প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর জানাযায় মতি, কান্নাজড়িত কণ্ঠে চাইলেন ক্ষমা
Published: 1st, November 2025 GMT
কারাগারে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি ৩ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তার সহধর্মিণী রোকেয়া রহমানের জানাজায় অংশ নিয়েছেন।
শনিবার (১ নভেম্বর) বেলা সোয়া ২টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়া এলাকার বালুর মাঠে জানায়া অনুষ্ঠিত হয়। কড়া পুলিশি পাহারায় মতিউর রহমান মতি জানাযার মাঠে উপস্থিত হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
স্ত্রী হারানো মতিকে দেখে তার আত্মীয়-স্বজনসহ উপস্থিত শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। অঝোরে কাঁদতে থাকা মতিউর রহমান মতিও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানাজায় উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, আমি দীর্ঘ ১০ মাস যাবত কারাগারে। আমার স্ত্রীর মৃত্যুর সময় আমি তার পাশে থাকতে পারিনি।
আমার দুর্ভাগ্য যে, এর আগে আমার বড় ভাই যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখনও আমি কারাগারে ছিলাম। আজকেও আমার অনুপস্থিতিতে আপনারা আমার ভাইয়ের মতো সবাই আমার স্ত্রীর জানাযার জন্য সকল কিছু করেছেন।
তিনি আরও বলেন, তার সঙ্গে আমি ৩২ বছরের সংসার জীবন কাটিয়েছি। সে সবসময় আমাকে আগলে রেখেছেন। আমার স্ত্রী যদি চলার পথে আপনাদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ কিংবা ভুল করে থাকে, আমি তার হয়ে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই।
আপনারা সবাই তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তার জন্য দোয়া করবেন। আমি তার জানাজায় অংশ নিতে পেরেছি, এটাই আমার জন্য অনেক।
পারিবারিক সূত্র জানায়, মতির সহধর্মিণী রোকেয়া রহমান দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোকেয়া রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বিকালে হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ এলাকায় নিয়ে আসা হলে শত শত নারী-পুরুষ বাড়িতে ছুটে আসে এক নজর তার মরদেহ এলাকার জন্য।
রোকেয়া রহমান এলাকারবাসীর কাছে সামাজিক ও মানবিক মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এলাকার অসহায় ও গরীব মানুষ বিয়ে, চিকিৎসা সহ কোনো সাহায্যের জন্য তার কাছে গিয়ে খালি হাতে ফেরেনি। তার মধ্যে কোন অহংকার ছিল না।
সাধারণভাবে সবার সাথে মিশতেন। জানাযার জন্য তার মরদেহ বাড়ি থেকে বের করার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শত শত নারী। অনেকে লাশবাহী গাড়ির পিছনে পিছনে ছুটে আসেন। এসময় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
এদিকে একাধিক মামলার আসামি হিসেবে মতিউর রহমান মতি কারাগারে থাকায়, স্ত্রীর জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে উকিলের মাধ্যমে আবেদন করা হয়। সকালে কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে ৩ ঘন্টার জন্য প্যারোলে মুক্তির কাগজ পত্র পৌছালে দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, মতিউর রহমান মতিকে কারা কর্তৃপক্ষ দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মোট ৩ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দিয়েছেন। জানাজা ও দাফন কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে তাকে নিরাপত্তায় আনা হয় এবং সময় শেষে তাকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ য বল গ য বল গ ন র য়ণগঞ জ র জন য প এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে উৎসবমুখর পরিবেশে নবীন বরণ
বর্ণাঢ্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকেই কলেজ প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে নবীন শিক্ষার্থীদের আগমন আর উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে। আনন্দ, উচ্ছ্বাস,ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে দিনব্যাপী এই আয়োজনে নবাগত শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয়।
কলেজ প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল বর্ণিল সাজসজ্জা। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে একাডেমিক ভবন সব জায়গায় করা হয়েছে রঙিন সাজসজ্জা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই পার করেছে এক আনন্দমুখর সময়।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে নবীন শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এসময় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও গীতা পাঠ করা হয়।
আলোচনা পর্বের বক্তব্যে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “শিক্ষাজীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো আজ। নিয়মিত অধ্যয়ন, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলির সমন্বয়ে তোমরাই আগামী দিনের আলোকবর্তিকা।
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ শুধু শিক্ষার নয়, শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক। নবীনদের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই ঐতিহ্য আরও সমৃদ্ধ হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন শুধু ভালো ফলই না করে, বরং সৎ, ন্যায়ের পক্ষে ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুগ্ধতা ছড়ায় শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় নাচ, গান, আবৃত্তি, রম্য বিতর্ক ও ফ্যাশন শো যা অনুষ্ঠানকে আরও প্রানবন্ত করে তোলে। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী অদ্রি আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় কবিতা ‘বোঝাপড়া’।
একাদশ শ্রেণির ঊর্মি ও মাহী পরিবেশন করে দ্বৈত নৃত্য, যা উপস্থিত দর্শকদের করতালিতে মুখরিত করে তোলে সমগ্র অনুষ্ঠানস্থল।
ডিবেটিং ক্লাবের সদস্যরা পরিবেশন করেন রম্য বিতর্ক “আমার দেশে আমিই সেরা” যেখানে রসিকতা ও বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপে হাস্যরসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ঊর্মি ও তিশার দ্বৈত নৃত্য অনুষ্ঠানে বিশেষ নজর কাড়ে।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ফ্যাশন শো। এ বছরের থিম ছিল— “সমাজে প্রান্তিক বা সুবিধাবঞ্চিত নারীদের অবস্থান”। শিক্ষার্থীরা পোশাক ও উপস্থাপনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন সমাজের প্রান্তিক নারীদের সংগ্রাম, আত্মমর্যাদা ও জীবনের বাস্তব চিত্র।
পোশাকের নকশা, রঙ ও ভাবনায় ফুটে ওঠে নারীর শক্তি, সাহস ও সমতার বার্তা। দর্শক ও অতিথিরা প্রশংসা করেন শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও সচেতন চিন্তাধারা।
নবীন শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। একাদশ শ্রেণির নবীন শিক্ষার্থী সায়মা ইসলাম মালিহা বলেন, “আজকের দিনটি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন। কলেজের পরিবেশ, শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং সিনিয়রদের ভালোবাসা আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। মনে হচ্ছে আমি সত্যিই নতুন জীবনের এক সুন্দর অধ্যায়ে প্রবেশ করেছি।”
আরেক নবীন শিক্ষার্থী তাবাসসুম তিথি বলেন, “আজ আমাদের কলেজে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়া হলো। নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং এত সুন্দর আয়োজনের অংশ হতে পারা সত্যিই আনন্দের।”
পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কলেজের সাংস্কৃতিক দলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করে বিএনসিসি ও গার্ল গাইডের সদস্যরা।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবেরা তাহমিনা, অতিথি হিসেবে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফজলুল হক রুমন রেজা, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিন, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. সেলিনা আক্তার, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফুর রহমানসহ মহিলা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।