মিয়ানমারে চায়ের দোকানে বিমান হামলায় নিহত ১৮
Published: 6th, December 2025 GMT
মিয়ানমারের সায়াগিং অঞ্চলে একটি চায়ের দোকানে সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তাবায়িন শহরে এ হামলা চালানো হয়। জনাকীর্ণ ওই দোকানে তখন লোকজন টেলিভিশনে বক্সিং ম্যাচ দেখছিলেন।
২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এর পর থেকে গৃহযুদ্ধে টালমাটাল দেশটি। মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধাদের ওপর প্রায়ই বিমান হামলা চালায় সেনাবাহিনী। এসব হামলায় অনেক সময় বেসামরিক নাগরিকেরাও নিহত হন।
স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, চায়ের দোকানটিতে দুটি বোমা ফেলা হয়। এ ঘটনায় ১৮ জন নিহত হন ও ২০ জন আহত হয়েছেন।
নিরাপত্তার খাতিরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, চায়ের দোকানে অনেক ভিড় ছিল। এ কারণে নিহতের সংখ্যাও বেশি।
ঘটনাস্থলে হামলার ১৫ মিনিট পরে পৌঁছানো এক উদ্ধারকর্মী জানিয়েছেন, ৭ জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান, বাকি ১১ জন পরে হাসপাতালে মারা যান।
চায়ের দোকানগুলো মিয়ানমারে সামাজিক আড্ডার জায়গা। ওই উদ্ধারকর্মী জানান, আশপাশের অন্তত কয়েক ডজন বাড়িও পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
হামলায় বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি জানান, চায়ের দোকানটিতে বোমা পড়ার সময় তিনি টেলিভিশনে বক্সিং ম্যাচ দেখছিলেন।
বোমা পড়ার শব্দে বধির হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়েছিল উল্লেখ করে এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি যুদ্ধবিমান ওড়ার শব্দ শোনামাত্র মাটিতে শুয়ে পড়ি। দেখলাম, আমার মাথার ওপরে বড় আগুনের কুণ্ডলী। ভাগ্যবান হওয়ায় এ ঘটনার পরেও আমি বাড়ি ফিরতে পেরেছি।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য এএফপি জান্তার মুখপাত্রকে ফোন দিলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আজ শনিবার নিহত ব্যক্তিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। হামলায় বিকৃত হয়ে যাওয়ায় নিহত কয়েকজনের মুখ তোয়ালে দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই কষ্ট পাচ্ছি, কারণ তাঁদের কয়েকজন আমার খুব পরিচিত ছিলেন।’
মিয়ানমারে গত মে মাসে জান্তার বিমান হামলায় ২২ জন প্রাণ হারান, যাদের ২০ জনই ছিল শিশু। দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ঘোষিত কথিত যুদ্ধবিরতির মধ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে প্রাণঘাতী গোলাগুলি, নিহত ৪
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অন্যতম প্রধান সীমান্ত ক্রসিংয়ে রাতভর গোলাগুলির ঘটনায় চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের এক কর্মকর্তা আজ শনিবার এ তথ্য দিয়েছেন।
গত অক্টোবরে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়েছিল। এবার অস্ত্রবিরতি চলার মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।
আফগানিস্তানের দক্ষিণে স্পিন বোলডাক অঞ্চলের গভর্নর আবদুল করিম জাহাদ এএফপিকে বলেন, সংঘর্ষে আরও চারজন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের সীমান্ত শহর চামানের স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, হালকা আহত হওয়া তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে চামান ও স্পিন বোলডাক সীমান্তে ‘বিনা উসকানিতে’ হামলার অভিযোগ এনেছে। অথচ অক্টোবরের সংঘর্ষের পর দুই দেশই একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছিল।
গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আজ রাতেই কান্দাহারের স্পিন বোলডাক অঞ্চলে আফগানিস্তানের ওপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। এতে ইসলামিক আমিরাতের (আফগানিস্তান) বাহিনী জবাব দিতে বাধ্য হয়।’
গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে আজ রাতেই কান্দাহারের স্পিন বোলডাক অঞ্চলে আফগানিস্তানের ওপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। এতে ইসলামিক আমিরাতের (আফগানিস্তান) বাহিনী জবাব দিতে বাধ্য হয়।’তবে পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তানই প্রথমে গুলি চালিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মোশাররফ জায়েদি এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘অল্প কিছুক্ষণ আগে আফগান তালেবান প্রশাসন সীমান্তে বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে।’
জায়েদির দাবি, তাঁদের বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সমুচিত জবাব দিয়েছে।
সীমান্তের আফগান অংশের বাসিন্দারা এএফপিকে বলেন, রাত প্রায় ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে গোলাগুলি শুরু হয় এবং দুই ঘণ্টার মতো চলতে থাকে।
কান্দাহার প্রদেশের তথ্য বিভাগের প্রধান আলী মোহাম্মদ হাকমল বলেন, পাকিস্তানি বাহিনী হালকা ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালায়। কয়েকটি বেসামরিক বাড়িতে মর্টারের গোলার আঘাত লেগেছে।
২০২১ সালে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমে বাড়ছে।
আরও পড়ুনপাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল গোলাগুলি৫ ঘণ্টা আগেবিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে নিরাপত্তা ইস্যু। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে, বিশেষ করে পাকিস্তান তালেবানকে (টিটিপি) আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছে কাবুল। এ টিটিপি পাকিস্তানের ভূখণ্ডের ভেতরে হামলা চালিয়ে থাকে।
তালেবান সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে।
গত অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যকার সংঘাতে ৭০ জনের বেশি নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়।
আরও পড়ুননতুন সংঘাতের পর পাকিস্তান–আফগানিস্তানের মধ্যে আলোচনায় আবারও অচলাবস্থা০৮ নভেম্বর ২০২৫কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে লড়াই বন্ধ হয়। পরে দোহা ও ইস্তাম্বুলে একাধিক দফায় আলোচনার পরও তারা কোনো স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যকার সীমান্ত এখনো বন্ধ রয়েছে।
গত মাসে কাবুল অভিযোগ করেছিল, সীমান্ত এলাকার ওপর পাকিস্তানের বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনই শিশু। পাকিস্তান অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।