ঘটনা মুর্শিদাবাদের, অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বলে প্রচার
Published: 1st, November 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি সবুজ বিস্তৃত চাষের জমির দুপাশে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে অগণিত সাউন্ড বক্স এবং মাইক। উভয় পাশ থেকেই মাত্রাতিরিক্ত আওয়াজে সেই বক্সে গান বাজানো হচ্ছে।
‘খবর+’ নামে ফেসবুক পেজের আপলোড করা ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলাকাবাসীর দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সাউন্ড স্পিকার ভাড়া করে গান শোনাচ্ছে।’
একই ভিডিও newsbangladesh.
এখানে, এখানে
Gen Z Club নামে অপর এক ফেসবুক পেজেও একই ভিডিও ‘এলাকাবাসীর দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সাউন্ড স্পিকার ভাড়া করে গান শোনাচ্ছে’ এই শিরোনামে আপলোড করা হয়েছে।
এখানে
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনার খোরাক হয়েছে।
Chittagong Insiders News তাদের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি আপলোড করে লিখেছে, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলাকাবাসীর দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সাউন্ড স্পিকার ভাড়া করে গান শোনাচ্ছে। অবশেষে টেঁটাযুদ্ধ বাদ দিয়ে সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে লড়াই করছে, এটাই সান্ত্বনা।’
এখানে
তবে প্রথম আলোর ফ্যাক্ট চেকে দেখা যাচ্ছে, ভাইরাল ভিডিওটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নয়। এটি বাংলাদেশেরই নয়। বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার গোবিন্দপুর এলাকার ঘটনা এটি।
প্রথমে দাবি করা ভিডিওটি ইনভিডে নিয়ে কি–ফ্রেমে ভাগ করে গুগল লেন্সে সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও Robiul Funny নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায়।
সেই ভিডিওটি এ বছরের ১৭ জানুয়ারি আপলোড হয়েছিল। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘মুর্শিদাবাদ VS নদীয়া open a competition’। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো কথাই নেই।
বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য একই চ্যানেলেই আপলোড হওয়া অন্য কয়েকটি ইউটিউবে শর্ট আমাদের পাওয়া যায়, যেখানে একই ধরনের সাউন্ড বক্স ব্যবহার করে অন্য বেশ কয়েকটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে।
তেমনই একটি ভিডিওতে একটি সাউন্ড বক্সের গায়ে ‘সুপার সাউন্ড’ লেখাটি দেখা যায়। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর এবং ঠিকানা ‘নাটনা, পূর্ব পাড়া, নদীয়া’ লেখা রয়েছে। এই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘পিকনিক 2025 সাল’।
‘সুপার সাউন্ড’–এর বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখা যায় যে গুগল ম্যাপে নদীয়ার করিমপুরে নাটনার অন্তর্গত পূর্ব পাড়া এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থান।
ঘটনাটি সার্চ করতে গিয়ে একই সঙ্গে ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট মেলে, যা শাহিন শেখ নামের এক যুবক ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর তুলেছিলেন। সেই পোস্টে সুপার সাউন্ডের স্পিকারের একাধিক ছবিতে ওই একই ফোন নম্বর দেখা যাচ্ছিল, পাশাপাশি পোস্টের ক্যাপশনেও ওই একই নম্বর দেওয়া ছিল যোগাযোগের জন্য।
এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে কোনোভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে এর কোনো সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে মুর্শিদাবাদের গোবিন্দপুরের পিকনিকের ভিডিওটিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বলে ছড়ানো হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় র ফ সব ক প জ র ক য পশন র স উন ড
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫