মিয়ানমারের বহুল সমালোচিত নির্বাচনে বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ শনিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থিত মিয়ানমার দূতাবাসে কিছু ভোটারকে ভোট দিতে সারিতে দাঁড়াতে দেখা গেছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেয়। এরপর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যাতে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী জড়িয়ে পড়ে।

কয়েক বছরের গৃহযুদ্ধে দেশটির সার্বিক পরিস্থিতি শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেয় জান্তা সরকার। চলতি মাসের শেষের দিকে কয়েক ধাপে এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে।

জান্তা সরকারের দাবি, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মিয়ানমার শান্তি এবং গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাবে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, নির্বাচন জান্তা সরকারের ক্ষমতা দৃঢ় করার নতুন কৌশল।

এদিকে নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, ঠিক এমন এক সময়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ গ্রামে ভোট গ্রহণ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যেই প্রবাসীদের জন্য থাইল্যান্ডের পাশাপাশি আরও কিছু দেশ ও অঞ্চলে মিয়ানমারের দূতাবাসে আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এসব দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে হংকং, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও চিয়াং মাই।

গতকাল ভোট গ্রহণ উপলক্ষে ব্যাংকে মিয়ানমার দূতাবাসে পুলিশের কড়াকড়ি চোখে পড়েছে। ভোট শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টায় সেখানে প্রায় ২৫ জন ভোট দিয়েছেন।

অধিকাংশ ভোটার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে ৪২ বছর বয়সী মোয়ে মোয়ে লউইন বার্তা সংস্থা এএফপি বলেন, ‘আমি ভোট দিতে এসেছি কারণ, আমি শান্তি চাই। ভালোবাসা আর সহমর্মিতার মধ্যে বাঁচতে চাই। আমি মিয়ানমারের মানুষের মধ্যে ঐক্য দেখতে চাই। আমার বিশ্বাস, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শান্তি আসবে।’

নির্মাণশ্রমিক ও প্রথমবারের মতো ভোট দিতে আসা খুন কিয়াও সোয়ে বলেন, নির্বাচনের পর শিক্ষা খাত এবং অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন দেখতে চান তিনি।

থাই শ্রম মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ব্যাংককে নিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিকের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। তবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাবমতে, থাইল্যান্ডে বর্তমানে প্রায় ৪১ লাখ মিয়ানমারের নাগরিক বসবাস করেন। তাঁদের অনেকে যুদ্ধের কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এবং বেশির ভাগেরই নথিপত্র নেই।

ব্যাংককে মিয়ানমার দূতাবাসের কর্মকর্তারা এএফপিকে বলেন, কী পরিমাণ মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তা তাঁদের জানা নেই। গত ১৫ অক্টোবর ভোট দেওয়া জন্য নিবন্ধের সময়সীমা শেষ হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ট গ রহণ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে প্রাণঘাতী গোলাগুলি, নিহত ৪

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অন্যতম প্রধান সীমান্ত ক্রসিংয়ে রাতভর গোলাগুলির ঘটনায় চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের এক কর্মকর্তা আজ শনিবার এ তথ্য দিয়েছেন।

গত অক্টোবরে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়েছিল। এবার অস্ত্রবিরতি চলার মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।

আফগানিস্তানের দক্ষিণে স্পিন বোলডাক অঞ্চলের গভর্নর আবদুল করিম জাহাদ এএফপিকে বলেন, সংঘর্ষে আরও চারজন আহত হয়েছেন।

পাকিস্তানের সীমান্ত শহর চামানের স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, হালকা আহত হওয়া তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে চামান ও স্পিন বোলডাক সীমান্তে ‘বিনা উসকানিতে’ হামলার অভিযোগ এনেছে। অথচ অক্টোবরের সংঘর্ষের পর দুই দেশই একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছিল।

গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আজ রাতেই কান্দাহারের স্পিন বোলডাক অঞ্চলে আফগানিস্তানের ওপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। এতে ইসলামিক আমিরাতের (আফগানিস্তান) বাহিনী জবাব দিতে বাধ্য হয়।’

গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আজ রাতেই কান্দাহারের স্পিন বোলডাক অঞ্চলে আফগানিস্তানের ওপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। এতে ইসলামিক আমিরাতের (আফগানিস্তান) বাহিনী জবাব দিতে বাধ্য হয়।’

তবে পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তানই প্রথমে গুলি চালিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মোশাররফ জায়েদি এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘অল্প কিছুক্ষণ আগে আফগান তালেবান প্রশাসন সীমান্তে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে।’

জায়েদির দাবি, তাঁদের বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সমুচিত জবাব দিয়েছে।

সীমান্তের আফগান অংশের বাসিন্দারা এএফপিকে বলেন, রাত প্রায় ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে গোলাগুলি শুরু হয় এবং দুই ঘণ্টার মতো চলতে থাকে।

কান্দাহার প্রদেশের তথ্য বিভাগের প্রধান আলী মোহাম্মদ হাকমল বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালায়। কয়েকটি বেসামরিক বাড়িতে মর্টারের গোলার আঘাত লেগেছে।

২০২১ সালে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমে বাড়ছে।

আরও পড়ুনপাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল গোলাগুলি৫ ঘণ্টা আগে

বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে নিরাপত্তা ইস্যু। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে, বিশেষ করে পাকিস্তান তালেবানকে (টিটিপি) আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছে কাবুল। এ টিটিপি পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ভেতরে হামলা চালিয়ে থাকে।

তালেবান সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে।

গত অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যকার সংঘাতে ৭০ জনের বেশি নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়।

আরও পড়ুননতুন সংঘাতের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় আবারও অচলাবস্থা০৮ নভেম্বর ২০২৫

কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে লড়াই বন্ধ হয়। পরে দোহা ও ইস্তাম্বুলে একাধিক দফায় আলোচনার পরও তারা কোনো স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যকার সীমান্ত এখনো বন্ধ রয়েছে।

গত মাসে কাবুল অভিযোগ করেছিল, সীমান্ত এলাকার ওপর পাকিস্তানের বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনই শিশু। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে প্রাণঘাতী গোলাগুলি, নিহত ৪