শীতের সকালে মোটরসাইকেলে করে খেজুরের রস খেতে যাচ্ছিলেন তিন বন্ধু। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই গাড়িচাপায় প্রাণ হারান তারা। গতকাল শুক্রবার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হিরণ্যকান্দি এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন উপজেলার পোনা গ্রামের বিষ্ণু দাসের ছেলে দীপক দাস দিপু (১৮), বাবুল নাগের ছেলে বিশাল নাগ (১৯) ও মনির মৃধার ছেলে হৃদয় মৃধা (১৮)। দীপু দাস নবম শ্রেণি ও বিশাল নাগ অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিলেন হৃদয়।

ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ওসি মাকসুদুর রহমান মুরাদ জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পোনা গ্রাম থেকে রস খাওয়ার উদ্দেশ্যে ১২ তরুণ তিনটি মোটরসাইকেলে বের হন। পার্শ্ববর্তী জেলা ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কালিনগরে এলাকায় যাচ্ছিলেন তারা। দীপক, বিশাল ও হৃদয় এক মোটরসাইকেলে ছিলেন। ৬টার দিকে মহাসড়কের হিরণ্যকান্দির চায়না প্রকল্পের সামনে খুলনাগামী একটি বাস সামনে থেকে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দীপক ও বিশাল মারা যান। হৃদয়কে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও ১২ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির ধাক্কায় এক মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে মহাসড়কের সুফিয়া রোড এলাকার ইউটার্ন মুখে চট্টগ্রামগামী লেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের দমদমা বড়ুয়াপাড়ার নিপু বড়ুয়া, ছনি বড়ুয়া ও রুবেল বড়ুয়া। 

জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার এসআই বোরহান উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন তিনজন। পথে একটি গাড়ি তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়।

পিরোজপুরে রাজিব পরিবহনের বাসচাপায় নিহত হয়েছেন রিয়াদ কাজী ও শাহীন মাঝি নামে দুই পথচারী। রিয়াদের বাড়ি সদর উপজেলার শংকরপাশা গ্রামে এবং শাহীনের বাড়ি ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট গ্রামে। তারা সম্পর্কে শালা-দুলাভাই। বৃহস্পতিবার রাতে শংকরপাশা ইউনিয়নের মোল্লাবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কিশোরসহ দু’জন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন কাপড় ব্যবসায়ী আদম আলী (৫৫) ও পোশাকশ্রমিক সিয়াম (১৫)। বৃহস্পতিবার রাতে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে যান ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মুক্তা রামপুর এলাকার আদম আলী। সেখানে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকের পরামর্শে তারা আরেকটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন ভাতিজা নবী হোসেন ও জামাতা সাখাওয়াত হোসেন। রাত ৩টার দিকে আসাদগেট এলাকায় তাদের বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয় একটি গাড়ি। 

বৃহস্পতিবার রাতে পল্লবীর কালশী এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয় কিশোর সিয়াম। তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রূপনগর এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত সিয়াম।
গতকাল সন্ধ্যায় হাতিরঝিল এলাকার মহানগর সেতুর ওপর মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আফজাল হোসেন নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক তরুণ নিহত হয়েছেন। তিনি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার উতরাইল গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে। 

কক্সবাজারে চকরিয়া উপজেলায় বিয়ের তিন দিন আগে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন নোমান নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ডুলাহাজারা ডুমখালী রাস্তার মাথায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নোমান ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বালুরচর এলাকার বশির আহমদের ছেলে। ২০ জানুয়ারি তাঁর বিয়ের দিন ছিল বলে জানা গেছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে আব্দুল করিম নামে এক ইমাম নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে হুনাখালী নামক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আব্দুল করিম  টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার বহুরা গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে। 
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ট্রাকের ধাক্কায় সোহান রহমান নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কের বাগোয়ান কলেজ মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সোহান ভেড়ামারা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক চালক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বাসের ১০ যাত্রী। গতকাল ভোরে উপজেলার ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মাহবুব মোড়ল। তিনি দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকের চালক ছিলেন। তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়। 
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা আঞ্চলিক সড়কে দুই ট্রাক ও বাসের ত্রিমুখী সংঘর্ষে আটজন আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে ওই সড়কের ভাগদী কদমতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন ট্রাকচালক সালাউদ্দিন, বাসচালক আশরাফুল ইসলাম, বাসের যাত্রী জজ মিয়া, রনি, রফিক, সেলিম মিয়া, সুমন ইসলাম ও সুকুমার। 
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র উপজ ল উপজ ল য় উপজ ল র এল ক র সড়ক র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ