সামনের নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় টেস্ট: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 6th, December 2025 GMT
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি বড় পরীক্ষা বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। শনিবার সকালে রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশের সবকিছুর ভিত্তি আইনশৃঙ্খলা। শুরুতে সমস্যা থাকলেও এখন ভালো অবস্থা। পুলিশ গুছিয়ে উঠে নিজেরা সংহত হতে পেরেছে। সামনের নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় টেস্ট। কেননা প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, “সামনের নির্বাচন একটি আদর্শ নির্বাচন হবে।” সেই নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।’
নির্বাচনে পরাজিত ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, ভালো একটা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব দিয়ে চলে যেতে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় জেলার কর্মকর্তারা রংপুরের সমস্যা ও সম্ভাবনা পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন।
সভায় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো.
রংপুরের সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা আট উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে থেকে পাঠানো রোগীদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন। তিনি রংপুরে ২৫০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল থাকলেও প্রয়োজনীয় লোকবল ও যন্ত্রপাতি নেই বলেও উল্লেখ করেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাঈদ বলেন, রংপুর বিভাগে চারটা কোম্পানির ৮১টি দুধ বিক্রয়কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে রংপুরেই ৪৬টি। প্রতিদিন ১৯ হাজার টন দুধ উৎপাদন হয়, কোম্পানিগুলো নেয় সাড়ে তিন হাজার টন। বাকি দুধের জন্য রংপুরে দুটি ‘ডেইরি হাব’ স্থাপন করলে খামারিরা দুধের ন্যায্যমূল্য পেতেন জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, রংপুরে ২ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ হয়। সারা দেশে মোট আলু উৎপাদনের ২৫ শতাংশ ও ভুট্টা উৎপাদনের ২৩ শতাংশ রংপুরে চাষ হয়। এ ছাড়া ২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। কিন্তু সংরক্ষণাগারের অভাবে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সবজি নষ্ট হয়। তিনি সবজি ও ফল সংরক্ষণে পণ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবি করেন। তিস্তা অঞ্চলের সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যা সমাধান ও সুফল পাব।’
এসব সমস্যার সমাধানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশে দুটো খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার—একটা শিক্ষা ও অন্যটা স্বাস্থ্য। বাইরের দেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা পারছি না, তবে চেষ্টা করছি। চিকিৎসক, নার্সের সমস্যা নিরসনের অংশ হিসেবে স্বল্প সময়ে সাড়ে তিন হাজার নার্স ও তিন হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই খাতে বাজেট বাড়ানো হয়েছে। আগামী বছর তা দেখা যাবে। আমরা কিছু প্রকল্প শুরু করেছি। আশা করছি, পরের সরকার তা ধরে রাখবে।’
প্রবাসে দক্ষ মানবসম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ দক্ষ হয়ে বিদেশে যায় না। যার কারণে কম বেতন পায়। বিদেশে অসংখ্য নার্সের পদ খালি।’ এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন।
মতবিনিময় সভার শুরুতে ‘উত্তরাঞ্চলের অগ্রযাত্রার কেন্দ্রবিন্দু রংপুর’ শিরোনামে প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। চার দিনের সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রংপুরে এসে শুক্রবার রংপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা পরিদর্শন করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
মো. তৌহিদ হোসেন আজ বিকেলে রংপুর ক্যাডেট কলেজ পরিদর্শন করবেন। আগামীকাল রোববার দুপুরে তিনি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ওই দিন বিকেলে তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট র জন য সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে ইউএনও ও ওসির বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে রদবদল শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মোস্তাফিজুর রহমান ও বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ মো.লিয়াকত আলীকে বদলী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বন্দর উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের আয়োজনে উপজেলা অডিটোরিয়ামে উল্লেখিত দুই কর্মকর্তার বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার(ভুমি) রহিমা আক্তার ইতি, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.সরকার আশ্রাফুল ইসলাম, নৌ পুলিশের পরিদর্শক সালেহ আহমেদ,নির্বাচন অফিসার শেখ ফরিদ,প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল আলম জাহিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন সিদ্দিকী, প্রকৌশলী সামিন ইশরাক,মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাইয়ুম খান, সমাজসেবা কর্মকর্তা ফয়সাল কবির, যুব উন্নয়ন অফিসার মো.শাহেন শাহ, খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুশফিকুর রহমান সহ অন্যান্য কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার প্রতিনিধিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে বিদায়ী দুই অফিসারের কার্যকালে জনস্বার্থে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের স্মৃতিচারন করে বক্তারা বলেন,চরম টালমাটাল অবস্থায় ইউএনও মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং ওসি লিয়াকত আলী কর্মস্থলে যোগদান করেন।দু’জনেই স্ব-স্ব দায়িত্ব গ্রহণের পরপর গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে নিরলস কাজ করেছেন।অনেকাংশেই তারা সফলভাবে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বন্দরের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছেন।