সমাজে জ্ঞানচর্চা ও মানুষকে পাঠমুখী করতে পাঠাগারচর্চার ঐতিহ্যের কথা আমাদের কারও অজানা নয়। সময়ের পরিক্রমা, সমাজের নানা পটপরিবর্তন ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে সেই ঐতিহ্য ফিকে হতে শুরু করেছে কয়েক দশক ধরে। এ সময়ের মধ্যে বহু পাঠাগার বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারিভাবে অনেক পাঠাগারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটলেও সেগুলো এখন পাঠকশূন্য। জামালপুরে দুটি পাঠাগারের ক্ষেত্রে এমন দেখা গেছে।
২০১৫ সালে কোটি টাকা খরচ করে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবন নির্মিত হয়। ঝকঝকে টাইলসের মেঝে, নতুন চেয়ার-টেবিল আর তাকে তাকে সাজানো হাজারো বই।সব আয়োজনই প্রস্তুত অথচ দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থাগার দুটির ভেতরে সুনসান নীরবতা। পাঠাগার দুটি এভাবে পাঠকশূন্য থাকা কেবল একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়; বরং আমাদের সামাজিক ও মননশীলতার আকালের এক গভীর ক্ষত।
পাঠক না থাকার কারণ হিসেবে স্থানীয় শিক্ষাবিদ, লেখক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বেশ কিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন। এর প্রথম কারণ নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির বিপ্লব। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, ফেসবুক ও ইউটিউবের সহজলভ্যতা তরুণ প্রজন্মকে গ্রন্থাগারবিমুখ করেছে। তথ্য এখন আঙুলের ডগায়। ফলে পরিশ্রম করে বইয়ের ভাঁজে প্রবেশের আগ্রহ কমেছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আজ আর জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করে না, করে কেবল পরীক্ষায় ভালো করার প্রতিযোগিতায়। শিক্ষার্থীরা এখন কেবল তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত, মননশীলতা অর্জন নয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্থানীয় গ্রন্থাগারগুলোও ক্রমে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
পাঠকখরা কাটানোর জন্য কেবল নতুন ভবন তৈরি করলেই হবে না, প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ। গ্রন্থাগার দুটির সহকারী গ্রন্থাগারিক জনবলসংকটের কথা বলেছেন। অন্যদিকে দেওয়ানগঞ্জের গ্রন্থাগার কলেজ ক্যাম্পাসে হওয়ায় অনেকে এটিকে কলেজের নিজস্ব সম্পত্তি মনে করেন, যা প্রচারণার অভাবের ফল। এ ছাড়া অফিস সময়ের পর গ্রন্থাগার বন্ধ থাকে, ফলে সান্ধ্য অবসরে পাঠক বই পড়ার সুবিধা পান না।
পাঠক আকৃষ্ট করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়। গ্রন্থাগারকেন্দ্র দুটির সঙ্গে একটি করে হলরুম আছে। সেখানে বিভিন্ন দিবস পালন, নানা প্রতিযোগিতা, পুরস্কার ও নিয়মিত বই আলোচনার আয়োজন করতে হবে। সেখানে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার বিভিন্ন সংগঠনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। গ্রন্থাগার দুটির জনবলসংকট দূর করে সান্ধ্যকালীন সেবার ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রন্থাগার দুটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত, সেটি জোরেশোরে প্রচার করতে হবে।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়েও যদি আমরা পাঠক তৈরি করতে না পারি, এটি চরম ব্যর্থতা। পাঠ ও জ্ঞানচর্চা বাড়লে সমাজ আলোকিত হয়। রাষ্ট্র ও দেশ গঠনে মননশীল নাগরিক তৈরি হয়। আমরা আশা করব, জামালপুরের মতো দেশের অন্যান্য জেলায়ও সরকারি পাঠাগারগুলোর কার্যক্রমে গতি আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনোযোগী হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ রন থ গ র দ ট
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুরে সৃজনশীল উদ্যোগ নিন
সমাজে জ্ঞানচর্চা ও মানুষকে পাঠমুখী করতে পাঠাগারচর্চার ঐতিহ্যের কথা আমাদের কারও অজানা নয়। সময়ের পরিক্রমা, সমাজের নানা পটপরিবর্তন ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে সেই ঐতিহ্য ফিকে হতে শুরু করেছে কয়েক দশক ধরে। এ সময়ের মধ্যে বহু পাঠাগার বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারিভাবে অনেক পাঠাগারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটলেও সেগুলো এখন পাঠকশূন্য। জামালপুরে দুটি পাঠাগারের ক্ষেত্রে এমন দেখা গেছে।
২০১৫ সালে কোটি টাকা খরচ করে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবন নির্মিত হয়। ঝকঝকে টাইলসের মেঝে, নতুন চেয়ার-টেবিল আর তাকে তাকে সাজানো হাজারো বই।সব আয়োজনই প্রস্তুত অথচ দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থাগার দুটির ভেতরে সুনসান নীরবতা। পাঠাগার দুটি এভাবে পাঠকশূন্য থাকা কেবল একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়; বরং আমাদের সামাজিক ও মননশীলতার আকালের এক গভীর ক্ষত।
পাঠক না থাকার কারণ হিসেবে স্থানীয় শিক্ষাবিদ, লেখক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বেশ কিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন। এর প্রথম কারণ নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির বিপ্লব। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, ফেসবুক ও ইউটিউবের সহজলভ্যতা তরুণ প্রজন্মকে গ্রন্থাগারবিমুখ করেছে। তথ্য এখন আঙুলের ডগায়। ফলে পরিশ্রম করে বইয়ের ভাঁজে প্রবেশের আগ্রহ কমেছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আজ আর জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করে না, করে কেবল পরীক্ষায় ভালো করার প্রতিযোগিতায়। শিক্ষার্থীরা এখন কেবল তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত, মননশীলতা অর্জন নয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্থানীয় গ্রন্থাগারগুলোও ক্রমে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
পাঠকখরা কাটানোর জন্য কেবল নতুন ভবন তৈরি করলেই হবে না, প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ। গ্রন্থাগার দুটির সহকারী গ্রন্থাগারিক জনবলসংকটের কথা বলেছেন। অন্যদিকে দেওয়ানগঞ্জের গ্রন্থাগার কলেজ ক্যাম্পাসে হওয়ায় অনেকে এটিকে কলেজের নিজস্ব সম্পত্তি মনে করেন, যা প্রচারণার অভাবের ফল। এ ছাড়া অফিস সময়ের পর গ্রন্থাগার বন্ধ থাকে, ফলে সান্ধ্য অবসরে পাঠক বই পড়ার সুবিধা পান না।
পাঠক আকৃষ্ট করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়। গ্রন্থাগারকেন্দ্র দুটির সঙ্গে একটি করে হলরুম আছে। সেখানে বিভিন্ন দিবস পালন, নানা প্রতিযোগিতা, পুরস্কার ও নিয়মিত বই আলোচনার আয়োজন করতে হবে। সেখানে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার বিভিন্ন সংগঠনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। গ্রন্থাগার দুটির জনবলসংকট দূর করে সান্ধ্যকালীন সেবার ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রন্থাগার দুটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত, সেটি জোরেশোরে প্রচার করতে হবে।
আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়েও যদি আমরা পাঠক তৈরি করতে না পারি, এটি চরম ব্যর্থতা। পাঠ ও জ্ঞানচর্চা বাড়লে সমাজ আলোকিত হয়। রাষ্ট্র ও দেশ গঠনে মননশীল নাগরিক তৈরি হয়। আমরা আশা করব, জামালপুরের মতো দেশের অন্যান্য জেলায়ও সরকারি পাঠাগারগুলোর কার্যক্রমে গতি আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনোযোগী হবে।