ছেলেকে একনজর দেখবেন, বাড়ির উঠানে অপেক্ষায় প্রবাসী বাবা
Published: 22nd, October 2025 GMT
আধা পাকা বাড়ির আঙিনায় লোকজনের ভিড়। ভেতর থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। ঘরের এক কোণে বসে আছেন আব্দুল বারেক নামের মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি। গতকাল মঙ্গলবার রাতেই তিনি ওমান থেকে ছুটে এসেছেন গ্রামের বাড়িতে। অপেক্ষায় আছেন মর্গ থেকে ছেলের লাশ আসবে। একনজর দেখবেন ছেলেকে। ব্যাকুল বাবা কিছুক্ষণ পরপর খবরও নিচ্ছিলেন, ছেলে এখন বাড়ি থেকে কত দূর?
সমবয়সী কিশোরদের মারধরে নিহত স্কুলছাত্র তানভীরের বাবা আব্দুল বারেক বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন। মাঝেমধ্যে কান্না থামিয়ে খোঁজ নিচ্ছিলেন ছেলের লাশ পৌঁছাল কি না। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়ার বাড়িতে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। কথা বলার শক্তি ছিল না তাঁর। তবু বহু কষ্টে বললেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খবর পান ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তখনই আরেকজনের সহযোগিতায় বিমানের টিকিট জোগাড় করেন। রাতেই দেশের উদ্দেশে ওঠেন ফ্লাইটে। আজ সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছান তিনি। এরপর বাড়িতে এসে শুনতে পান ছেলের লাশ হাসপাতালের মর্গে। বাড়িতে আনা হয়নি। ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে লাশ আনতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এরপর এশার নামাজের পর তার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
তানভীরের বাবা আব্দুল বারেক বড় ছেলে মুহাম্মদ তানজিবকে নিয়ে ওমানে থাকেন। মেজ ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হবে কখনো ভাবেননি। ছেলেটা বড় আদরের ছিল। সব কথা এখন মনে পড়ছে। তিনি বলেন, তাঁর সাজানো সংসার হঠাৎ এলোমেলো হয়ে গেল।
তানভীরের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৫ অক্টোবর ক্লাসে মারামারি করছিল তানভীরের কয়েকজন সহপাঠী। সেটির ভিডিও ধারণ করছিল কয়েকজন। তানভীর উভয় পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করছিল। এর জের ধরে মঙ্গলবার তানভীরকে টিফিন ছুটির সময় একদল কিশোর পিটিয়ে হত্যা করে।
ঘটনাস্থল থেকে তানভীরের বাড়ির দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। সেখানকার একটি ফার্মেসির মালিক কেশব শীল বলেন, ঘটনার আগে স্কুলের সামনে প্রথমবার কথা–কাটাকাটি ও মারামারি হয় ছেলেদের মধ্য। এরপর হয় রেললাইনের পাশে। শেষে তাঁর দোকানের সামনে ১৫ থেকে ২০ জন কিশোর ছেলে তানভীরকে মারতে থাকে। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে সে।
তানভীরের মা রেহেনা আকতার গতকাল রাত থেকেই সংজ্ঞাহীন। তাঁকে বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যে জ্ঞান ফিরলেও ছেলের শোকে আবার বুক চাপড়াতে চাপড়াতে জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।
জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলছাত্রদের দুই পক্ষের মারামারির ঘটনার জের থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পুলিশ এ ঘটনা তদন্ত করে দেখছে। ঘটনায় জড়িত তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে আজ দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, হাটহাজারীতে হত্যা ও হামলার ঘটনা এটি প্রথম নয়। চলতি মাসেই আরও দুবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ১৪ অক্টোবর উপজেলার চৌধুরীহাটে বাজারে প্রকাশ্যে একদল যুবক ছুরিকাঘাতে ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি অপু দাশ (৩০) ও ছাত্রদলের কর্মী মুহাম্মদ তানিমকে (২৫) হত্যা করেন। এর আগে ৮ অক্টোবর উপজেলার মদুনাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির কাছে রাউজানের আব্দুল হাকিম নামের এক ব্যবসায়ী বিএনপি কর্মীকে প্রকাশ্যে সড়কে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বজনেরা জানান, ওই দুটি হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শান মাসুদের ব্যাটে প্রথম দিন এগিয়ে পাকিস্তান
লাহোর টেস্ট শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডির প্রথম দিনের খেলা দেখে মনে হলো যেন সময় থেমে গেছে সেখানেই। একই রকম চিত্র- ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ নেয় ম্যাচের, স্কোরবোর্ডে জমে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান। টস জিতে ব্যাটিং নেয়া পাকিস্তান আবারও প্রমাণ করল কঠিন পিচে ধৈর্য ধরে খেলাই তাদের মূল শক্তি।
রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে এখনো তেমন স্পিন না ধরলেও বেশ ধীর। মাঝে মাঝে বল নিচু হচ্ছে। পুরনো বলে রিভার্স সুইংও পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের টপ ও মিডল অর্ডার ধীর গতিতে হলেও সামলে নিয়েছে ইনিংস। রানরেট ছিল তিনেরও নিচে। কিন্তু দিনে মাত্র পাঁচ উইকেট হারিয়ে শেষ করায় তারা নিশ্চয়ই খুশি।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের ঘূর্ণিতে দিশেহারা দক্ষিণ আফ্রিকা
চার ফিফটিতে প্রথম দিন পাকিস্তানের
অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা দিনের শেষে আফসোসে পুড়ছে। তারা চারটি সহজ ক্যাচ ফেলেছে- আব্দুল্লাহ শফিকের তিনবার (০, ১৫ ও ৪১ রানে) আর শান মাসুদের একবার (৭১ রানে)। তাছাড়া অন্তত সাতটি বল স্লিপ বা শর্ট লেগে পড়ে গেছে অল্পের জন্য। সেই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে পাকিস্তান হয়তো অনেক কঠিন অবস্থায় পড়ত।
পাকিস্তানের ইনিংসের ভিত গড়ে দ্বিতীয় উইকেটে শফিক ও মাসুদের ১১১ রানের জুটি। শান মাসুদ দলীয় সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেন। আর শফিক করেন ধৈর্যশীল ৫৭। সৌদ শাকিল দিনের শেষে অপরাজিত ৪২ রানে ক্রিজে আছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে কার্যকর ছিলেন কেশব মহারাজ। প্রথম ওভারেই কাগিসো রাবাদার বলে শফিকের ক্যাচ ফেলেন ট্রিস্টান স্টাবস। এরপর রাবাদার বলেও দুবার ইমাম-উল-হক স্লিপের সামনে বল ফেলে দেন। বাঁহাতি মার্কো জানসেনের এক বল শফিকের স্টাম্প ছুঁয়ে গেলেও বেল পড়েনি। নিয়তির মতোই বেঁচে যান ওপেনার। এরপর কেশব মহারাজের হাতে শফিকের একটি রিটার্ন ক্যাচও হাতছাড়া হয়।
অবশেষে সাইমন হার্মার ভাঙলেন সেই জুটি। ইমামকে বোল্ড করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দেন প্রথম উইকেট। তার পরের ওভারেই মাসুদের ক্যাচের অল্প সুযোগও মিস করে প্রোটিয়ারা।
প্রথম ১৬ ওভারে পাকিস্তানের রানরেট ছিল ঘণ্টায় ২.৫ এর মতো। এরপর মাসুদ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠলেন। হার্মারকে টানা দুই ওভারে দুটি ছক্কা হাঁকান। এরপর একই কাজ করেন সেনুরান মুথুসামির বিপক্ষেও।
দুপুরে লাঞ্চে যায় পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে ১ উইকেটে ৯৫ রান রেখে। এরপর ধীরে ধীরে এগোয় ইনিংস। শফিক আবারও একাধিক সুযোগ দেন। কিন্তু ক্যাচ ধরতে না পারায় বেঁচে যান বারবার। অবশেষে ১২০ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে তিনি ৫৭ রান করে আউট হন, হার্মারের বলে উইকেটকিপারের হাতে।
এরপর বাবর আজম নামতেই যেন মাঠে নতুন উদ্দীপনা। কভার ড্রাইভে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন। কিন্তু মাসুদের জীবনদান দক্ষিণ আফ্রিকার হতাশা বাড়ায়। বাবর মহারাজের বলে ক্যাচ দেন মুথুসামির কাছে, কিন্তু সেটিও হাতছাড়া হয়। এরপর মহারাজের এলবিডব্লিউ রিভিউও ব্যর্থ হয়। আল্ট্রা-এজে স্পষ্ট দেখা যায় ব্যাটে লেগেছিল।
অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এল এক ‘ম্যাজিক মুহূর্ত’। বাবর এবার মহারাজের বল রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। বলটা লাফিয়ে উঠে যায় সিলি মিড-অফে। সেখানে টনি ডি জর্জি অবিশ্বাস্য এক ডাইভ দিয়ে মাটি ছুঁয়ে ক্যাচ ধরেন। পাকিস্তান তখন ৩ উইকেটে ১৭৭।
বিকেলে জানসেন পুরনো বলে রিভার্স সুইং কাজে লাগিয়ে বিপদ তৈরি করেন। শান মাসুদ শতকের দিকেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু মহারাজকে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজে জানসেনের হাতে ধরা পড়েন।
শেষ দিকে শাকিল ও সালমান আলী আগা ধীরে ধীরে দলকে স্থিতিশীল করেন। রাবাদা নতুন বল তুলে নিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে এলবিডব্লিউ করে দিনের শেষ উইকেট নেন। ৯১ ওভারের দিন শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ২৫৯।
ঢাকা/আমিনুল