সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ আগামী সোমবার ঘোষণা করা হবে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে এ ঘোষণা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. সাজেদুল করিম।

এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা পৌনে তিনটা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ‘শিক্ষার্থীবৃন্দ, শাবিপ্রবি’-এর ব্যানারে অবস্থান নেন একদল শিক্ষার্থী। এ সময় তাঁরা ‘শাকসু আমার অধিকার, রুখে দেওয়া সাধ্য কার’, ‘শাকসু নিয়ে টালবাহানা, চলবে না, চলবে না’, ‘শাকসু ইন নভেম্বর, রিমেম্বার প্রশাসন’, ‘শাকসুর রোডম্যাপ, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘উই ওয়ান্ট, শাকসু শাকসু’, ‘শাকসু দিলে প্রশাসন, না দিলে প্রহসন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

একপর্যায়ে সেখানে এসে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির বিষয়ে আমরা উপাচার্য স্যারের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। নির্বাচনের রোডম্যাপ ও কমিশন গঠনের বিষয়ে আমরা উনার বক্তব্য জানতে চেয়েছিলাম। উপাচার্য বলেছেন, আগামী সোমবার তিনি ঢাকা থেকে ফিরবেন এবং গঠনতন্ত্র অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।’

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আরও বলেন, ‘উপাচার্য স্যার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় অংশীজনের সঙ্গে যেন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করছি সোমবারে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি শতভাগ পূর্ণ হবে।’

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের এই ঘোষণার পর সোয়া চারটায় কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
পরে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হাসান (শিশির) বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রোডম্যাপ ঘোষণার নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেছে। আগামী সোমবার যদি রোডম্যাপ ও নির্বাচন কমিশন যদি গঠন করা না হয়, তাহলে প্রশাসনিক কার্যক্রম অচল করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবির সাবেক সমন্বয়ক পলাশ বখতিয়ার বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আর কোনো বিলম্ব মেনে নেওয়া হবে না। নির্ধারিত সময়ে রোডম্যাপ ঘোষণা না দিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। নির্বাচন নভেম্বরেই দিতে হবে।

শাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে গত রোববার মানববন্ধন ও গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেন একদল শিক্ষার্থী। সেখান থেকে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর আগে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের আয়োজনের পরিকল্পনার কথা বলছিলেন উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী। তবে গত তিন মাসে শুধু শাকসুর গঠনতন্ত্র পুনঃপ্রণয়ন করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের ঘোষিত সম্ভাব্য সময় কাছাকাছি চলে আসায় নির্বাচন কমিশন ও তফসিল ঘোষণা না হওয়ায় শিক্ষার্থীর আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এই শঙ্কা থেকেই আন্দোলন করছেন একদল শিক্ষার্থী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স মব র

এছাড়াও পড়ুন:

ছেলেকে একনজর দেখবেন, বাড়ির উঠানে অপেক্ষায় প্রবাসী বাবা

আধা পাকা বাড়ির আঙিনায় লোকজনের ভিড়। ভেতর থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। ঘরের এক কোণে বসে আছেন আব্দুল বারেক নামের মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি। গতকাল মঙ্গলবার রাতেই তিনি ওমান থেকে ছুটে এসেছেন গ্রামের বাড়িতে। অপেক্ষায় আছেন মর্গ থেকে ছেলের লাশ আসবে। একনজর দেখবেন ছেলেকে। ব্যাকুল বাবা কিছুক্ষণ পরপর খবরও নিচ্ছিলেন, ছেলে এখন বাড়ি থেকে কত দূর?

সমবয়সী কিশোরদের মারধরে নিহত স্কুলছাত্র তানভীরের বাবা আব্দুল বারেক বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন। মাঝেমধ্যে কান্না থামিয়ে খোঁজ নিচ্ছিলেন ছেলের লাশ পৌঁছাল কি না। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়ার বাড়িতে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। কথা বলার শক্তি ছিল না তাঁর। তবু বহু কষ্টে বললেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খবর পান ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তখনই আরেকজনের সহযোগিতায় বিমানের টিকিট জোগাড় করেন। রাতেই দেশের উদ্দেশে ওঠেন ফ্লাইটে। আজ সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছান তিনি। এরপর বাড়িতে এসে শুনতে পান ছেলের লাশ হাসপাতালের মর্গে। বাড়িতে আনা হয়নি। ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে লাশ আনতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এরপর এশার নামাজের পর তার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।

তানভীরের বাবা আব্দুল বারেক বড় ছেলে মুহাম্মদ তানজিবকে নিয়ে ওমানে থাকেন। মেজ ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হবে কখনো ভাবেননি। ছেলেটা বড় আদরের ছিল। সব কথা এখন মনে পড়ছে। তিনি বলেন, তাঁর সাজানো সংসার হঠাৎ এলোমেলো হয়ে গেল।

তানভীরের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৫ অক্টোবর ক্লাসে মারামারি করছিল তানভীরের কয়েকজন সহপাঠী। সেটির ভিডিও ধারণ করছিল কয়েকজন। তানভীর উভয় পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করছিল। এর জের ধরে মঙ্গলবার তানভীরকে টিফিন ছুটির সময় একদল কিশোর পিটিয়ে হত্যা করে।

ঘটনাস্থল থেকে তানভীরের বাড়ির দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। সেখানকার একটি ফার্মেসির মালিক কেশব শীল বলেন, ঘটনার আগে স্কুলের সামনে প্রথমবার কথা–কাটাকাটি ও মারামারি হয় ছেলেদের মধ্য। এরপর হয় রেললাইনের পাশে। শেষে তাঁর দোকানের সামনে ১৫ থেকে ২০ জন কিশোর ছেলে তানভীরকে মারতে থাকে। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে সে।

তানভীরের মা রেহেনা আকতার গতকাল রাত থেকেই সংজ্ঞাহীন। তাঁকে বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যে জ্ঞান ফিরলেও ছেলের শোকে আবার বুক চাপড়াতে চাপড়াতে জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।

জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলছাত্রদের দুই পক্ষের মারামারির ঘটনার জের থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পুলিশ এ ঘটনা তদন্ত করে দেখছে। ঘটনায় জড়িত তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে আজ দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, হাটহাজারীতে হত্যা ও হামলার ঘটনা এটি প্রথম নয়। চলতি মাসেই আরও দুবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ১৪ অক্টোবর উপজেলার চৌধুরীহাটে বাজারে প্রকাশ্যে একদল যুবক ছুরিকাঘাতে ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি অপু দাশ (৩০) ও ছাত্রদলের কর্মী মুহাম্মদ তানিমকে (২৫) হত্যা করেন। এর আগে ৮ অক্টোবর উপজেলার মদুনাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির কাছে রাউজানের আব্দুল হাকিম নামের এক ব্যবসায়ী বিএনপি কর্মীকে প্রকাশ্যে সড়কে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বজনেরা জানান, ওই দুটি হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছেলেকে একনজর দেখবেন, বাড়ির উঠানে অপেক্ষায় প্রবাসী বাবা
  • শাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে কাল থেকে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা