গণভোটের সময় নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত যখন পরস্পরবিরোধী অবস্থানে, তখন তাদের সমঝোতার খবর শুনতে পাওয়ার কথা বললেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘বিএনপি নোট অব ডিসেন্টের জায়গা থেকে সরে আসবে, আর জামায়াত হয়তো নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি থেকে সরে আসবে। এ ধরনের একটি ইনার টেবিলে বোঝাপড়ার খবর আমরা শুনতে পাচ্ছি।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডে বিএমএ ভবনে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরে এখনো রাজি না হওয়া দল এনসিপির নেতা নাসীরুদ্দীন।

গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দেওয়ার পর থেকে গণভোটের সময় নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয়। আজও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দল দুটির নেতারা পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন।

তার মধ্যেই ন্যাশনাল ওলামা অ্যালায়েন্স নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে তরুণ আলেমদের ভাবনা’ শিরোনামে বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে গিয়ে বিএনপি–জামায়াত ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের’ খবর পাওয়ার কথা শোনালেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, এখন বড় দুটি দলের মধ্যে জুলাই সনদ একটা ভোটের জন্য দর-কষাকষির সনদ হয়ে গেছে। এনসিপি অবস্থান নিয়েছে, ভোটের দর-কষাকষিতে জুলাই সনদকে রাখবে না। কারণ, তাহলে এই সনদ বাস্তবায়ন হবে না।

নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘বিএনপি থেকে একটি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, গণভোটের জন্য নাকি অনেক টাকা খরচ হবে! এই গণ-অভ্যুত্থানের পরে বিএনপির একটা গডফাদার, একটা আসনের একটা লোক যে চাঁদাবাজি করেছে, ওই টাকা দিয়েই তো গণভোট আয়োজন করা যায় বাংলাদেশে।’

সারোয়ার তুষার বলেন, ‘বিএনপি একবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কার্ড খেলতেছে, আরেকবার ধর্মের কার্ড খেলতেছে। বিএনপি বলছে, জুলাই সনদে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসকে নাকি বাতিল করা হচ্ছে! এটা একদম মিথ্যা কথা।’

জুলাই সনদের গণভোটে ‘না’-এর পক্ষে প্রচারে বিএনপির সমর্থকেরা জড়িত বলে দাবি করেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, বিএনপির ৩৫ শতাংশ না ভোটের পরও বাংলাদেশের বাকি ৬৫ শতাংশ মানুষ বিপুল ভোটে গণভোটকে হ্যাঁ ভোটে পরিণত করবে। তখন বিএনপি নিজেকে আয়নায় মুখ দেখাবে কীভাবে?’

‘সনদে অধ্যাপক ইউনূসকে স্বাক্ষর করতে হবে’

রাষ্ট্রপতি মো.

সাহাবুদ্দিন স্বাক্ষর করলে জুলাই সনদ কলঙ্কিত হবে মন্তব্য করে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সনদে স্বাক্ষর করতে হবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে। কিন্তু যদি এর পরিবর্তে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে স্বাক্ষর করানোর চিন্তা করা হয়, তাহলে এটা বাংলাদেশকে একটা বড় ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে। এই স্বাক্ষর মেনে নেওয়া হবে না। স্বাক্ষর করার পর রাষ্ট্রপতির বঙ্গভবনে থাকা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আপনি যদি আদেশটা জারি করতে পারেন, তাহলে আপনার আইডেনটিটি (পরিচয়) খুঁজে পাওয়া যাবে, আপনি জনগণের সরকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।’

সারোয়ার তুষার বলেন, ‘জুলাই সনদের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের চূড়ান্ত কবর রচনা করতে হবে। কারণ, বাংলাদেশে যদি একটা সুসংহত সাংবিধানিক ব্যবস্থা থাকে, এটাকে সবচেয়ে ভয় পায় ভারত। এখানে একটা দুর্বল সাংবিধানিক ব্যবস্থা এবং অনির্বাচিত সরকার থাকলে তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাবে ভারত—এটাই হচ্ছে ডিজাইন (নকশা)।’

ন্যাশনাল ওলামা অ্যালায়েন্সের এই বৈঠকই ছিল প্রথম কোনো কর্মসূচি। এই সংগঠন এনসিপির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে অনেকে ধারণা করেন। তবে বৈঠকে এনসিপি নেতাদের পাশাপাশি ওলামা অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলেন, তাঁদের সঙ্গে কোনো দলের সরাসরি সম্পর্ক নেই। অবশ্য গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফ উদ্দীন মাহাদী।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ, আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম আবরার, তরুণ আলেম প্রজন্মের পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি মাওলানা মাবরুরুল হক, সাধারণ আলেম সমাজের আহ্বায়ক মাওলানা রিদওয়ান হাসান, তরুণ আলেম মাওলানা ইফতেখার জামিল, মাওলানা সালাহউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মাওলানা সানাউল্লাহ খান, বৈষম্যবিরোধী কওমি ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মাকসুদুর রহমান, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেল সম্পাদক জাওয়াদ আহমেদ বৈঠকে অংশ নেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন স র দ দ ন প টওয় র জ ল ই সনদ গণভ ট র এনস প র ণ আল ম র একট ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ