাকের জন্য ওষুধ নেন কিংবা অতিরিক্ত ব্যায়াম করে অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে হয়তো সেটা হয় না। এ ক্ষেত্রে কেউ হয়তো ক্ষতিপূরণ হিসেবে ডায়েট করতে বা কম খেতে চেষ্টা করেন, কিন্তু এতে খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আরও বাড়তে পারে।
এটি কতটা গুরুতরঅতিরিক্ত খাবার খাওয়া আপনার মেজাজ ও দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্মে কতটা প্রভাব ফেলে, তা থেকেই বোঝা যায় অবস্থাটি আপনার জন্য কতটা গুরুতর। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে। কয়েক দিন থাকতে পারে, আবার কমে গিয়ে ফিরে আসতে পারে অথবা চিকিৎসা না পেলে বছরের পর বছর স্থায়ী হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
আপনার যদি বিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারের কোনো লক্ষণ থাকে, যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিন। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আপনার অনুভূতি ও সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলুন।
যদি আপনার খাওয়ার অভ্যাস নিয়ে লজ্জা পান বা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পান, তবে প্রথমে কারও সঙ্গে শেয়ার করুন, যাঁকে আপনি বিশ্বাস করেন। তিনি আপনার বন্ধু, পরিবারের সদস্য কিংবা শিক্ষক হতে পারেন। তাঁরা আপনাকে চিকিৎসা গ্রহণের প্রথম পদক্ষেপে উৎসাহ ও সমর্থন দিতে পারবেন।
ইটিং ডিজঅর্ডারে প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। তাঁরা আপনার পরিস্থিতি ভালো বুঝতে পারবে।
আরও পড়ুনছয় মাসে কতটা ওজন কমানো নিরাপদ?২৪ অক্টোবর ২০২৫আক্রান্ত প্রিয়জনকে চলুন সাহায্য করিবিঞ্জ-ইটিং ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত কেউ কেউ বিষয়টা লুকাতে পারেন। কারণ, বিষয়টা তাঁদের কাছে লজ্জার, তাঁরা অপরাধবোধে ভোগেন। তাই তাঁরা যদি নিজেদের এ ধরনের আচরণ লুকিয়ে রাখতে চান, তাহলে অন্যদের পক্ষে তাঁদের সমস্যা বোঝা কঠিন হয়ে যায়।
আপনি যদি মনে করেন কোনো প্রিয়জনের এমন লক্ষণ আছে, তবে সংবেদনশীলতা বজায় রেখে খোলামেলা ও আন্তরিকভাবে আপনার উদ্বেগের কথা বলুন।
মনে রাখবেন, ইটিং ডিজঅর্ডার হলো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এই আচরণ রোগীর দোষ বা পছন্দ নয়।
প্রিয়জনকে উৎসাহ ও সমর্থন দিন। ইটিং ডিজঅর্ডারে অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খুঁজে পেতে সাহায্য করুন। প্রয়োজনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে সহায়তা করতে পারেন, এমনকি তাঁদের সঙ্গে যাওয়ার প্রস্তাবও দিতে পারেন।
বাঁধনের কথা দিয়েই শেষ করি। প্রায় ছয় মাসে ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন তিনি। এ সময় তিনি চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়েছেন। নিয়ম মেনে ব্যায়ামও করছেন।
আজমেরী হক বাঁধন প্রায় ছয় মাসে ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড জঅর ড র র ব ঞ জ ইট সমস য অবস থ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ইমরানের বোন কেন সাক্ষাৎকার দিলেন, ক্ষুব্ধ পাকিস্তান সরকার
পাকিস্তানের কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বোন নোরিন খান নিয়াজি ভারতের সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় পাকিস্তানি তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ওই সাক্ষাৎকারে ইমরানের বোন পাকিস্তানের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। অথচ তিনি আঞ্চলিক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলেননি বা ভারতীয় নেতৃত্বের সমালোচনা করেননি।
আদিয়ালা কারাগারে বন্দী ইমরান খানের সঙ্গে স্বজন ও দলের সদস্যদের দেখা করতে না দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা চলার মধ্যে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী এমন মন্তব্য করলেন। গত সপ্তাহে ইমরানের তিন বোন আদিয়ালা কারাগারের বাইরে অবস্থান নেন। বোনদের অভিযোগ, ইমরানের সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।
আরও পড়ুননিঃসঙ্গ কারাকক্ষে ইমরান খান২৯ নভেম্বর ২০২৫তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার ইমরানের বোন নোরিন নিয়াজির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, তিনি কেন ভারতীয় টেলিভিশনের কাছে অভিযোগ করলেন? ভারতের মুসলিমদের দুর্দশা বা কাশ্মীয় নিয়ে বিরোধের প্রসঙ্গে কথা না বলে কেন তিনি তাদের কাছে নিজেদের ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে উপস্থাপন করলেন?
তারার বলেন, ‘যারা ভারতীয় চ্যানেলে গিয়ে পাকিস্তানের মানহানি করে, তাদের লজ্জা হওয়া উচিত। নোরিন খান নিয়াজি যে ভারতীয় চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সেখানে কি তিনি মোদির নিন্দা করেছেন?’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনাদের ধিক্কার জানাই যে আপনারা ভারতীয় চ্যানেলে গিয়ে দখল করা কাশ্মীর, মার্কা-ই-হক, শহীদদের কথা বললেন না। আপনারা শুধু দুর্নীতির মামলায় জড়িত এক বন্দীর ‘পীড়িত হওয়ার’ কথা বলে কান্নাকাটি করলেন?’
তারারের দাবি, ইমরানের পরিবার ও তাঁর দলের মনোভাব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আর তা জেনেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পরিবারটিকে একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ইমরানের বোন আলিমা খান, উজমা খান এবং নোরিন খান নিয়াজিসহ ইমরানের দল পিটিআইয়ের বেশ কয়েকজন সদস্য কারাগারের বাইরে জড়ো হন। পিটিআই বলছে, নারীরা শান্তভাবে বসে ছিলেন। অথচ পুলিশ তাঁদের সহিংসভাবে আটক করে।গত সপ্তাহে ইমরানের বোন আলিমা খান, উজমা খান, নোরিন খান নিয়াজিসহ ইমরানের দল পিটিআইয়ের বেশ কয়েকজন সদস্য কারাগারের বাইরে জড়ো হন। পিটিআই বলছে, নারীরা শান্তভাবে বসে ছিলেন। অথচ পুলিশ তাঁদের সহিংসভাবে আটক করেছে।
তবে মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার তাঁদের নির্দোষ মানতে রাজি নন। তাঁর দাবি, ২০২৩ সালের ৯ মে প্রথম দফায় ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর যে সহিংসতা হয়েছিল, তার সঙ্গে ইমরানের বোনেরা সম্পৃক্ত ছিলেন।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইমরান আহমেদ নিয়াজি সাহেবের এই তিন বোন ২০২৩ সালের ৯ মে কোর কমান্ডারের বাড়িতেও উপস্থিত হয়েছিলেন। যদি আমার আইনি মতামত চান, তাহলে বলব, তাঁদের উপস্থিতিটাই এ ক্ষেত্রে প্রমাণ...তাঁরা ৯ মে সেখানে ছিলেন। তাঁরা দলে দলে লোকজনকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে, তিনজনই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’
তারারের দাবি, সরকারের সাম্প্রতিক অর্জন থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা হিসেবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনইমরানের সাক্ষাৎ নিয়ে ‘ শেষ বিকল্প’ ভাবছে পিটিআই৮ ঘণ্টা আগেউল্লেখ্য, ইমরান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। এর মধ্যে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযোগও রয়েছে।
গত শুক্রবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরানের মৃত্যু নিয়ে ইন্টারনেটে গুজব ছড়িয়েছে বলে ভারতের কিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে তাঁকে আদিয়ালা কারাগার থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
তবে আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কারাগার থেকে তাঁকে (ইমরান খান) স্থানান্তর–সম্পর্কিত কোনো খবর সত্য নয়। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন।’
কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে বলেছে, ইমরানের স্বাস্থ্য নিয়ে যে অনিশ্চয়তার কথা বলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। তাঁর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে।